বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার যে তদন্তের কথা আদালত বলছেন, সেটির সুষ্ঠু, নির্মোহ ও নিরপেক্ষ হওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে ওই ঘটনার সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনের পুর্নাঙ্গ রিপোর্ট এবং সেনাবাহিনীর করা পৃথক তদন্ত রিপোর্ট কেন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলো না, সেই প্রশ্নও তুলেছে দলটি।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়র্স ইনষ্টিটউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার বিশেষ কাউন্সিল-২০১৭ উপলক্ষে এর আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের রায় নিয়ে আমি কোনো কথা বলবো না। তবে এক্ষেত্রে আদালত যে পর্যবেক্ষন দিয়েছে তাতে উনারা স্বীকার করে নিয়েছেন, যে এই ঘটনায় জানতে গোয়েন্দারা ব্যর্থ হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এতো বড় একটি বিদ্রোহ যা খুব কম দেশেই ঘটেছে। অল্প সময়ে মধ্যে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। কখন হয়েছে? যখন শুধুমাত্র একটি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে তার পরপরই। কিন্তু উদ্দেশ্যটা কি ছিলো? তারা যেটি বলেছেন যে, সরকারকে ব্যর্থ বা বিব্রত করার চেষ্টা। আমি বলি, সেটি না কী বাংলাদেশকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা।’
“কারন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের খোয়াতে হয়নি। সেই সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে কে লাভবান হলো? যারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে চাইলো। বাংলাদেশের গর্ব সেনা বাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়ে চাইলো। কে লাভবান হলো? এই বিষয়গুলো অবশ্যই সুষ্ঠু, নির্মোহ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বের করা উচিত।কেন গোয়েন্দা সংষ্তা ব্যর্থ হলো ? কেন সেদিন অতিদ্রুত বিদ্রোহ দমন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হলো না?”, বলেন বিএনপির মহাসচিব।
বিডআর বিদ্রোহের ঘটনার পর যে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ না করায় প্রশ্ন তোলেন মির্জা আলমগীর।
“কেন সেদিন সিদ্ধান্ত নিতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অতিবাহিত করা হলো। আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। কিন্তু এটার তো কোনো সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত হয় নি। কেন এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর যে তদন্ত রিপোর্ট সেটি প্রকাশ করা হলো না।কেন এখন পর্যন্ত একটা যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিলো সেটির পুর্নাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হলো না। এই দেশের নাগরিক হিসেবে এগুলো আমাদের জানার অধিকার আছে।”
তিনি বলেন, ‘এজন্যই আমরা যেটা বলতে চাই. যে সুপরিকল্পিতভাবে একটা কাজ চলছে, অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার। দুশো বছরের একটি প্রতিষ্ঠান যা মাথা উচু করে দাড়িয়েছে সবসময়, সেই বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করার (তৎকালীন নাম বিডিআর) জন্য তাদের নামটা পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি কারাগারে থাকাকালীন সময়ে অনেক বিডিআর জওয়ান আমাকে বলেছে, পিলখানায় যাওয়ার আগে ওই বিদ্রোহের বিষয়ে তারা কিছুই জানতো না। এমন অনেকে আছেন যাদের সংশ্লিষ্টতা নাই।অনুষ্ঠানের নাম করে তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন তাদের পরিবারগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
“রায়ের মধ্যে ১২জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। যার নেতৃত্বে স্থানীয় সাংষদের সাথে বৈঠক হলো তাকে খালাস দেওয়া হলো। আর বিএনপি নেতা প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহমেদকে মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠিয়ে তাকে হত্যা করা হলো”, বলেন বিএনপি মহাসচিব।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা মহউদ্দিন খান আলমগীরের ফার্মার্স ব্যাংক ছাড়ার ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, তার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু এমন অনেক আরো দুর্নীতির খবর আছে যেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে না। তলে তলে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
জাগপার ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী অধ্যাপিকা রেহানা প্রধানের সবাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ, কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান প্রমুখ।
উৎসঃ আমাদের সময়