টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
গতকাল রাতেই জেনে গিয়েছিলেন ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশ দলে আসছে তিনটি পরিবর্তন। দল থেকে বাদ পড়ছেন ওপেনার এনামুল বিজয়, অল রাউণদার নাসির হোসেন ও পেস বোলার আবুল হোসেন রাজু। তাদের পরিবর্তে দলে আসছেন মোহাম্মদ মিঠুন, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাইফউদ্দিন। শেতাই সত্য। আজ ফাইনালে ওই দল মিঠুন, মিরাজ ও সাইফউদ্দিনকে নিয়েই নামছে বাংলাদেশ।
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
শুরুটা ভালো হওয়া দরকার : মাশরাফি
সব কিছু ঠিকভাবেই চলছিল। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে সবার আগে ফাইনালে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। মাঝে একটা ধাক্কা, বড় দুশ্চিন্তা মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে। ফাইনালের আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে লজ্জার হারের পর এখন টাইগার সমর্থকদের মনে উৎকন্ঠা, আরও একবার ফাইনালে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হবে না তো?
আর যেন এমন না হয়, টাইগার সমর্থকদের মতো প্রত্যাশা মাশরাফি বিন মর্তুজারও। বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মনে করছেন, ফাইনালে না পারার আক্ষেপ ঘুচাতে হলে এবার শুরুটা অবশ্যই ভালো করতে হবে। তবেই আস্তে আস্তে হাতের মুঠোয় চলে আসবে ম্যাচ।
সর্বশেষ ম্যাচে এই শুরুটাই খারাপ ছিল বাংলাদেশের। ব্যাটিং কিংবা বোলিং; কোনোটিতেই ভালো শুরু করতে পারেনি টাইগাররা। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২৪ ওভারেই ৮২ রানে অলআউট, এরপর বোলারদের ব্যর্থতায় ১২ ওভারের মধ্যেই ১০ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া শ্রীলঙ্কার।
মাশরাফির এই ভালো শুরুটা যদি ব্যাটসম্যানদের দিক থেকে হয়, তবে অবশ্যই তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসানের ব্যাট জ্বলে উঠতে হবে। সেটা সম্ভব হলে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু দেখছেন না তিনি।
বাংলাদেশ অধিনায়ক দলের টপ অর্ডারের প্রতি প্রত্যাশা নিয়ে বলেন, ‘এটা সত্যি কথা, সাকিব আর তামিম শুরুতে আউট হয়ে গেলে একটা চাপ হয়ে যায়। তামিমকে বলে দেওয়া হয়েছে, সে যেন টোটাল খেলা কন্ট্রোল করে। সাকিবও অবশ্যই আমাদের বেস্ট পারফর্মার। এতদিন সে পাঁচে খেলেছে, এখন তিনেও বেশ ভালো ব্যাট করছে। মুশফিকের দিকে তাকান, সেও খারাপ অবস্থায় আছে তা না। মিডল অর্ডার কলাপ্স করেছে দুই দিন। কালকে এরকম হলে বা এর চেয়ে বাজে পরিস্থিতি আসলে তারা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, এই চিন্তা অন্তত আমার মধ্যে নেই।’
আগের ম্যাচের ভুল ত্রুটিগুলো শুধরেই ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে নামতে চান মাশরাফি। এজন্য শুরুটাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তিনি, ‘শুরুটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিং বা বোলিং যাই করি না কেন, শুরুতে খেলাটা ধরতে পারলে কিছুটা হলেও চাপ ধীরে ধীরে কমে আসে।’
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
ফাইনালের চাপ এর আগে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। এবারও তেমন চাপ থাকছে কি না? মাশরাফির উত্তর, ‘সব কিছু নির্ভর করছে কেমন শুরু করব সেটার উপর। কালকে (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) প্রথম ১০ ওভারেই কিন্তু খেলা ওদের দিকে চলে গিয়েছিল, যেখান থেকে আমরা ফিরে আসতে পারিনি। এমন পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, বুদ্ধি করে যেন খেলতে পারি। এই পরিস্থিতিগুলো সামলানোই কঠিন হবে। যারা স্নায়ু ধরে রাখতে পারবে, তারাই এগিয়ে থাকবে।’
টাইগার সমর্থকদের আশা থাকবে, মাশরাফিরাই যেন এই স্নায়ুর যুদ্ধে জয়ী হন। ট্রফি জিততে না পারার আক্ষেপটা তবেই না ঘুচবে!
প্রথম শিরোপার স্বাদ নিতে চান মাশরাফি
দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ছাড়া কখনই বাংলাদেশের কোনো টুর্নামেন্ট জেতা হয়নি, এমনকি ত্রিদেশীয় সিরিজও। তিন দলের সিরিজের ফাইনাল খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও জম্পেশ প্রস্তুতি নিয়ে এবারের ত্রিদেশীয় সিরিজে মাঠে নামা বাংলাদেশের লক্ষ্য একটাই- শিরোপা। আর সেই শিরোপার লড়াইয়ে শনিবার একসময়ের বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ‘হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর বারোটায়।
প্রথমবারের মতোই শিরোপার স্বাদ নিতে টাইগাররা কতটা মরিয়া, সেটি স্পষ্ট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কথায়ই। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেন, ‘ফাইনাল ম্যাচে জেতার জন্য আমরা সবাই উদগ্রীব হয়ে আছি। এটা সত্যি কথা। যদি হতে পারি, তবে প্রথমবারের মতো হবে।’
তবে জেতার জন্য অধিক চিন্তা করে নিজেদের উপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে চান না মাশরাফি। তার উপর বৃহস্পতিবার একই প্রতিপক্ষের কাছে হারায় বাংলাদেশের মনোবল এখন একটু হলেও নড়বড়ে। তিনি বলেন, ‘আসলে হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে থাকলে আমার কাছে মনে হয় বেশি চাপ এসে দাঁড়াবে। বিশেষ করে ফাইনাল ম্যাচে একটা চাপ থাকেই। যদি বৃহস্পতিবারের ম্যাচটি জিততাম তাও থাকতো। আমার কাছে মনে হয় গতকাল হারাতে চাপটা আরও কমে যাওয়ার কথা। চাপ সব সময়ই একটা থাকে যা থাকবেই এবং জয়টা আমরা অবশ্যই চাই।’
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্টের ট্রফি জিতে সমর্থকদের আনন্দে ভাসাতে চান মাশরাফি। সেজন্য ঠিকভাবে করতে চান মাঠে নিজেদের কাজটুকু, ‘প্রথমবারের মতো আমরা যদি জিততে পারি, এটা অনেক আনন্দের হবে। সব কিছু নির্ভর করছে আসলে কালকে আমরা কেমন খেলবো, কেমন শুরু করবো ম্যাচটা। যেহেতু ওয়ানডে সেহেতু ৩,৪,৫টা ওভারেই খেলার পট পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। সো আমাদের ওই দিকগুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে।’
শিরোপার লড়াইয়ে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা
ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামবে স্বাগতিক বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। প্রায় দশ বছর আগেও বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে লঙ্কানদের কাছে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার টাইগারদের সামনে সুযোগ সেই দুঃখের স্মৃতি মুছে দেওয়ার।
শনিবার দুপুর বারোটায় মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল। চার ম্যাচের প্রথম তিন ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচেই পেয়েছে বোনাস পয়েন্ট। দাপুটে জয় পেয়ে যেন উড়ছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে টাইগাররা হারায় ৮ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেয় টাইগাররা। তৃতীয় ম্যাচে ২১৬ রানের স্বল্প পুঁজি নিয়েও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯১ রানে ম্যাচ জিতে মাশরাফিরা। কিন্তু শেষ ম্যাচে যেন উড়ন্ত বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে আনে শ্রীলঙ্কা। মাত্র ৮২ রান করে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে দশ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৬৩ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে ১২ রানে হেরে ব্যাকফুটে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। তবে পরের দুই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় চান্দিমালরা। জিম্বাবুয়েকে পাঁচ উইকেটে এবং স্বাগতিক বাংলাদেশকে দশ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা।
ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল। ত্রিদেশীয় সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ৪ ইনিংসে করেছেন ২৪৯ রান। ছন্দে আছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স তার। চার ম্যাচে উইকেট নয়টি, রান ১৬৩।
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
তামিম ইকবাল দারুণ ছন্দে থাকলেও ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী এনামুল হক বিজয় আটকে আছেন ব্যর্থতার বৃত্তে। ফাইনালের স্কোয়াডে ইমরুল কায়েসের অন্তর্ভুক্তি ইঙ্গিত দেয় তামিমের সাথে ইমরুলের ওপেনিং জুটির। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা জানিয়েছেন ইমরুল খেলবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়।
শ্রীলঙ্কায় দুর্দান্ত ফর্মে আছেন অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। ১১ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ব্যাট হাতে চার ম্যাচে করেছেন ১৩২ রান। বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিবেন সুরাঙ্গা লাকমল। তার কাছেই শেষ ম্যাচে কুপোকাত বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ : তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়/ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন/মেহেদি হাসান মিরাজ, আবুল হাসান রাজু, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন।
শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য একাদশ : দানুশকা গুনাথিলাকা, উপুল থারাঙ্গা, কুশল মেন্ডিস, নিরোশান ডিকওয়েলা, দীনেশ চান্দিমাল, আসেলা গুনারাত্নে, থিসারা পেরেরা, আকিলা ধনঞ্জয়া, সুরাঙ্গা লাকমল, দুশমন্থ চামিরা, লক্ষন সান্দাকান।
পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন চায় শ্রীলঙ্কা
বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের আগে পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন ঘটাতে চায় ফাইনালে মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ দলের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। শুক্রবার ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান লঙ্কান দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমাল।
দুই দলের সর্বশেষ দেখায় বৃহস্পতিবার জয়ী হয়েছে শ্রীলঙ্কাই। এটি দলটিকে যোগাচ্ছে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। তবে এই আত্মবিশ্বাস নয়, বরং ভালো খেলেই ফাইনাল জিততে চায় দলটি।
চান্দিমাল বলেন, ‘এভাবে আমরা ভাবছি না। তবে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খুবই ভালো একটি দল। কিছু ভালো প্লেয়ার আছে। এখনও তারা ভালো সাইড। তবে আমাদের যেটা করতে হবে ম্যাচের পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন করে ম্যাচ জিততে হবে।’
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটের উপর গুরুত্বারোপ করে লঙ্কান অধিনায়ক আরও বলেন, ‘আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণভাবে খেলতে হবে। তাহলেই কেবল ভালো ফলাফল সম্ভব। কালকের ম্যাচের জন্য আমাদের বিশেষ কিছু পরিকল্পনা আছে। আমরা যদি তা প্রয়োগ করতে পারি তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া কঠিন হবে না।’
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
ফাইনাল নিশ্চিত করা জয়টি শ্রীলঙ্কাকে এনে দিয়েছে বাড়তি জ্বালানী ব্যবহারের সুযোগ। তবে সেই তুষ্টিতে ভোগে চাপ নিতে রাজি নন চান্দিমাল ও তার সতীর্থরা। তিনি জানিয়েছেন, ফাইনালে যেতেই হবে- এমন চাপ নিয়ে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারানোর ম্যাচটি খেলেননি তারা, ‘ফাইনালের আগে জয়টা সত্যিই অসাধারণ ছিল। আমরা আসলে ফাইনালে খেলার বিষয়টি মাথায় রেখে এদিন খেলিনি। আমরা দল হিসেবে খেলেছি। আমি শেষ সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেছি যে আমরা একটি ম্যাচকে মাথায় রেখে খেলবো। তাই করেছি।’
ফাইনালেও চাপমুক্ত থেকে খেলার প্রত্যাশা চান্দিমালের। ম্যাচ নিয়ে দলের পরিকল্পনার সঠিক প্রয়োগ ঘটিয়েই শিরোপার স্বাদ নিতে চায় শ্রীলঙ্কা। চান্দিমালের ভাষ্য, ‘ফাইনালেও আমরা তেমনি (বৃহস্পতিবারের মতো) খেলবো। কিছু মৌলিক বিষয় এখানে আছে। আমাদের উচিত হবে ম্যাচের পরিকল্পনায় অটুট থাকা। এবং তার সফল বাস্তবায়ন ঘটানো।’