ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে ঈদ পরবর্তী মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর চার মাস। আগামী নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি। সত্তর এর নির্বাচনে মাওলানা ভাসানীর দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দল করেছিল। আজকে ভাসানীর দলের অস্তিত্ব নেই। কোনও দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সে দায় আমরা নেব না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এটাই নিয়ম।’
তিনি আরো বলেন, ‘আসন্ন সংসদ অধিবেশন এই সরকারের শেষ অধিবেশন। নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার ও সংসদ থাকবে। ওই সরকার শুধুমাত্র দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি চেষ্টা করেছে। জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি দিয়েছে। তবু তারা নির্বাচন বন্ধ করতে পারেনি। আগামী জাতীয় নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা বিএনপির নেই।’
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে যোগ্য ও দক্ষ লোকরা কাজ করছেন। সার্চ কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সুতরাং, নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক তোলার সুযোগ নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো না। তবু নির্বাচনে জয় পেয়েছে। বিএনপি সেই নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ বলেছিল।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনো ভুল ছিল না। চামড়া নিয়ে জটিলতা খুব শিগগিরই কেটে যাবে বলে ট্যানারি মালিকরা আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান তোফায়েল।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখলাম চামড়া নিয়ে একটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমি যখন দামটা কমালাম তখন সাংবাদিকদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখেছি দাম কেন কমালাম।
তিন কারণে এবার চামড়া কম বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দাম কমানোর পরও বিক্রি হচ্ছে না এর কারণ হল এক নম্বর- গতবারের চামড়া রয়ে গেছে, দুই- যারা ট্যানারি মালিক, তারা বলছে ব্যাংকের ঋণ সঠিক সময়ে পায়নি, তিন- সাভারে যে কারখানাগুলো হওয়ার কথা সেগুলো গড়ে ওঠেনি।
এসব কারণেই এবার চামড়া কেনা-বেচায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা গতকাল আশ্বাস দিয়েছেন এটা থাকবে না, ঠিক হয়ে যাবে। আমরা যে দামটা কমিয়েছিলাম আমাদের সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল।
ঈদ সামনে রেখে গত ৯ আগস্ট কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার, যা গতবারের চেয়ে কম হওয়ার বিষয়টি সংবাদের শিরোনামে আসে।
বাণিজ্যমন্ত্রী সেদিন ঘোষণা দেন, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়; ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কিনবেন। সারা দেশে খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় সংগ্রহ করবেন তারা।
তবে ঈদে চামড়া ব্যবসায়ীরা পাড়া মহল্লা থেকে নূনতম দামে চামড়া কিনে। গ্রামাঞ্চলে বড় গরুর চামড়াও বিক্রি হয় চারশ’-৫শ’ টাকায়। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে আড়তে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমতে থাকায় অনেক মৌসুমি বিক্রেতা হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনেছেন বলেও দাবি করেন।
আড়তদারদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার দাম ঠিক করে দিয়েছে ট্যানারি মালিকদের জন্য। মৌসুমি বিক্রেতারা সেই দাম মাথায় রেখে বেশি দাম দিয়ে চামড়ায় কিনে লোকসানে পড়েছেন।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।