al_photo

চীন থেকে আশ্বাস নিয়ে ফিরলেন আ.লীগ নেতারা

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর আমন্ত্রণে দেশটিতে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের মিলনমেলায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সুচির সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ সময় দুই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের কথা বলে এই অঞ্চলকে মানবিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন। সুচিও বলেছেন, তিনিও তাই চান, তবে তার দেশে নানা সমস্যা রয়েছে। এগুলোর সমাধান করে এগিয়ে যেতে হবে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে আলোচন তুলছে বিশ্ব জুড়ে। দেশটি থেকে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সই হয়েছে সমঝোতা স্মারক। এতে দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে আশাবাদী ঢাকা।

এই পরিস্থিতিতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে সে দেশে সম্মেলনে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সুচির ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগের প্রতিনিধি দলের মধ্যে দেখা হয় চীনে।

১২০ দেশের ৩০০ রাজনৈতিক দলের ৬০০ প্রতিনিধির অংশগ্রহণ এই সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপি এবং সাম্যবাদী দলের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

সফরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করেন দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল মজিদ হুমায়ুন।

বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং বিএনপিপন্থী সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। সাম্যবাদী দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।

আওয়ামী লীগের একজন প্রতিনিধি জানান, প্রথম অধিবেশনের পরপরই সুচির সঙ্গে কথা হয় তাদের। সুচির সঙ্গে আলাপে পারষ্পারিক সৌহার্দের মাধ্যমে একটি মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে সবে ধরনের অমানবিকতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন তারা।

সু চি কী বলেছেন?-এমন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, ‘সু চি আমাদের সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন, মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে তারাও সবসময় সোচ্চার।’

সু চি বলেন ‘মিয়ানমারে আমাদের গণতন্ত্রের বয়স মাত্র ২০ মাস। এর আগে প্রায় অর্ধশতাব্দী সামরিক শাসন চলেছে মিয়ানমারে। আমার নিজের ওপরও অনেক নির্যাতন এসেছে বিভিন্ন সময়। আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা পাবে মিয়ানমার।’

মূল সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা

‘সুন্দর আগামীর বিশ্ব গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা’ এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তিন দিনের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রধান অতিথি হিসেবে জিনপিংয়ের উদ্বোধনী ভাষণের পর বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি।

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়েছে অনুষ্ঠানে। তুরস্ক, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া মুসলিম বিশ্বের নেতারা তাদের বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য চীন ও মিয়ানমারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বানন জানান।

পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের ক্ষসতাসীন দলের প্রতিনিধিরা জানান, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে চীন উদ্যোগ নিয়েছে। তারা জানান, সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান চীন সফরে যান। সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের তাগিদ দেন চীন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।

সাইডলাইনে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

সম্মেলনে মূল আনুষ্ঠানিকতার বাইরে বিভিন্ন দেশের ৫০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের।

আওয়ামী লীগ নেতারা দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিক্ষা, চিকিৎসা, নারী ক্ষমতায়ন ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

এসব বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। ইরান, তুরস্ক, আলজেরিয়া, ফিলিস্তিন, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করে এবং বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করে।

একই ভাবে সাইড লাইনের বৈঠকে বিভিন্ন দেশের নেতাদের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে ধরেছে বিএনপি। তাদেরকে বাদ দিয়ে সংসদ নির্বাচন করার বিষয়টিও তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের দেশের কাছে তুলে ধরেন।

মধুর সময় কাটালেন দুই দলের নেতারা

চীনে সম্মেলনে যোগ দিয় বাংলাদেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা তিন দিন একসঙ্গে একই হোটেলে খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন।

বেইজিংয়ের তিয়েন আনমেন স্কয়ারের পাঁচ তারকা ‘গ্রান্ড হোটেলে’ ছিলেন তারা। একই সময়ে একই স্থানে সকালের নাস্তা, দুপুরের ও রাতের খাবারও খেয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। তিন দিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্বের ফাঁকে একসাথে চা চক্রেও অংশ নিয়েছেন দল দুটির নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেইজিং সফর থেকে দেশে ফেরা সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতারা ও আমরা একই হোটেলে তিন দিন ছিলাম। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আমাদের পারষ্পারিক সর্ম্পটা অত্যন্ত মধুর ছিল বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না।’

‘দেশে এমন সর্ম্পক দেখা যায় না কেন?- এমন প্রশ্নে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ কোনো মন্তব্য না করে শুধু হাসেন।

চীন সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সফর খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল বেইজিং।

মূল অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, মিয়ানমার, কানাডা, কম্বোডিয়া, তুরস্ক, নেপাল, ফিলিস্তিন, সুদান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কিউবা, অলজেরিয়া, মালেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ’

ঢাকাটাইমস

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin