khaleda_03

খালেদা জিয়াকে লন্ডন পাঠাতে সমঝোতা চেষ্টায় বিএনপি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠাতে চায় বিএনপি ও তাঁর পরিবার। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, দিন দিন বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। তিনি এখনো ঠিকমতো খেতে পারেন না।

একাকী হাঁটাচলা করতে পারেন না। তাঁর উন্নত চিকিৎসা জরুরি। শুধু চিকিৎসার স্বার্থেই তারা সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিএনপিও এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চায়।

সরকার অনুমতি দিলে ব্রিটিশ হাইকমিশন বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য ভিসা দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সম্মতি পাওয়া যায়নি। ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তাঁর ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন।

তিনি আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তাঁর সাজার রায় হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন সম্প্রতি বলেছেন, সরকার অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য তারা ব্রিটেন যেতে ভিসা দেবেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ব্রিটেন একটা ডেমোক্র্যাটিক কান্ট্রি। তাদের মধ্যে সভ্যতা, ভদ্রতা- এ বিষয়গুলো এখনো যথেষ্ট অন্যান্য দেশের চাইতে। তারা একটা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে একজন গণতান্ত্রিক নেতার প্রতি তাদের যে দায়িত্ব সে কথাটাই বলেছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। তাঁকে বিদেশ নেওয়া দরকার। সাজা স্থগিতের জন্য দেওয়া দুই শর্তকে ‘অমানবিক’ বলেছেন তারা। এ প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে উচ্চ আদালতের ওপর।

সরকারের নির্বাহী আদেশে তাঁকে দুই দফায় সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এটা সরকারের এখতিয়ারে নেই।’বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান তার মা খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা লন্ডনে হোক। শুরুর দিকে সিনিয়র নেতাদের দ্বিমত থাকলেও এখন তারা শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বেগম জিয়ার চিকিৎসা দেশের বাইরে করানোর পক্ষে।

পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে যোগাযোগের চেষ্টাও চলছে। শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় হলেও এখন সরকারের সম্মতি মিলছে না। পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। সরকারি চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য দেশের বাইরে পাঠানো জরুরি। বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে বলে সূত্রটি জানান।

বেগম জিয়ার মেজ বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তাঁর ভালো চিকিৎসা দরকার। করোনার কারণে বাসায় থাকতে হচ্ছে তাঁকে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া জরুরি। বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের ওপর। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের ফিরোজায় দেখা করেছিলেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

তিনি বলেন, ‘বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি খেতে পারেন না। উঠেবসে চলাফেরা করতে পারেন না। কারও সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নেওয়া জরুরি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার একটি শর্ত তুলে নিলেই খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়া যায়।

পরিবারও দাবি জানিয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে।’ দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে দুই শর্তে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।

শর্তানুযায়ী, এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। তাঁর দন্ডের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলে তিনি কারামুক্ত হন। ওই মুক্তির মেয়াদ ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে দ্বিতীয় মেয়াদে সাজার কার্যকারিতা আগের দুই শর্তে আরও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে সরকার।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার সমর্থিত চিকিৎসকরাই বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ‘অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট’ জরুরি। দেশে তো সাধারণ চিকিৎসাই নেই, অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট হবে কোত্থেকে?

আর সরকারের লোকজন তো সাধারণ চিকিৎসার জন্যই চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। তাহলে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, এ দেশের গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়ার বেলায় এমন আচরণ কেন?

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া জরুরি। সরকারের উচিত, শর্ত প্রত্যাহার করে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছে পরিবার। সরকারের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা চলছে কিনা তাও জানে পরিবার।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin