খালেদা জিয়া কারাগার থেকে হাসপাতালে

কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আজ শনিবার কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়।

বিএসএমএমইউ’র কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, যে কক্ষে খালেদা জিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে তা প্রস্তুত করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এদিকে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়া উপলক্ষে ওই সব সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ, র‍্যাব সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রচুর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এরই মধ্যে হাসপাতাল ও কারাগার এলাকায় বিএনপির কিছু কিছু নেতা-কর্মীকে ভিড় করতে দেখা গেছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে তাঁকে সেখানে রাখা হয়।

খালেদার মুক্তির আগে অন্য আলোচনা নয়: ফখরুল

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হচ্ছে আমাদের এক নম্বর দাবি, এক নম্বর শর্ত। তাঁকে মুক্ত করতে হবে। এরপর অন্য কিছু আলোচনা হবে।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ২০–দলীয় শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্যদের নামে হাজার হাজার মামলা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় তাঁকে পাঁচ বছর সাজা দিয়েছে, কারাগারে পাঠিয়েছে। অথচ তাঁদের এক ডজন মন্ত্রী আছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল। তিনজন মন্ত্রী আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণিত হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। তাঁরা বহাল তবিয়তে মন্ত্রিত্ব করছেন।’

বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই তিন দিন আগে আমাদের দলের নয়জন নেতা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলোর কাছে তাঁদের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে কয়েকজন আছেন যাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টই নেই। এ কথা বাংলাদেশের কে বিশ্বাস করবে, হাবিব–উন–নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।’

ওরা দুর্নীতি দমন করবে কোথায়, নিজেরাই তো দুর্নীতি করে করে এখন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ দেশের সব মানুষ জানে, কিন্তু মুখ খুলতে পারে না। মুখ খুললে কী হয়, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। মুখ খুললে শফিক রেহমানের মতো একজন স্বনামধন্য সাংবাদিক, বাংলাদেশে সমাদৃত ব্যক্তি তাঁকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তাঁর অপরাধ তিনি বড় হুজুরদের দুর্নীতি খোঁজার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন।’

দুদকের দুর্নীতি খোঁজার সময় নেই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য।

গত ১০ বছরে তাঁদের লোকজন হিমালয় সমান সম্পদ করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁদের থানার নেতাদের এখন যে সম্পদ, এর আশপাশেও আমাদের কেউ যেতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। সেগুলো দেখার জন্য দুদকের হাতে সময় নেই। তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট। কোনো হিসাব নেই, জবাবদিহি নেই। পার্লামেন্টে আইনও পাস করে নিয়েছে যে ওখানে এগুলো প্রশ্নও করা যাবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বানানো হয়েছে। এটাও কাছের মানুষদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজেদের লোকদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বড় বড় কন্ট্রাক্ট সব তাঁদের কাছে। পদ্মা সেতু আট হাজার কোটি থেকে ত্রিশ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সেতু ও সড়ক নিয়ে খুব বড় কথা বলা হয়। কিন্তু একটি রাস্তা দিয়েও যাওয়া যায় না। কয়েক দিন আগে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় আসতে ২০ ঘণ্টা সময় লেগেছ।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin