আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোটের আলোচনা তুঙ্গে থাকার মধ্যে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের বাসায় একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠকের সময় ঠিক হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন আলোচিত এই রাজনীতিকের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়া একাধিক নেতা।
ভোটের রাজনীতিতে বরাবর তলানিতে, তবু আলোচনায় থাকেন কামাল হোসেন। গত কয়েক মাস ধরেই বিএনপির পাশাপাশি নিজ দলের সাবেক নেতাকে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল তাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে কোনো এক কারণে।
আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও গণফোরাম নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনছে। আর তাকে জোটে নেয়ার দুই প্রধান দলের বৃত্তের বাইরে তৃতীয় শক্তি হয়ে ওঠার ঘোষণা দেয়া যুক্তফ্রন্ট নেতারা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের জোটের মডেলে কামাল হোসেনকে সামনে রেখে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
তবে নানা চাওয়া পাওয়ার মধ্যে চলছে আলোচনা। যুক্তফ্রন্ট যেমন কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলছে, তেমনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টায় বিএনপি কথা বলছে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে।
এ ক্ষেত্রে যুক্তফ্রন্ট নেতারা তিনশ আসনের অর্ধেক ছেড়ে দেয়ার ‘অবাস্তব’ প্রস্তাব দিয়েছেন। আবার কামাল হোসেনও ঐক্য প্রক্রিয়া নামে আরেকটি চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে কথা বলেছে বিএনপিও। কিন্তু তিনি জামায়াতকে রেখে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নন। আর বিএনপি তার পরীক্ষিত বন্ধুকে বাদ দিতে রাজি নয় এখন অবধি।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই জটিল অংকের সমীকরণের মধ্যে পড়েছে জোটের আলোচনা। আর আজকের এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন যুক্তফ্রন্টের নেতা মান্না।
যুক্তফ্রন্টের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্যে আসা, ঐক্যের নীতি কী হবে না হবে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
গত ১৯ আগস্টও কামাল হোসেনের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। তবে সেদিন গণফোরাম নেতা জানিয়ে দেন, তিনি যুক্তফ্রন্টে যোগ দিতে আগ্রহী নন আপাতত। তবে স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে তাদের সঙ্গে কাজ করতে আপত্তি নেই।
তবে এরপরও যুক্তফ্রন্ট নেতারা চাইছেন কামাল হোসেন তাদের সঙ্গেই থাকুক। আর তাকে রাজি করাতে নানা দেন দরবার করে এই বৈঠকে রাজি করা হেছে।
গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আজ কামাল সাহেবের বাসায় মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। তবে মিটিং এর বিষয়ে আমাকে এখনও অবগত করা হয় নাই। সেই মিটিংয়ে বি চৌধুরী (বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী) সাহেব থাকবেন।
বিষয়টি নিয়ে ড. কামালের ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র সদস্য সচিব আ ব মোস্তফা আমিন ঢাকাটইমসকে বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটায় ড. কামাল সাহেব তার বাসায় বি চৌধুরী সাহেবকে নিয়ে বসবেন। সেই মিটিং এ বি চৌধুরী সাহেব কাদেরকে নিয়ে আসবেন সেটা বলতে পারছি না।’
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তফ্রন্টের আরেক নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম কিভাবে করা হবে, আগামীতে কীভাবে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে এগুলো নিয়ে বি চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. কামাল। আলোচনার মাধ্যমে আমরা ঠিক করব কীভাবে সামনের লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাব।’
গত নভেম্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা নিয়ে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং আ স ম আবদুর রবের জেএসডি মিলে গঠন হয় যুক্তফ্রন্ট।
এই জোটে থাকার কথা ছিল কামাল হোসেনেরও। তবে তিনি ছিলেন বিদেশে। আর তাকে বাদ দিয়ে জোটের ঘোষণা দেয়াটাকে স্বাভাবিকভাবে নেননি গণফোরাম নেতা।
আর ড. কামাল যুক্তফ্রন্টে না থাকায় পরে জোট থেকে বেরিয়ে যান কাদের সিদ্দিকীও। তিনি আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন।
এরই মধ্যে যুক্তফ্রন্টের তৃতীয় শক্তি হওয়ার আলোচনা মিইয়ে গেছে। আর বিভিন্ন আলোচনা সভায় বিএনপির সুরেই সরকারের সমালোচনা ছাড়া এই জোট অভিনব কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি যাতে তারা জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারবেন।
আর সদ্য সমাপ্ত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও যুক্তফ্রন্ট জনপ্রিয়তার পরীক্ষঅয় অংশ নেয়নি। ফলে তাদের আদৌ কোনো প্রভাব জনগণের মধ্যে আছে কি না, তাও জানা হয়নি
ঢাকাটাইমস