কেবল কানাডা হয়েই ৯৭ হাজার কোটি টাকা পাচার করে হাসিনাপুত্র জয়!

বাংলাদেশের বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ১৫.১ বিলিয়ন ডলার মানি লন্ডারিং করেছেন কানাডাতে। মন্ট্রিল ভিত্তিক কানাডিয়ান মানি লন্ডারিং এজেন্সি ফিনট্রাকের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

আওয়ামীলীগের লুটপাট নিয়ে দেশীয় অনুসন্ধানকারী একটি সংস্থা বাংলাদেশের কয়েকটি খাত থেকে জয়ের ৯৭,১৯১ কোটি টাকা লুটপাটের একটি খাতওয়ারি হিসাব খুঁজে বের করেছে।

এসব অর্থের বেশির ভাগই কানাডিয়ান চোরাই পথ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে থাকে জয়। এর বাইরে আরও খাত এবং মাধ্যম রয়েছে। জয়ের টাকা অবৈধ টাকা আয়ের আংশিক তালিকা নিম্নরূপ:

বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী খাত থেকে তুলে নেয়: ৭৬,০০০ কোটি টাকা। ভিওআইপি খাত থেকে সংগ্রহ করে: ৯৫০০ কোটি টাকা। আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেয়া থেকে তুলে নেয়: ৫৩০০ কোটি টাকা। আইসিএক্স লাইসেন্স দেয়া বাবদ কমিশন: ২৩৮০ কোটি টাকা।
এটুআই প্রজেক্ট থেকে তুলে নেয়: ১১,৫৬০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা হিসাবে প্রতি বছর বেতন ১৬ কোটি ৮০ লক্ষ : ১৫১ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ ও ও জ্বালানি খাত:
রেন্টাল পাওয়ারে প্রতি বছর ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভুর্তকি দিয়ে লুটপাট করা হয়েছে ১ লাখ কোটির টাকার বেশি। এর বড় অংশ সরাসরি গেছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একাউন্টে।

এসব দুর্নীতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না, আইন করে বন্ধ করা হয়েছে। জ্বালানী তেল আমদানীর হাজার হাজার কোটি টাকার কমিশন যায় জয়ের কাছে। বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র বিনা টেন্ডারে দিয়ে সেখান থেকে নেগেসিয়েশন মানি নেয়া হয়েছে বিদেশে। এ দু’খাত থেকে জয় কমপক্ষে ৭৬ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।

ভিওআইপি খাত:
অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা থেকে কমিশন গ্রহন জয়ের আদি পেশা। আইটি বিষয়ে তার দক্ষতা থাকায় বিগত ৯৬-২০০১ সময়কালেও তার সেখানে দখল ছিল। ভিওআইপি থেকে জয় কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করেন- এমন অভিযোগ জাতীয় সংসদে প্রথম উত্থাপন করেন বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক।

ভিওআইপি দিয়ে বাংলাদেশে যত কল আপ বা ডাউন হয়, প্রতি মিনিট কলের জন্য জয়ের কাছে যায় এক মার্কিন সেন্ট। তথ্যটি বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান কবিরের। ২০১৩ সালে ভিওআইপি কল ট্রান্সফারের জন্য পাঁচ কোম্পানির ৫২ হাজার সিম কার্ড চিহ্নিত করা হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায় এর ব্যাপ্তি কেমন।

এ খাতে জয়ের দৌরাত্ম এমন চরম আকার ধারন করেছে যে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে ভিওআইপির কলের সংখ্যা। আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে খোদ রাষ্ট্রীয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল ও সরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটক। রহস্যময় ভূমিকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। যে কারণে বিটিসিএলের একচেঞ্জের মাধ্যমে দিনে কত মিনিট বৈদেশিক কল আদান-প্রদান হচ্ছে, তারও কোনো হিসাব নেই। এমনকি বেসরকারি অপারেটরদের সিম ব্যবহার করে ভিওআইপি ব্যবসা চলছে।

কলের হিসাব রাখার যন্ত্র মহাখালী আইটিএক্স সিডিআর (কল ডিটেইল্ড রিপোর্ট) রহস্যজনকভাবে দিনের পর দিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আর এ ব্যবসা পরিচালনা হচ্ছে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে। বিটিসিএলে ২০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এসব দুর্নীতির পেছেনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তার বানানো প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ পলক ও তারানা হালিম।

আইজিডাব্লিউ এবং আইসিএক্স খাত:
ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউগুলোর মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা কলগুলো তারা মোবাইল ও অন্যান্য টেলিফোন অপারেটরের কাছে পৌঁছে দেয়। বিদেশে করা কলের ক্ষেত্রে এএনএস ও আইজিডব্লিউ এবং দেশের এএনএসগুলোর মধ্যে সংযোগের দায়িত্বও পালন করে তারা। ৩৫টি আইজিডব্লিউ অপারেটর অনুমোদিত হলেও ৪৫টি লাইসেন্স দেয়া হয়।

অন্যদিকে আইসিএক্স অপারেটররা অপারেটরদের মধ্যকার যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। গত পাঁচ বছরে বিটিআরসি প্রায় দু’হাজার আইসিএক্স অপারেটর লাইসেন্স দিয়েছে।

ইন্টারনেট গেটওয়ে আই.জি.ডাব্লিউ এবং ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ আইসিএক্স অপারেটরদের লাইসেন্স প্রদান করে অবৈধভাবে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা জয়কে জোগাড় করে দেয় বিটিআরসি।

একসেস টু ইনফরমেশন-এটুআই প্রকল্প:
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসেস টু ইনফরমেশন-এটুআই প্রকল্প আ’লীগ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার খাত। আ’লীগ সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে এটুআই প্রকল্প বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও দপ্তরের সহায়তায় নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সারাদেশে ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে ৫২৮৬টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ১৩৬টি সেবা প্রদান;

সকল সরকারি দপ্তরে জাতীয় তথ্য বাতায়ন বাস্তবায়ন, শিক্ষক বাতায়ন; ৩২৮৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন; বিচারিক তথ্য ও সেবা সহজলভ্য করতে বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন; ১৯ হাজার সরকারি দপ্তরে ই-ফাইল ব্যবস্থা বাস্তবায়ন; ২০০টি গুরুত্বপূর্ণ সেবা সহজিকরণে সহায়তা প্রদান। দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ কোটি টাকার এ প্রজেক্টের যন্ত্রপাতি সেবা প্রদানের খরচ থেকে বিরাট একটা অংশ (প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা) গেছে জয়ের পকেটে।

যুক্তরাষ্ট্রে পাচার ও ব্যাংক ব্যালেন্স:
রিজভি সিজারের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল আদালতের মামলার রেকর্ড থেকে জানা যায়, সজিব ওয়াজেদ জয়ের আমেরিকার এক একাউন্টেই পাওয়া গেছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বা ২৫০০ কোটি টাকা। আরো যে কত একাউন্ট আছে, সে তথ্য আছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মানি লন্ডারিং সংস্থার কাছে থাকতে পারে।

তাছাড়া, এ পর্যন্ত জয় বিপুল পরিমান ক্যাশ ডলার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে অনেক বার। নিউ ইয়র্ক এবং মেক্সিকো চেকপোষ্ট দিয়ে অন্তত ১৭ বার ঢোকার খবর পাওয়া গেছে। নিউ ইয়র্কের কেনেডি এয়ারপোর্টে কাস্টমসের কাছে একবারেই ধরা পড়েছে ৯ লাখ ক্যাশ ডলার। তখন বাংলাদেশ এম্বেসী মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়, কিন্তু ডলার বাজেয়াপ্ত হয়। অর্থের উৎস জানতে চায় আমেরিকান কাস্টমস। জয় ফ্যামিলি বিজনেস বললেও বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে বিস্তারিত জানতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কোনো জবাব দেয়া হয়নি। ভবিষ্যতে কোনো সরকার জবাব দিলেই মানি লন্ডারিংয়ের নিয়মিত মামলা দায়ের হবে জয়ের নামে।

সূত্র: বিডি পলিটিকো

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin