khaleda

আদালতে খালেদা জিয়ার জবানবন্দী (পূর্ণাঙ্গ)

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ বানোয়াট ও অপ্রমাণিত। আমি দৃঢ়ভাবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করছি।

মঙ্গলবার বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অসমাপ্ত জবানবন্দী প্রদানকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। তিনি ৭ম দিনে আদালতে তার অসমাপ্ত জবানবন্দী শেষ করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনে প্রেসসচিব মারুফ কামাল খানের পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিটি পাঠকদের উদ্দেশে হুবহু তুলে ধরা হলো।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আদালতে দেয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জবানবন্দীর পূর্ণ বিবরণ:-

পি.ডব্লিউ-৩১ ও পি.ডব্লিউ-৩২ উভয়েই তাদের অনুসন্ধানকালীন রিপোর্টে তাদের সংগৃহিত জবানবন্দির বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, কুয়েতের আমীর অনুদানটি প্রদান করেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করার জন্য। তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরূপ তহবিল আনয়ন করেছেন এই মর্মে উভয় সাক্ষীই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এই তথ্যটি কোনরূপ বিরুদ্ধ সাক্ষ্য দ্বারা অপ্রমাণিত হয় নাই।

আসামী পক্ষের একটি নোটারাইজড সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশস্থ কুয়েত এ্যাম্বাসি হতে প্রদত্ত অকাট্য প্রমাণ বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়েছে। সেই প্রত্যয়নপত্রে কুয়েত এ্যাম্বাসি থেকে বলা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট অনুদান কুয়েতের আমির জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের জন্য অনুদান হিসেবে প্রদান করেন।

এইরূপ অনুদান প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে কোনোদিনই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরিত ও গৃহীত হয় নাই। রাষ্ট্রপক্ষের পি.ডব্লিউ-১৯ তার সাক্ষ্যে বিজ্ঞ আদালতে বলেন, মামলার তদন্তকারী জনাব হারুন-অর-রশিদ তাকে ২০০৮ সনের জুন মাসে ফটিকছড়ি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কর্মরত থাকাবস্থায় একটি নোটিশ প্রদান করেন।

তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার নোটিশ প্রাপ্ত হয়ে বলেন, সর্বশেষ ১৯৯২ সনের জুন মাস হতে ১৯৯৩ সনের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দফতরে হিসাবে রক্ষক পদে তিনি চাকরি করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রথমে একটি বেসরকারি কলেজে এবং পরবর্তীতে সরকারি কলেজে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৪ সনে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন।

এই সাক্ষীর স্বীকৃত মতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে কর্মরত প্রধানমন্ত্রীর সচিবের একান্ত সচিব পি.ডব্লিউ-১৪ সৈয়দ জগলুল পাশা তাকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ডেকে নেন এবং তিনি নির্দেশিত হয়ে আপডেট এন্ট্রি লেখেন। এই আপডেট এন্ট্রি লেখার সময় এই সাক্ষী বিসিএস ক্যাডারে সরকারি কলেজে চাকুরিরত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার ৯/১০ মাস পরে আমাকে ডেকে নিয়ে আসে।”

তিনি আরও বলেন, “বস্তু প্রদর্শনী-ওওও (রোমান থ্রি) সিরিজ ও ওওওঅ-( রোমান থ্রিএ)-তে কোনো নোটশীট ছিল না এবং তিনি কোনোদিন নোটশীট দেখেননি।” পি.ডব্লিউ-২০ তার সাক্ষ্যে স্বীকার করেন যে, পি.ডব্লিউ-৩২ তার কাছ থেকে মামলার সংশ্লিষ্ট এতিম তহবিলের মূলনথি চাইলে তিনি তা সরবরাহ করতে পারেননি। পি.ডব্লিউ-৩২ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং এই সাক্ষী দুটি পত্র দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, মূল নথিটি পাওয়া যাচ্ছে না।

পি.ডব্লিউ-৩১ তার জেরায় বলেন, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রমনা কর্পোরেট শাখা হতে প্রেরিত পত্র প্রদর্শনী-৪৮-এ বলা হয়েছে, উক্ত শাখায় পরিচালিত প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল চলতি হিসাব নম্বর ৫৪১৬-এর জন্য চাওয়া নি¤œলিখিত দীর্ঘ সময়ের পুরাতন রেকর্ডপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পি.ডব্লিউ-২১ তার সাক্ষ্যে বলেন, আমি দায়িত্ব পালনকালে এতিম তহবিল সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মূলনথি কোনো সময়ই দেখিনি। ত্রাণ তহবিল, স্বেচ্ছাধীন তহবিল, গোপনীয় তহবিল সংক্রান্ত বিষয় একান্ত সচিব সাহেব দেখতেন।

প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের কোনো মূল ফাইল আমি কোনো দিন দেখিনি। রাষ্ট্রপক্ষের বিভিন্ন সাক্ষী যেমন পি.ডব্লিউ-৯, পি.ডব্লিউ-১০, পি.ডব্লিউ-১১, পি.ডব্লিউ-১২, পি.ডব্লিউ-১৩, পি.ডব্লিউ-১৪, পি.ডব্লিউ-১৯, পি.ডব্লিউ-২০, পি.ডব্লিউ-২১ ও পি.ডব্লিউ-২৬ যে সাক্ষ্য বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করেছেন তার বরাত দিয়ে এবং সকল প্রকার উপস্থাপিত দালিলিক সাক্ষ্যের আলোকে এটা দৃশ্যমান হবে যে, আমি প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল সংক্রান্ত বিষয়ে কোনোদিনই কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলাম না।

প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে কোনোদিন কোনো তহবিল ছিল না এবং এটা অস্তিত্ববিহীন। এর কোনো একাউন্টের প্রমাণপত্র, কোনো মূল নথিপত্র, কোনো নোটশীট উপস্থাপিত হয়নি। কতকগুলি সই-স্বাক্ষরবিহীন ঘষামাজা ফাইল নম্বর উল্লেখ করে কিছু রেডর্ক প্রস্তুত করে দুদক কর্মকর্তা এই মামলায় আমাকে হয়রানিমূলক ভাবে জড়িত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট। এ নিয়ে কারো কোনো ভিন্নমত নেই।

এই প্রাইভেট ট্রাস্টটির কোনরূপ আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলে ট্রাস্ট সংশ্লিষ্ট কারো কোনো অভিযোগ নাই। সরকারের কোন ফান্ড দ্বারা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন হয় নাই। কুয়েতের আমীরের এককালীন অনুদান স্বীকৃত মতে তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান কর্তৃক আনীত হয় মর্মে সাক্ষ্য প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

দুদকের তদন্তে বৈদেশিক অনুদান প্রাপ্তির বিষয়ে কোনোরূপ ভিন্ন দাবি কেউ করেননি। প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে কোনোদিনই কোনো বাস্তবভিত্তিক কোনো তহবিল ছিলো- এ জাতীয় ডকুমেন্ট প্রধানমন্ত্রীর দফতর হতে আসে নাই এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতর হতে কোনো অভিযোগও কেউ করেন নাই। নিয়মিত ও আইন বর্ণিত পন্থায় কোনো অডিট আপত্তিও বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হয় নাই।

আমাকে, জিয়া পরিবারকে এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সম্পূর্ণরূপে হয়রানি করার প্রয়াস হিসেবে এবং রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপপ্রয়াস হিসেবে অনুমান নির্ভর ও কল্পিত অভিযোগে এই মামলায় মিথ্যা বর্ণনায় আমাকে জড়িত করা হয়েছে।

মাননীয় আদালত,
আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কোনো সেটেলর বা ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নই। এই ট্রাস্ট গঠন, এর তহবিল সংগ্রহ, ট্রাস্ট পরিচালনা এবং কোনো ধরনের কোনো লেনদেনের সঙ্গেও আমার ব্যক্তিগতভাবে বা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কখনো কোনো রকম সম্পর্ক ছিলো ও নেই কোন পর্যায়ে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বগুড়ায় জমি ক্রয় বা আশুলিয়ায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথেও আমার কোনো সম্পর্ক নাই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের এস.টি ডি. হিসাব নং-৭ খোলা এবং ঐ হিসাবের লেনদেন পরিচালনা করা ইত্যাদির সাথেও আমার কোনো সম্পর্ক নাই।

মাননীয় আদালত,
এই মামলার অনুসন্ধান বা তদন্তকালে পি.ডব্লিউ ১ হারুন-অর-রশীদ এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ এবং সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেন নাই যার মাধ্যমে তিনি দেখাতে পারেন যে, আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করেছি। অথচ কোনো রকম প্রমানাদি ছাড়া সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র এবং তার জবানবন্দিতে আমার বিরুদ্ধে এই ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছেন যে, আমি নাকি আমার পুত্রদ্বয় এবং আমাদের আত্মীয় মোমিনুর রহমানকে দিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করেছি।

আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী পক্ষ, বিশেষ করে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রী পরিষদের কতিপয় সদস্য প্রায়শই আমাকে জড়িয়ে জনসম্মুখে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করেন। পি.ডব্লিউ ১ হারুন-অর-রশীদের জবানবন্দিতে আমার বিরুদ্ধে যেসব মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্যে দিয়েছেন তার সাথে সেই সব অপপ্রচারণার একটি সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়। যা থেকে আপনি সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন যে, হারুন-অর-রশীদকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে এই মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা, মামলার বাদী এবং তাকেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হয়েছে।

মাননীয় আদালত,
সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ তার জবানবন্দিতে বলেছেন যে, আমি নাকি অনুদানের অর্থ থেকে দুই কোটি তেত্রিশ লক্ষ তেত্রিশ হাজার পাঁচশ’ টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অনুকূলে প্রদান করি। এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অমূলক, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। সাক্ষীর এই বক্তব্য কোনো দালিলিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়। একজন অনুসন্ধানকারী কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো দালিলিক প্রমানাদি ছাড়া কীভাবে এমন মনগড়া অভিযোগ ও বক্তব্য উপস্থাপন আনয়ন করতে পারেন, তা সত্যিই বিষ্ময়কর। আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অনুকূলে কখনো কোনো অর্থ দেইনি। এই ধরণের লেনদেনের ব্যাপারে কোনো চেকও আমি কখনো স্বাক্ষর করিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে এতিমখানা স্থাপনের সাথেও আমার কখনো কোনরূপ সম্পৃক্ততা ছিলো না, এখনও নাই।

মাননীয় আদালত,

সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ তার জবানবন্দিতে বলেন যে, “অথচ দীর্ঘ সময় কথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কোনো হিসাব নিকাশ না করে বা দেশের কোনো প্রতিষ্ঠিত অডিট ফার্মকে দিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছরে কোনো অডিট না করিয়ে উক্ত কথিত ট্রাস্টের নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় আত্মসাতের ব্যবস্থা করেন।” সাক্ষীর এই বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, তথ্য-প্রমাণবিহীন এবং সম্পূর্ণ মনগড়া। এই মামলায় কোনো সাক্ষীই এমন কোনো তথ্য প্রমাণ দেন নাই যে, আমি এই ট্রাস্টের সাথে জড়িত ছিলাম।

অথচ, সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ একজন অনুসন্ধানকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে কোনো দালিলিক প্রমাণ ছাড়া আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে এইরূপ মনগড়া সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমি আপনার কাছে সবিনয়ে আবারও বলতে চাই যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন বা পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই। হারুন-অর-রশীদ আমার বিরুদ্ধে এই সংক্রান্ত কোনো একটি দালিলিক প্রমাণও পান নাই কিংবা আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। অথচ তিনি আমার বিরুদ্ধে একের পর এক বিষোদগার করে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। ফলে আমার বিরুদ্ধে তার প্রদত্ত অসত্য সাক্ষ্য আইনগতভাবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নাই বলে আমি দাবি করছি।

মাননীয় আদালত,
এই সাক্ষী জবানবন্দিতে বলেছেন, আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নাকি একটি অস্তিত্ববিহীন ট্রাস্ট গঠন করে অন্যান্যের সহযোগিতায় অসৎ উদ্দেশ্যে পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্ট অপারেশনের মাধ্যমে উক্ত হিসাব থেকে সম্পূর্ণ টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাতের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। সাক্ষীর এই বক্তব্য অসত্য, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আরো বলেছেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন বা অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে তার নিজেস্ব পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামীয় তহবিল গঠন করেন।”

তিনি আরো বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অন্যান্যদের সহযোগিতায় ও যোগসাজসে অবৈধভাবে নিজে লাভবান হওয়ার ও অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে আত্মসাৎ করেন বা আত্মসাতের কাজে সহযোগিতা করেন।” সাক্ষীর এই বক্তব্যসমূহ সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

তার এইসব বক্তব্য ও গুরুতর অভিযোগ প্রমাণের জন্য তিনি দালিলিক কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও আদালতে দাখিল করতে পারেননি। সাক্ষ্য আইনের বিধানমতে এরূপ সাক্ষ্য সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে অপরের আঙ্গুলি হেলনে আমার বিরুদ্ধে কাল্পনিক মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে বা নিজে নিরপেক্ষ থাকলে এইরূপ অনুমান নির্ভর সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ ছিল না। কারণ, আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করিনি।

কাজেই আমার সৎ কিংবা অসৎ কোনো উদ্দেশ্য থাকার সুযোগ নেই। আমি এই ট্রাস্টের তহবিল সংগ্রহ, বন্টন এবং কোনো রকম ব্যাংকিং লেনদেনের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত ছিলাম না। কাজেই এর মাধ্যমে নিজে লাভবান হওয়ার বা অন্য কাউকে লাভবান করারও কোনো প্রশ্ন উঠতে পারেনা।

মাননীয় আদালত,
বিএনপি সরকার একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ প্রণয়ন করে। আপনি জানেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ৩(২) ধারার বিধানমতে কমিশন হবে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন। অথচ এই মামলায় কমিশনের কর্মকর্তা হিসাবে সাক্ষী হারুন-অর-রশিদ কমিশনের সেই স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে পারেননি। আমি আরো উল্লেখ করতে চাই যে, এই স্বাক্ষী হারুন-অর রশিদকে কমিমনের সেটআপে অন্তভুক্ত না করায় পরবর্তীতে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা এবং স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য তাকে আবার কমিশনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

প্রথম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ ও অভিযোগ পান নাই এবং আমাকে অভিযোগের তালিকাভুক্ত করে নাই এবং একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট হিসাবে বর্ণনা করেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের তালিকাভুক্ত কোনো অপরাধ হয়নি বলে সুস্পষ্ট মতামত দিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অথচ সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩(২) ধারায় উল্লেখিত নিরপেক্ষতার বিধান লঙ্ঘণ করে কোনোরূপ দালিলিক প্রমান ছাড়া মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে আমার বিরুদ্ধে একটি হয়রানিমূলক ও মিথ্যা রিপোর্ট দাখিল করেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় তিনি আপনার আদালতেও কোন তথ্য-প্রমাণ বা দালিলিক প্রমানাদি ছাড়া আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

চাকুরিতে পদোন্নতি ও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবার অসৎ উদ্দেশ্যে তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক মহলের ইচ্ছা ও নির্দেশ অনুযায়ীই যে এইসব করেছেন তা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়। আমি এই মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি এবং আপনার আদালতে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।

মাননীয় আদালত,
পি.ডব্লিউ-২ এস.এম.গাফ্ফারুল আলম দাবি করেছেন যে, এজাহারকারী জনাব হারুন-অর-রশীদ, উপ-সহকারী পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা এর লিখিত এজাহার পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে এই মামলার এজাহার রুজু করেন। এজাহার ফরমে এ মামলার ঘটনাস্থল প্রাইম ব্যাংক, নিউ ইস্কাটন শাখা, রমনা, ঢাকা মর্মে উল্লেখ রয়েছে। ঘটনাস্থল প্রাইম ব্যাংক, নিউ ইস্কাটন শাখা, রমনা,ঢাকা এর সাথে আমার কোনো ধরণের কোনো সম্পর্ক নাই বা কখনো ছিলো না।

সাক্ষী পি.ডব্লিউ-২ এস.এম. গাফ্ফারুল আলম দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের কোনো ফরোয়াডিং লেটার বা অনুমোদনপত্র ছাড়া এজাহার রুজু করেছেন। কমিশনের অনুমোদন ছাড়া এজাহার রুজু করার আইনগত এখতিয়ার এই সাক্ষীর ছিল না। ফলে এই সাক্ষীর বক্তব্য আইনগতভাবে বিবেচনা করার সুযোগ আছে কিনা আপনি তা বিবেচনা করে দেখবেন। এই সাক্ষী আমার নাম উচ্চারণ করে বা আমাকে সম্পৃক্ত করে কিছুই বলেন নাই।

তাছাড়া এই সাক্ষী জবানবন্দিতে যা বলেছেন, সে সম্পর্কে আমি বলতে চাই যে, তিনি আদালতে যে সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন এই সব বিষয়ের সাথে আমার কোনোরূপ সম্পর্ক নাই। এই সাক্ষীর সাক্ষ্যে বর্ণিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, ট্রাস্টের কথিত এসটিডি হিসাব নং-৭, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ডিড অব ট্রাস্ট, এসটিডি হিসাব নম্বর-এর স্বাক্ষর কার্ড বা স্বাক্ষর, গুলশান নিউ নর্থ শাখা সোনালী ব্যাংক-এর এসটিডি হিসাব নং ৭-এর চেক নং- ৪৮৮২৪০৭, ৪৮৮২৪০২, ৪৮৮২৪০৬, ৪৮৮২৪০৪, ৪৮৮২৪০৩ ইত্যাদি চেকে আমার কোনো স্বাক্ষর নাই বা আমার এই সব চেকের সাথে বা লেনদেনের সাথে কোনো সম্পর্ক নাই। তাছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের হিসাব বিবরণী বা এই সংক্রান্ত কোনো কর্মকান্ডের সাথে আমি খালেদা জিয়ার কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নাই কিংবা কখনো ছিল না।

মাননীয় আদালত,
ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থাসহ অন্যবিধ বিচার ব্যবস্থায় মামলার ফলাফল সম্পূর্ণরূপে সাক্ষ্য নির্ভর। বর্তমান মামলায় সাক্ষ্য আইনের কোনো প্রতিফলন নেই বলে স্পষ্টত দৃশ্যমান হয়। কেবলমাত্র দুদকের একজন অনুসন্ধানকারী এবং পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্তৃক, দাখিলকৃত চার্জশীটের উপর নির্ভর করে কোনো বিচারে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো নিয়ম নেই আপনি এটা নিশ্চয় অনুধাবন করবেন।

আমার বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, আমি নাকি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট জনিত অপরাধ করেছি। কিন্তু আইন অনুযায়ী সাক্ষ্য-প্রমাণে এই অভিযোগ কোনো ভাবেই প্রমাণিত হয়নি।

মামলাটির সাক্ষ্যে একমাত্র পি.ডব্লিউ ১ হারুন-অর-রশীদ যিনি পি.ডব্লিউ ৩১ তদন্তকারী হিসেবে সাক্ষী দিয়েছেন তিনি ছাড়া আর কোনো সাক্ষীর বরাতে আমার বিরুদ্ধে তথাকথিত ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা মাননীয় আদালতে কেউ বলেনি। এই অতি উৎসাহী সাক্ষী পি.ডব্লিউ ১ হিসেবে সম্পূর্ণ অসত্য বিবরণ দিয়ে অসত্য বক্তব্য প্রদান করে তার সাক্ষ্যে বলেছেন, “বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সোনালী ব্যাংক রমনা কর্পোটের শাখায় একাউন্ট খোলেন”। এই সাক্ষী একইভাবে এই মামলার যাবতীয় অভিযোগ সরাসরি আমার বিরুদ্ধে করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আমি এতিম তহবিল পরিচালানার জন্য সরকারের নীতিমালা তৈরী করি নাই।

তিনি সম্পূর্ণ অসত্য অভিযোগ উত্থাপন করে আরো বলেন, আমি ট্রাস্ট গঠন করি, আমি ট্রাস্ট রেজিষ্ট্রি করি, আমি সেটেলর নিয়োগ করি, আমি প্রাপ্ত অর্থ বিলি বন্টন করি, এমনকি আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অনুকুলে টাকা প্রদান করি এবং আমার দ্বারাই প্রাপ্ত টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। এর প্রতিটা অভিযোগ অসত্য এবং অপ্রমাণিত

এই সাক্ষী এমনও দাবি করেছেন যে, আমি প্রাপ্ত অর্থের হিসাব নিকাশের কোনো ব্যবস্থা করি নাই অথবা কোনো প্রতিষ্ঠিত অডিট ফার্মকে দিয়ে অডিট করা হয়নি। এরূপ বর্ণনাতে এই সাক্ষী দাবি করেছেন যে, আমি প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের টাকা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মসাতের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি।যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমার কোনোভাবেই কখনো কোনো সম্পর্ক ছিলো না সেই বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই উক্ত সাক্ষী এইসব বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

মাননীয় আদালত,
এই সাক্ষী অকপটে স্বীকার করেন যে, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল পূর্বেও ছিল না এবং পরবর্তীতেও এর কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয় নি।

মাননীয় আদালত,
এই সাক্ষীকে জেরা করা হলে তিনি স্বীকার করেছেন যে, তিনি অনুসন্ধানকারী হিসেবে নিয়োগের পূর্বে পি.ডব্লিউ-৩২ মো: নুর আহাম্মদ বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট এবং তার অনুসন্ধানে তিনি আমার বিরুদ্ধে কোনো কিছু পাননি। তিনি আমাকে মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মতো কিছুই পাননি। পি.ডব্লিউ ৩২ নুর আহাম্মদ তার সাক্ষ্যে বলেছেন, দুদক বিধিমালা ২০০৭-এর ৭(৩) বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান তদারকির জন্য একজন উপ-পরিচালক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী তার অনুসন্ধান তদারকির জন্য দুদক প্রধান কার্যালয়ে একজন পরিচালক মো: লোকমান হাকিম দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।

জনাব নুর আহাম্মদ স্বীকার করেন যে, তার অনুসন্ধান তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত পরিচালক জনাব মো: লোকমান হাকিম তার দৈনন্দিন অনুসন্ধান কাজ তদারকি করেছেন এবং ১১/৬/২০০৮ ইং তারিখে তার অনুসন্ধান রিপোর্ট দাখিল পর্যন্ত তিনি তদারকি করেছেন। এই সাক্ষী অর্থাৎ পি.ডব্লিউ ৩২ আরো বলেন, অনুসন্ধানকালে তিনি যে সকল ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তাদের সকলের জবানবন্দি তিনি রেকর্ড করেছেন এবং তা সিডিতে আছে।

এই সাক্ষী স্বীকার করেছেন যে, পি.ডব্লিউ ১৪ জগলুল পাশা, পি.ডব্লিউ-৯ মাজেদ আলী, পি.ডব্লিউ ১০ আলফাসানী, পি.ডব্লিউ-১১ মো: মোখলেছুর রহমান, পি.ডব্লিউ-১৩ মহিউদ্দিন আহাম্মদ, পি.ডব্লিউ-১৯ মো: মোস্তফা কামাল মজুমদার, পি.ডব্লিউ-২০ মো: তৌহিদুর রহমান তার নিকট কোনো জবানবন্দি দেননি। অথচ এই সব সাক্ষীই মাননীয় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বা তাদেরকে পি.ডব্লিউ-৩১ এর দ্বারা সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। এই রূপ বিতর্কিত সাক্ষ্যের দ্বারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।

এই পি.ডব্লিউ-৩২ তার সাক্ষ্যে বলেছেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলার অনুসন্ধান কাজ করা হয়। তবে অভিযোগের তারিখ তার মনে নাই। এই সাক্ষী স্বীকার করেন যে, তার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযুক্তদের নামের তালিকায় আমার নাম নেই। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে অভিযোগের বিবরণীতেও আমার নাম নেই। এই সাক্ষী আরো বলেন যে, প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এতিম তহবিল পরিচালনা সংক্রান্ত নথি বা নথির কোনো কাগজপত্র তাকে সরবরাহ করা হয় নি। এই সাক্ষী স্বীকার করেছেন যে, তিনি কারাগারে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সার্বিক বিষয়ে জানতেন। এটা তার রিপোর্টেও আছে।

এই সাক্ষী তার রিপোর্টে লিখেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কেউ পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে গন্য নন। এই সাক্ষী তার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলেছেন যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট। এই সাক্ষী বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল কোন্ সনে বা কত তারিখে বা কোন্ প্রধানমন্ত্রীর আমলে খোলা হয় বা প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে কে কত টাকা অনুদান দিয়েছে বা কোথা থেকে অনুদান এসেছে বা ঐ এতিম তহবিলের ফান্ডে স্থিতির পরিমাণ কত সেই সংক্রান্ত তথ্যের জন্য তার অনুসন্ধানকালে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ডকুমেন্ট, রেকর্ডপত্র, কাগজপত্র চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে তিনি রিকুইজিশন দিয়েছিলেন।

এই সাক্ষী এও বলেন যে, শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে ট্রাস্ট গঠনের জন্য কুয়েতের আমির একটি অনুদান দিয়েছেন বলে তারেক রহমান তার বক্তব্যে বলেছেন এবং তিনি সে কথা তার রিপোর্টে উল্লেখও করেছেন। একইরূপ বক্তব্য মোমিনুর রহমানও দেন এবং তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মো: মোস্তাফিজুর রহমান এই ফান্ড আনেন।

মাননীয় আদালত,
একজন তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এরুপ দাবির সমর্থনে ফৌজদারী বিচার-ব্যবস্থায় কোনো নজির পাওয়া যাবেনা।
একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো ঘটনার সাক্ষী হতে পারেনা। বরং তদন্ত কর্মকর্তার উত্থাপিত অভিযোগের সমর্থনে বিভিন্ন সাক্ষী যে বক্তব্য দিয়ে থাকে সেটাই সাক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর কথিত এতিম তহবিলের জন্য বিদেশী অনুদান সংগ্রহ করা অথবা সেই অনুদানের অর্থ দিয়ে একাউন্ট খোলা অথবা সেই একাউন্ট পরিচালনা করা বা সেই একাউন্ট হতে টাকা উত্তোলন করার বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোনো বর্ণনা অন্য কোনো সাক্ষীর মাধ্যমে মাননীয় আদালতে আসেনি। অনুসন্ধান পর্যায়ে অনুসন্ধান রিপোর্ট অনুযায়ী যে তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে তাতে নিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে যে, কুয়েতের আমীর এককালীন অনুদানটির রেমিটেন্স প্রদান করেছিলেন।

অথচ সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ কোষাগারে ঐ রেমিটেন্স প্রাপ্তির কোনো উল্লেখ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে নেই। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রেমিটেন্স কুয়েত হতে প্রেরণের কোনো এডভাইস বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরিত হয়নি। অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য খন্ডন করে রেমিটেন্স কুয়েত ছাড়া ভিন্ন কোনো উৎস হতে প্রদান করার কোনো তথ্য অনুসন্ধান পর্যায়ে অথবা তদন্ত পর্যায়ে প্রসিকিউশন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

কুয়েত থেকে এরূপ অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে ঢাকাস্থ কুয়েত এ্যাম্বাসি হতে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে, যার নোটারাইজড সার্টিফিকেট বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত সেই ডকুমেন্ট নথিভুক্ত করে রেখেছেন, তবে আশ্বাস দিয়েছেন যে, এটি বিবেচনা করা হবে। পি.ডব্লিউ ২৬ খন্দকার আব্দুস সাত্তার একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মহাপরিচালক।

তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। জনাব আব্দুস সাত্তার তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন অর রশিদের একটি পত্রের বরাতে জরুরী ভিত্তিতে এ রেমিটেন্স সম্পর্কে প্রদর্শনী-১৮, তারিখ ১৬/০৬/২০০৮-এর পত্র মারফত বাংলাদেশ দুতাবাস সৌদি আরবকে প্রদর্শনী-১৯ মারফত তদন্ত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তথ্য প্রদানের জন্য বলেছিলেন। কিন্তু এ তথ্য প্রাপ্তির প্রয়াস নিস্ফল হয়েছে। তার সাক্ষ্যে তিনি বলেছেন যে, যাচিত তথ্যাবলি সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে কোনো কিছুই বলা যাচ্ছেনা।

এই সাক্ষী কর্তৃক দাখিলকৃত বিভিন্ন পত্র বিজ্ঞ আদালতে নথিভুক্ত করা হলেও এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হবে যে, দুদকের পক্ষ থেকে অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখিত রেমিটেন্সের সূত্র হচ্ছেন কুয়েতের আমীর। অথচ সেখানে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এটা অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের দুষ্ট মনের পরিচয় বহন করে। পি.ডব্লিউ ২৬ আরো বলেছেন যে, রেমিটেন্সের ডিডি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোনো পত্র যোগাযোগ করা হয় নি।

মাননীয় আদালত,
রেমিটেন্স ও ডিডি সম্পর্কে পি.ডব্লিউ ১২ মনজুর হোসেন সোনালী ব্যাংক, রমনা কর্পোরেট ব্রাঞ্চ-এর কিছু তথ্য বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন এবং হিসাব নং-৫৪১৬ হিসাবের বরাত দিয়ে কিছু বক্তব্য প্রদান করেন। গত ২২/০৭/২০০৮ তারিখে দেওয়া তার সাক্ষের বর্ণনামতে তিনি বলেন, হিসাবটি খোলেন ড: কামাল সিদ্দিকী, তদানিন্তন ভারপ্রাপ্ত সচিব এবং তিনিই স্বাক্ষরকার্ডে স্বাক্ষর করেন।

এই সাক্ষী জেরায় বলেন যে, হিসাব নং -৫৪১৬-এর একাউন্ট ওপেনিং ফরম, সিগনেচার কার্ড যে কর্মকর্তার সময়ে হয়েছে বা প্রস্তুত করেছেন উক্ত কর্মকর্তার সাথে তিনি কোনোদিন চাকুরি করেন নাই এবং একাউন্ট ওপেনিং ফরম ও সিগনেচার কার্ড কে কোন্ সময় প্রস্তুত করেছেন বা স্বাক্ষর করেছেন সে সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত কোনো জ্ঞান নেই এবং এগুলির লেখা তার সামনে হয় নাই।

এই সাক্ষী অকপটে স্বীকার করেছেন যে, জব্দকৃত কাগজের কোথায়ও আমার অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার নাম বা স্বাক্ষর নাই। এই সাক্ষী স্বীকার করেন যে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কোনো অনুমতিপত্র বা স্মারকপত্র একাউন্ট ওপেনিং ফরমের সাথে নাই। এই সাক্ষী অকপটে স্বীকার করেন যে, ড: কামাল সিদ্দীকীর হাতের লেখা ও স্বাক্ষর সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত জ্ঞান বা ধারণা নেই।

এই সাক্ষী আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা যেখানে থাকে সেখানে সোনালী ব্যাংক ট্রেজারী শাখার ভুমিকা পালন করে না। এই সাক্ষী আরও বলেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকা শহরে আছে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কোনো রেমিটেন্স-এর বিষয়ে ঢাকা শহরে বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়িত্ব পালন করে থাকে। এই সাক্ষী আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এতিম তহবিল সংশ্লিষ্ট হিসাবের স্থিতি, লেনদেন ও রেমিটেন্স ইত্যাদি বিষয়ে তার কর্মকালে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কোনো পত্র, স্মারকপত্র বা অডিট আপত্তি আসেনি। এই সাক্ষী স্বীকার করেন যে, চৎরসব গরহরংঃবৎ ঙৎঢ়যধহধমব ঋঁহফ লেখাগুলো কার তা তার জানা নাই। এই সাক্ষী রেমিটেন্স সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দুদককে দিতে পারেননি।

মাননীয় আদালত,
পি.ডব্লিউ ১৩ মহিউদ্দিন আহম্মদ, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, রমনা কর্পোরেট ব্রাঞ্চের একজন প্রিন্সিপাল অফিসার হিসাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই সাক্ষী জেরায় স্বীকার করেছেন যে, ব্যাংকের হিসাব খোলার ফরম ও স্বাক্ষর কার্ড সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নাই। এমনকি রেমিটেন্স সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট না পাওয়ায় তিনি তা দিতে পারেননি।

মাননীয় আদালত,
এই সাক্ষী স্বীকার করেন যে, জব্দকৃত আলামত সমূহে আমার অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার নামের উল্লেখ নাই। এই সাক্ষী স্বীকার করেন যে, বিদেশ থেকে কোনো রেমিটেন্স আসলে তা রেকর্ড করে কাগজপত্রাদি সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে রেমিটেন্স সংক্রান্ত কোনো তথ্যাদি বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য হিসাবে আসে নাই।

মাননীয় আদালত,
আমার সম্পর্কে পি.ডব্লিউ ১ হারুন অর রশীদ দাবি করেছেন, আমি সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট খুলি এবং অপারেট করি। কিন্তু এ জাতীয় কেনো তথ্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর হতে বা সোনালী ব্যাংকের রেকর্ডপত্র হতে উপস্থাপন করতে পারেননি। তার এরুপ বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। পি.ডব্লিউ ১ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমি সোনালী ব্যাংক রমনা শাখা হতে একাউন্টের টাকা ট্রান্সফার করে সোনালী ব্যাংক গুলশান, নিউ নর্থ শাখায় স্থানান্তর করি।

পি.ডব্লিউ ৩ সফিউদ্দিন মিঞা ও পি.ডব্লিউ ৫ হারুনুর রশিদ উভয়েই সোনালী ব্যাংক গুলশান নর্থ শাখা এর কর্মকর্তা হিসাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের সাক্ষ্যে এই শাখায় ০৯/১০/১৯৯৩ এ এসটিডি হিসাবে নং ৭-এর একাউন্ট ওপেনিং ফরম এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-এর ডিড অব ট্রাস্টের ফটোকপি, স্বাক্ষরকার্ড দাখিল করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন। তাদের সাক্ষ্যে তারা একথা বলেন নাই যে, আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের একাউন্ট খুলি বা এ একাউন্টগুলির সিগনেচার কার্ডে আমার স্বাক্ষর ছিল বা আমি অপারেট করি।

মাননীয় আদালত,
আমার বিরুদ্ধে উপস্থাপিত এইরূপ সাক্ষ্য হতে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আমি বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আনার বিষয়ে কিংবা সোনালী ব্যাংক রমনা কর্পোরেট শাখায় একাউন্ট খোলার বিষয়ে বা এই একাউন্ট ট্রান্সফার করে সোনালী ব্যাংক, গুলশান নিউ নর্থ শাখায় স্থানান্তরের সঙ্গে মোটেই সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে কোনো পর্যায়েই একাউন্টটির খোলা অথবা অপারেট করার কোনো সাক্ষ্য নেই।

মাননীয় আদালত,
এ জাতীয় সাক্ষ্যের দ্বারা ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্টের অথবা ইনট্রাস্টমেন্টের দায়বদ্ধতা আমার উপরে বর্তায় না।
মাননীয় আদালত,
আদালতে দাখিলকৃত দুটি অনুসন্ধান রিপোর্টের বরাতে বলা হয়েছে যে, ৫/৯/১৯৯৩ ইংরেজি তারিখে একই দিনে জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি হয় এবং সমভাবে রেমিটেন্সের টাকা উক্ত দুটি ট্রাস্টে বন্টন হয়। এইরূপ কার্য্যাদি তদানন্তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ,এস,এম মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে এবং নির্দেশে সম্পন্ন হয় যা তথ্যগতভাবে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মামলায় একটিকে বাদ দিয়ে অপরটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হীন-উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।সোনালী ব্যাংকের চেক নং-৮৪৩১১০২ ও চেক নং ৮৪৩১১০৩ ইস্যু করে একই সময়ে বন্টন কাজ সম্পন্ন হয়। আমি চেক দুটির কোনোটিরই স্বাক্ষরকারী নই। রেমিটেন্স প্রাপ্তির উদ্যোক্তা তদানিন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের সেটলার হন। ওই ট্রাস্টে প্রদত্ত টাকার জন্য কারও কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে এই মামলা রুজু করা হয় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য।

মাননীয় আদালত,
আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ বানোয়াট ও অপ্রমাণিত। আমি দৃঢ়ভাবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন থাকার সময়ে কোনোভাবে বা কোনো মাধ্যমেই আমার পদের অপব্যবহার করিনি। আমার পদের অন্যায় প্রভাব খাটাইনি। আমার পারিবারিক বাসস্থান, ৬ মইনুল রোড, এখানে আমার পরিবারের সকলেই থাকতেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নয়। আমি আমার পদে থাকার সময় আমার অধীনস্থ কারো মাধ্যমে আমার পদের প্রভাব খাটাইনি।

আমি কাউকে কোনো অন্যায় আদেশ প্রদান করিনি। আমি আমার পদে আসীন থাকার সময় কারো কোনো অর্থের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হইনি কিংবা কাউকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করিনি। আমি আমার পদে আসীন থেকে নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি এবং কোনো আইনভঙ্গ ও অপরাধ করিনি।

আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং এ মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার যোগ্য।আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতটির বাংলা তরজমার কথা উল্লেখ করে। “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও।

কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাক্সক্ষী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কেই অবগত।” মাননীয় আদালত আপনাকে ধন্যবাদ।

আল্লাহ হাফেজ

বার্তা প্রেরক – মারুফ কামাল খান, প্রেস সচিব

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin