বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায় কী হতে পারে তা আমরা অনুমান করতে পারছি। কারণ দেশের হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টসহ সব কোর্ট হাসিনার কোর্ট। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিদায়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুর মুক্তির দাবিতে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ঢাকাস্থ ফেনী জাতীয়তাবাদী ছাত্র ফোরাম।
গয়েশ্বর বলেন, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া ও আগামী সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত শেখ হাসিনার বিদায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, সৎ সাহস নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের উদ্যোগ নেন, পদত্যাগ করে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নেন।
তিনি আরও বলেন, আমলারা ক্ষমতাসীন সরকারকে ভয়ে জি স্যার জি স্যার বলে থাকেন। যদিও তারা বেশিদিন কারো পক্ষে থাকতে চান না, সব সময় চান পরিবর্তন। কেননা পরিবর্তন হলে তাদের আরও কিছু নতুন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পায়।
‘জেলের তালা আমাদের ভাঙতে হবে না। শেখ হাসিনাকেই জেলের তালা খুলতে হবে, সেখানে তাদেরও থাকতে হবে। তালা না খুললে সেখানে (আওয়ামী লীগ) তাদের জায়গার সংকুলান হবে না।
ওমর ফারুক ডালিমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্যে দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহিলাদলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।
‘ধানের শীষ’ প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেবে জামায়াত!
ভোটের আগে নিবন্ধন ফিরে না পেলে বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা করছে জামায়াতে ইসলামী। আগে সিদ্ধান্ত ছিল, হয় দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, নয়তো জোটগত সমঝোতা রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হবেন দলটির নেতারা। তবে এ অবস্থান থেকে সরে আসার আলোচনা চলছে দলে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে, প্রার্থী মনোনয়নে ‘রাজনৈতিক দলের প্রার্থী’র পরিবর্তে ‘রাজনৈতিক দল/জোটের প্রার্থী’র বিধান চালু করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত।
দলটির নেতারা জানিয়েছেন, জামায়াত আগামী নির্বাচনে যেভাবেই হোক অংশ নেবে। গতবারের মতো বর্জন করবে না। বিএনপিও আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ধরে নিয়েছে জামায়াত। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দলীয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু নেতা জানান, যুদ্ধাপরাধের বিচারে শীর্ষনেতাদের হারিয়ে কোণঠাসা থেকেও কমপক্ষে ৪৩ আসনে প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।
২০১৪-এর জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াতের সিদ্ধান্ত ছিল, দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে না পারলে দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন, তবুও অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন না। এ কারণে বিএনপি-জামায়াতের বর্জন করা ওই সংসদ নির্বাচনের পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ব্যবহার করেননি জামায়াত নেতারা। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
কয়েকটি পৌরসভায় বিএনপির সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করেও ধানের শীষ নেয়নি জামায়াত। তবে এখন ভাবছে, ধানের শীষ প্রতীক নিলে সুবিধা আছে। তাতে বিএনপির ‘জামায়াতবিরোধী’ অংশের ভোটও পাওয়া যাবে। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে না লড়লে সরকারও দমন-পীড়ন চালাতে পারবে না। নির্বাচনের সময় অন্তত বিএনপি প্রার্থীদের সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রচারকাজ চালানো যাবে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়। ফলে জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারছে না। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবশ্য জামায়াতের আপিল সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালত আরও একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ব্যবহার করতে না দিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন। দাঁড়িপাল্লা ন্যায়বিচারের প্রতীকরূপে সুপ্রিম কের্টের মনোগ্রামে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা বাদ দিয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে আইনি লড়াইয়ে জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাবে কি-না তা অনিশ্চিত। প্রতীক ফিরে পাওয়া আরও অনিশ্চিত।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক সংলাপে ডাক পায়নি জামায়াত। গত ২৬ অক্টোবর দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে জামায়াতের ১৬ দফা প্রস্তুাব পাঠান। একটিতে অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের দাবি জানিয়ে মনোনয়নপত্র ফরম-১ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাবে যা চাওয়া হয়েছে তা হলো- ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়মে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট দাখিলের বিধান ছাড়াও এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে এবং অনলাইনে দাখিলের বিধান করা। মনোনয়নপত্র ফরম-১ সংশোধন করা। “রাজনৈতিক দলের প্রার্থী” শব্দগুচ্ছ “রাজনৈতিক দল/জোটের প্রার্থী” শব্দগুচ্ছ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা।’
জামায়াতের কর্মপরিষদের একজন সদস্য সমকালকে জানিয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হলো সমঝোতা করে কেন্দ্রীয়ভাবে আসন ছাড় দিলেও স্থানীয়ভাবে বিএনপি নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এতে জামায়াত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং উভয় দলের ভোটাররা বিভ্রান্ত হন। অনেক ভোট ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর ঘরে চলে যায়। তাই দাঁড়িপাল্লা না পেলেও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামায়াতের জন্য লাভজনক।
এ ক্ষেত্রে জামায়াতের সুদূরপ্রসারী লাভ-লোকসানেরও হিসাব রয়েছে। ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হলেও সংসদে জামায়াতের পৃথক দলীয় প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। ভবিষ্যতে অনুকূল সময়ে নিবন্ধন ফিরে পেলেও সংসদে জামায়াত দলগত অবস্থান পাবে না।
তবুও জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব কেন ধানের শীষ গ্রহণের চিন্তা করছেন- এ প্রশ্নে ছাত্রশিবিরের সাবেক একজন সভাপতি ও বর্তমানে জামায়াতের ‘চিন্তাশীল’ অংশের নেতা জানান, ২০০৯ সাল থেকে নেতাকর্মীদের ওপর চরম দমন-পীড়ন চলছে। সরকার পরিবর্তন ছাড়া এ অবস্থা বদলাবে না। তাই এখন আসন কিংবা ভোট সংখ্যার হিসাবের চেয়ে দলের অস্তিত্ব রক্ষা জরুরি।
তিনি অভিযোগ করেন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে জামায়াতকে নির্বাচনী প্রচার চালাতে দেওয়া হয়নি। ভোট চাইতে গিয়েও গ্রেফতার হয়েছেন জামায়াত নেতারা। বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হলে একই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীক থাকলে আন্তর্জাতিক চাপ ও গণমাধ্যমে নজরদারির কারণে ভোটের প্রচার থেকে সরকার তাদের বঞ্চিত করতে পারবে না।
সূত্র: সমকাল