bnp_jot

জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়ার সফর

নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নামছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে দেশের ৮টি বিভাগ ও বৃহত্তর জেলাগুলোতে সফর করবেন তিনি। একই সাথে আসন্ন রংপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।

গত রাতে গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

রাত ৯টায় শুরু হওয়া এ বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন ও রংপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।

খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আবদুল হালিম, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনডিপি) খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গাণি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ ও ডেমোক্র্যাটিক লীগের (ডিএল) সাইফুদ্দিন মনি উপস্থিত ছিলেন। জোটের শরিক লেবার পার্টিকে সংগঠনটির বিভক্তির কারণে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে লেবার পার্টির একাংশের নেতৃবৃন্দকে বৈঠকের সময়ে গুলশান কার্যালয়ের বাইরে দেখা গেছে।

বৈঠক শেষে জোটের এক শীর্ষ নেতা নয়া দিগন্তকে বলেন, জোট প্রধান বেগম খালেদা জিয়া আগামী জানুয়ারি থেকে সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে বের হবেন। এ সফরে প্রতিটি সমাবেশ ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে হবে।

ওই নেতা বলেন, নির্বাচকালীন সরকার অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে তারা নির্বাচনে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জানা গেছে, বৈঠকে জোটের বন্ধন অটুট রাখার ওপরে গুরুত্বারোপ করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, আগামী দিনে জোট ভাঙতে অনেক তৎপরতা চালানো হতে পারে, এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

আসন্ন রংপুর সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট অংশ নেবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া আগামী মাসে ঢাকায় আইনজীবীদের একটি সমাবেশ হবে বলে জোট নেতাদের জানান খালেদা জিয়া।

আদালতে যা বললেন খালেদা জিয়া : অসমাপ্ত জবানবন্দীর পঞ্চম পর্ব

আজ বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থপিত বিশেষ আদালতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া অসমাপ্ত জবানবন্দীর পঞ্চম পর্বের পূর্ণ বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো :

“মাননীয় আদালত,
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে জননন্দিত রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান তাঁর বিভিন্ন অবদান ও ভূমিকার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রসংশিত ছিলেন। বিশেষ করে মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। আমি এ মামলার বিবরণ থেকে জেনেছি এবং কুয়েত দূতাবাসের চিঠিতে জানানো হয়েছে যে, জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের জন্য তারা অনুদান দিয়েছিল। এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন এবং তিনিই সবকিছু জানতেন। এ মামলার বিবরণ থেকে আমি আরো জেনেছি যে, কুয়েতের দেয়া অনুদানের অর্থ দুইভাগ করে দুটি ট্রাস্টকে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে আইনের কোনো লংঘন হয়নি এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার কিংবা অন্য কারো কোনোভাবে লাভবান হবার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ট্রাস্ট দুটির কোনোটিতেই আমি কোনো পদে কখনো ছিলাম না এবং এখনো নেই। অনুদানের অর্থ আনা বা বিতরণের সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। বাগেরহাটে অনুদানের টাকায় ট্রাস্টের মাধ্যমে স্থাপিত এতিমখানা সুন্দর ও সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে এবং সেই ট্রাস্ট সম্পর্কে কোনো অভিযোগও নেই।

মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে আমি আরো জানতে পেরেছি যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টটি বগুড়ায় এতিমখানা স্থাপনের লক্ষ্যে সেখানে জমি ক্রয় করে। এই জমি কেনা সম্পর্কেও কোনো রকম অনিয়মের অভিযোগ নেই। এই ট্রাস্টের বাকি টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে এবং তা সুদাসলে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি বেসরকারি ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টটি আইন সম্মতভাবে নিবন্ধিত এবং ট্রাস্টের ডিড অনুযায়ী দেশের ট্রাস্ট আইনে পরিচালিত। ট্রাস্টের কেউ সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নন।

ট্রাস্টের কেউ কোনো অনিয়ম বা আইনের লংঘন করলে সে ব্যাপারে ট্রাস্ট আইনে অভিযোগ বা মামলা হতে পারে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন কিভাবে ট্রাস্টের কথিত অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে মামলা রুজু করে? এটা কি তাদের আওতা ও এখতিয়ারের ভেতরে পড়ে? তাছাড়া এখানে কোন রকম দুর্নীতিও হয়নি। এই মামলায় আমাকে কেন অভিযুক্ত করা হয়েছে তাও আমার বোধগম্য নয়।

মাননীয় আদালত,
আমার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার যে, এর প্রতিটি মামলাই আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে। সবগুলো মামলাই করা হয়েছে অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে।

আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো মামলারই কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই এবং আমাকে ক্ষমতাসীনদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচনা করেই এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে।

অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়েও জনগণ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েই তারা এসব মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে। এসব মামলা দায়েরের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমাকে হেনস্তা করা এবং জনগণের সামনে হেয় করা। কিন্তু তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি এবং হবেও না ইনশআল্লাহ্।

বরং এসব করে তারাই জনগণের কাছে হেয় হচ্ছে এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। কারণ এদেশের মানুষ অনেক সচেতন এবং তারা সত্য ও মিথ্যার ফারাক সহজেই বুঝতে পারে। তাই আমাদেরকে যত বেশি মামলায় জর্জরিত করা হচ্ছে আমরা ততো বেশি দেশবাসীর সহানুভূতি ও সমর্থন পাচ্ছি। জনগণ আরো বেশি করে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে।

মাননীয় আদালত,
সে কারণেই আমরা অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা মামলা-মোকদ্দমায় মোটেই ভীত নই। তবে দেশবাসী ও আমাদের আশংকার কারণ অন্য জায়গায়। সেটা হচ্ছে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনকভাবে দেশ থেকে ন্যায়বিচারের পরিবেশ ও সুযোগ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। শাসক মহল তাদের এই অপকর্মে ও এই অসদুদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সব রকমের কারসাজির আশ্রয় গ্রহন করেছে।

বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। সে কারণে অনেকেই বলছেন, শাসক মহলের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে দেশে এখন ন্যায়বিচারের বদলে সৃষ্টি হয়েছে ‘নাই বিচারের’ পরিবেশ। অর্থাৎ দেশে সুবিচার ও ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগ ও পরিবেশ আজ আর নেই।

মাননীয় আদালত,
মাজদার হোসেন মামলার আলোকে সংশ্লিষ্ট সকলে এবং আমরা আশা করেছিলাম, নির্বাহী বিভাগের আওতা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে সত্যিকারের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা কায়েম হবে। কিন্তু আমাদের সকলের সে আশা চরমভাবে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল। আমরা কী দেখতে পেলাম? সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও আজও নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করা হয়নি।

এর ফলে নিম্ন আদালতগুলি আইন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত হয়নি। বরং সাম্প্রতিক কিছু ন্যক্কারজনক ঘটনায় এই আদালতগুলোর ওপর শাসক মহলের রাজনৈতিক চাপ ও কর্তৃত্ব আরো বেড়েছে।

ন্যায়বিচারের সুযোগ আরো সীমিত হয়ে পড়েছে। জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্টে সম্প্রতি কী ধরনের ন্যক্কারজনক ও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে, আপনি নিশ্চয়ই তা অবগত রয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে আসীন প্রধান বিচারপতিকে কী ধরনের পরিণতির শিকার হতে হয়েছে তা সকলেই জানেন। সংবাদ-মাধ্যমের এখন কোনো স্বাধীনতা নেই। ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ার ভয়ে তারা সত্য সংবাদ অবাধে প্রকাশ করার সাহস পায় না। তা সত্ত্বেও যতটুকু খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে পেরেছে তাতেই বুঝা গেছে যে, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে তাঁর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়া থেকেই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের অপতৎপরতা শুরু হয়। শাসক মহল তাদের ক্রোধ ও ক্ষোভ গোপন রাখতে পারেনি।

সূত্র: dailynayadiganta

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin