khaleda_adalat

কেন খালেদা জিয়ার আবেদনে বিদেশে চিকিৎসার উল্লেখ নেই?

বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করা হচ্ছে। একই শর্তে ৬ মাস জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্যে সুপারিশ করেছে আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এটা এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন হলেই যেকোন সময় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে।

বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বেগম জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া দূর্ভাগ্যজনক এবং এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ। কিন্তু বাংলা ইনসাইডার-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে তার ছোটভাই শামীম এস্কান্দার যে জামিনের আবেদন করেছেন সেই আবেদনে কোথাও উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলা হয়নি।

শামীম এস্কান্দারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদনে বলা হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং ৬ মাস তিনি জামিনে আছেন। এই সময় তার শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। বরং তিনি এখনো গুরুতর অসুস্থ।

এই অবস্থায় তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এই আবেদনটি যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন মতামতের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতটি নিরীক্ষা করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করেছিল।

প্রথমত, বেগম খালেদা জিয়াকে গতবার কীসের ভিত্তিতে জামিন দেওয়া হয়েছিল, ঐ ভিত্তিতে এই জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় কিনা। গত জামিনে তার কী কী শর্ত ছিল এবং এক্ষেত্রে শর্তের কোন পরিবর্তন করা যায় কিনা।

আইন মন্ত্রণালয় যে সুপারিশ দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, গত ২৫ মার্চ যে জামিন দেওয়া হয়েছিল, সেখানে যে ৬ মাসের শর্ত ছিল সেই একই শর্তে বেগম জিয়ার জামিনের মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিদেশে যাওয়ার বা বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার কোন উল্লেখ তার আবেদনে ছিল না।

তাহলে প্রশ্ন ওঠে বিএনপি নেতারা এই ধরণের কথা বলছেন কেন? আবেদনেই যেখানে বিদেশে যাওয়ার কথা উল্লেখ নেই সেখানে বিএনপি এ ধরণের দাবী কিভাবে উত্থাপন করছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যে কারণগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে-

প্রথমত; বিএনপি নেতৃবৃন্দ আবেদন সম্পর্কে কিছু জানেনই না। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনের ব্যাপারে কেউ বিন্দুবিসর্গও জানেন না। আবেদনটি তৈরি করেছেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। এরপর আবেদনটিতে শামীম এস্কান্দার স্বাক্ষর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন।

মাহবুব উদ্দিন খোকন এই আবেদনটি তৈরি করার আগে বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি যেভাবে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন সেভাবেই মাহবুব উদ্দিন খোকন আবেদনটি তৈরি করেছেন বলে জানা যায়। কাজেই বিএনপি নেতৃবৃন্দ যে এই আবেদন সম্পর্কে কিছুই জানেন না তা তাদের প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত; বেগম জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি আবেদনে উল্লেখ করা হয়নি এ কারণে যে, বেগম জিয়া তার ছেলের কাছে যেতে আগ্রহী নন কিংবা তার ছেলে তাকে লন্ডনে নিতে আগ্রহী নন। এজন্য বেগম জিয়া এই আবেদনে সুস্পষ্টভাবে বিদেশে যাওয়ার কথা লেখেননি।

কারণ তিনি জানেন না আসলে এরকম অনুমতি দেওয়ার পর লন্ডনে তিনি তার ছেলের কাছে যেতে পারবেন কিনা। বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার পর তিনি যদি তার ছেলের কাছে যেতে না পারেন তাহলে সেটা হবে আরেকটি প্রহসন। এজন্য আবেদনে বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

তৃতীয়ত; বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চাইলে বিএনপির এমনিতেই যে ভাবমূর্তির সঙ্কট তা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বেগম জিয়ার পরিবার। কারণ এ ধরণের আবেদনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের মৃত্যু ঘটবে। আর সে কারণেই বেগম জিয়া জেনেশুনেই তার জামিনের আবেদনে বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেননি, বরং এ বিষয়টি তিনি সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছেন।

চতুর্থত; সর্বশেষ একাধিক সূত্র মনে করছে যে, আবেদনে কোনকিছু উল্লেখ না করলেও সরকার যদি বিবেচনা করে তাহলে বেগম জিয়াকে বিদেশে যেতে দিতে পারে। এজন্য নিজেই এই অপমানজনক আবেদনের চেয়ে সরকারের উপরে এটাকে ছেড়ে দেওয়াকে ভালো কৌশল বলে মনে করেছেন বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা। আর এ কারণে বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শে তার বিদেশ যাওয়ার কথাটি উল্লেখ নেই তার জামিনের আবেদনে।

বিএনপি যে সবসময় মিথ্যাচার এবং অপপ্রচারের রাজনীতি করে এই আবেদন এবং পরবর্তীতে বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin