প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ মন্তব্য কেন করছেন সে প্রশ্নও উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কিছু মানুষের চেয়ারে বসলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়। আবোল-তাবোল কথাবার্তা বলে।’ আজ বিকেলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রধানমন্ত্রী এই ক্ষোভের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে বলেন।
রোববার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হওয়া উচিত।’ যুক্তি দেখিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা বলেন, ‘বিগত নির্বাচনগুলোতেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।’
সিইসির বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হন। এখনো নির্বাচন নয়মাস বাকি, নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়নি। এসময় অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য কেন?- এই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে ওবায়দুল কাদের সিইসির বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এখতিয়ার বর্হিভূত বিষয়।’
উল্লেখ্য, নুরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পর বিএনপির সঙ্গে সংলাপে জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রবর্তক বলে মন্তব্য করেছিলেন।
বাংলা ইনসাইডার
জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হওয়া উচিত : সিইসি
আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন কে এম নূরুল হুদা।
আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি সেনা মোতায়েনের পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার পুরো নির্বাচন কমিশনের। ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’ এই সভার আয়োজন করে।
সভায় নূরুল হুদা বলেন, ‘বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে সেনা মোতোয়েন করা হয়েছিল। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন হওয়া উচিত’। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে একবারও বলিনি যে সেনা মোতায়েন হবে না। তবে এটা আমার একার সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। ইসির আরো পাঁচজন সদস্য আছেন, তারা মিলেই এটা সিদ্ধান্ত নেবেন।
সিইসি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত বলে আমি একদম মনে করি না। তবে জাতীয় নির্বাচনে তিনি সেনা চাইলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে নন।
খালেদাকে আরেক মামলায় গ্রেফতার : বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন নেই : চিকিৎসক
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এখনই বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান একথা জানিয়েছেন।
আজ রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনো আসেনি। তবে তিনি যত দূর দেখেছেন, তাতে খালেদা জিয়াকে এ মূহুর্তে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, কারাগারে আসার আগে থেকেই তাঁর আরথ্রাইটিসের সমস্যা ছিল। এখন সেই সমস্যা কিছুটা বেড়েছে। তাঁর বাঁ পা ও বাঁ হাতে একটু ব্যথা হয় এখন। যেহেতু বাঁ পাশে ব্যথা, তাই ধরে নেওয়া যায় তাঁর কোমরে কিছুটা সমস্যা আছে।
বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার খালেদা জিয়ার কোমর ও ঘাড়ের এক্স-রে করা হয়। পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে এসব পরীক্ষা করা হয়। এর আগে গতকাল খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে পরীক্ষার পর
বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, আপাতদৃষ্টিতে তিনি ভালো আছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল কারা প্রশাসনকে জানাবে।
এর আগে ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। পরদিন বোর্ডের সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তবে গুরুতর নয়। তবে গত শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের স্বাস্থ্য খুব ভালো নয়।’
আরেক মামলায় গ্রেফতার
দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আটজনকে হত্যার মামলায় কুমিল্লার একটি আদালত আজ তাকে গ্রেফতার আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. মোস্তাইন বিল্লাল রোববার এ আদেশ দেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কুমিল্লার এ মামলায় তার জামিনের আবেদন করলে শুনানির জন্য তা আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর প্রায় দুইমাস ধরে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
ওই মামলায় হাই কোর্ট তাকে জামিন দিলেও দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগ সেই জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। এখন মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকে এ মামলাতেও জামিন পেতে হবে।
নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির ডাকে টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যে ২০১৫ এর ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হলে দগ্ধ হয়ে আটজনের মৃত্যু হয়।
চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার পরদিন মামলা করেন। তদন্ত শেষে বিস্ফোরক আইনে ও হত্যার অভিযোগে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দুই মামলাতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়।
ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। এর মধ্যে খালেদা ঢাকার দুর্নীতি মামলায় কারাগারে যাওয়ায় কুমিল্লার মামলাতেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ওই আবেদন গ্রহণ করে ২৮ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সেদিন তাকে হাজির না করায় বিচারক গত ৩১ মার্চ কারা কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর আদেশ দেয়।
সেই আদেশ অনুযায়ী রোববার কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, বিএনপি নেত্রী কারাগারে রয়েছেন। অসুস্থতার কারণে তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি।
খালেদার আইনজীবী কাইয়ুমুল হক রিংকু জানান, আদালত এ মামলায় বিএনপিনেত্রীকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর তারা জামিনের আবেদন করলে বিচারক শুনানির জন্য ১০ এপ্রিল দিন ঠিক করে দেন।