moududh_ahmedh

খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করতে সরকার ছলচাতুরী করছে: মওদুদ

‘খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করতে মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি নিয়ে সরকার ছলচাতুরী করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের নাগরিক সভায় মওদুদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি জাল জালিয়াতির একটা মামলা। এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। এটি কোনো ফৌজদারি নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা। মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়াকে যে কারাগারে রয়েছে, তা একটি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগার। মনোবল ভেঙে দিতেই তাকে এখানে রাখা হয়েছে। কিন্তু, সরকারের এ প্রচেষ্টা সফল হবে না।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে সরকার ভুল করেছে। তাকে কারাগারে পাঠানোর মাধ্যমে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘মিথ্যা, সাজানো, ভুয়া মামলায় কারাগারে পাঠিয়ে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিপরীতে তাদের নেত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেছে। বিএনপি নেত্রীর জনপ্রিতায় ভীত হয়ে সরকার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। সরকারের উদ্দেশে জিয়া পরিবারকে হেয় করা।’

খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই মামলার যে সব ফাইল সরকার তৈরি করেছে, এর কোথাও খালেদা জিয়ার সই নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- বিএনপি চেয়ারপারান খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এবার দৃষ্টান্তস্থাপন করব কিভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে একটি সরকারকে অপসারণ করা যায়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা যায়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটারবিহীন সরকারকে অপসারণ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা।’

এসময় তিনি আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সব ধরনের সমঝোতার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

আয়োজক জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সভাপতিত্বে নাগরিক সভায় আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সুকোমল বডুয়া, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, কৃষক দলের নেতা শাহজাহান মিয়া সম্রাট প্রমুখ।

রাজবন্দীর মর্যাদা দেয়া হয়নি, জেলখানায় খুবই কষ্টে আছেন খালেদা জিয়া: মওদুদ
কারাবন্দী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া দলীয় নেতাদের বলেছেন, যেভাবে তাকে জেলখানায় রাখা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি কষ্টকর আর কিছু হতে পারে না।

বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ সহ দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং আইনজীবী শনিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখান থেকে ফিরে মওদুদ আহমেদ বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন।

বিবিসির মাসুদ হাসান খান তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, জেলখানায় খালেদা জিয়াকে তারা কেমন দেখেছেন।

জবাবে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘তার মনোবল খুব শক্ত আছে। কিন্তু তিনি সেখানে আছেন একজন সাধারণ কয়েদি হিসেবে। কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা নাই। তিনি আছেন একটা সলিটারি কনফাইনমেন্টে, নির্জন কারাগারে। কোন জনমানব কেউ নেই। যেন একটা পরিত্যক্ত বাড়ি।’

গৃহকর্মী ফাতেমাকে সঙ্গে থাকতে না দেয়ার কারণেই খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় আছেন বলে উল্লেখ করে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘উনার তো ৭২ বছর বয়স। অনেক শারীরিক সমস্যা আছে। উনার দুটি হাঁটুই রিপ্লেস করা। হাঁটতে অসুবিধা হয়। ফাতেমা বলে তার যে গৃহসেবিকা, তিনি গত বিশ বছর ধরে তার দেখাশোনা করতেন। উনি বললেন, এর চেয়ে বেশি কষ্টকর আমার জন্য আর কিছু নয়। ফাতেমাকে তারা আমার সঙ্গে থাকতে দিল না। তাকে জেলগেট থেকে বিদায় করে দিয়েছে।’

খালেদা জিয়াকে এখনো পর্যন্ত রাজবন্দীর মর্যাদা দেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘২০০৬ সালের সংশোধিত জেল কোডে নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে কারা কারা অটোমেটিক্যালি ডিভিশন পাবে। অথচ উনাকে কোন ডিভিশন দেয়া হয়নি। উনি সাধারণ কয়েদি হিসেবে আছেন।’

তিনি বলেন, জেলকোডে আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা, যে দলের প্রতিনিধিত্ব পার্লামেন্টে আছে, বা এমপি, এরা অটোমেটিক্যালি ডিভিশন পাবেন।

‘আমি নিজেই তো এই সরকারের আমলে দুবার জেলে গেছি। আমাদের ডিভিশন পাওয়ার জন্য তো কোন আদালতের অর্ডার লাগেনি। কারণ আইনের মধ্যেই আছে আমি সেটা পাব। অথচ বেগম জিয়াকে আজ তিনদিন পার হয়ে যাওয়ার পরও কোন ভিডিশনাল ফ্যাসিলিটি দেয়া হয়নি।’

সংবাদমাধ্যমে খালেদা জিয়ার জন্য সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তাকেও মিথ্যে বলে জানান মওদুদ আহমেদ।

‘খবরের কাগজে লিখেছে এসি দিয়েছে। মোটেই এসি দেয়নি। এটা একেবারে মিথ্যে কথা। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাইরে বলা হচ্ছে আপনাকে সব সুযোগ সুবিধা দিয়েছে, ফাতেমাকে দিয়েছে। উনি সম্পূর্ণভাবে ডিনাই করেছেন। সেখানে জেলের কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই উনি এসব কথা বলেছেন।’

বিএনপি নেতাদের এই দলটি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মূলত তার আপিল আবেদনের ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে। এ নিয়ে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে তারা কথা বলেছেন।

‘আমরা ভেবেছিলাম বৃহস্পতিবারই আমরা রায়ের সত্যায়িত কপি পাব। আপিল করার আগে সেটা দরকার। জাজমেন্টের কপি ছাড়া কোন আপিল ফাইল করা যায়না। যদি আগামিকাল রোববার আমরা এটা পাই, তাহলে সোমবার বা মঙ্গলবার আমরা এটা ফাইল করবো। সাথে সাথে তার জামিনের আবেদনও আমরা করবো।’

মওদুদ আহমেদ বলেন, জেলখানায় এই সাক্ষাতের সময় তাদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। তবে দল কীভাবে চালাতে হবে সেই নির্দেশনা তিনি আগেই দিয়ে গেছেন।

‘আমাদের গঠনতন্ত্রেই আছে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান, তারেক রহমান উনিই দায়িত্বে থাকবেন। তিনি আমাদের বলেছেন, সুশৃঙ্খল থাকতে, কোন হঠকারিতা না করার জন্য এবং সবকিছু যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয়। এই ব্যাপারে যেন আমরা বাড়াবাড়ি কিছু না করি। যাতে করে দেশের মানুষ বোঝে যে আমরা সংযম দেখিয়েছি।’

মওদুদ আহমেদ বলেন, দলীয় নেত্রীর নির্দেশ মেনে তারা শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin