খেলছেন না তামিম, অভিষেক চারজনের
সব জ্বল্পনা-কল্পনার অবসান হলো অবশেষে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে খেলা হচ্ছে না তামিম ইকবালের। কাঁধ এবং বাহুর মাংসপেশিতে ব্যাথা রয়েছে তামিম ইকবালের। তবুও আজ বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়েছে। যদি তামিম ইকবাল খেলতে পারেন! কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা গেলো, কাঁধের এই ব্যাথার কারণে খেলতে পারছেন না জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই ওপেনার। তার পরিবর্তে খেলানো হচ্ছে জাকির হাসানকে।
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
আজও দুপুরে ব্যাটিং অনুশীলন করতে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল; কিন্তু অনুশীলনে গিয়ে তিনি ব্যাথার জায়গায় স্বস্তি পাচ্ছিলেন না (কমফোর্ট ফিল করছিলেন না)। এ কারণেই টিম ম্যানেজমেন্ট শেষ পর্যন্ত তামিমকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও ইনজুরির কারণে টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি তামিম ইকবালের।
বিপিএলে পারলে লঙ্কানদের বিপক্ষে কেন পারবেন না মাহমুদউল্লাহ
টিম গেম অবশ্যই। তবে আকারে ছোট হবার কারণে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যক্তির প্রভাব অনেক বেশি। টেস্টের তুলনায় তো বটেই, ৫০ ওভারের ওয়ানডের চেয়েও ২০ ওভারের খেলায় দলগত পারফরমেন্সের চেয়ে ব্যত্তিগত পারফরমেন্সটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
এই ফরম্যাটে কেউ একজন ১৫ ওভার ক্রিজে থেকে দেড়শো স্ট্রাইক রেটে ৬০/৬৫ বলে শতরান করে ফেললে কিংবা চার ওভারের স্পেলে ২৫/৩০ রান দিয়ে চার উইকেট দখল করলেই ব্যাস- সেদিন আর তার দলকে ঠেকায় কে? বাংলাদেশে সেই মানের পারফরমারই বা কে?
বোদ্ধা-বিশ্লেষক হবার প্রয়োজন নেই। অবুঝ কিশোরও বলে দেবে, ‘কেন, সাকিব আল হাসান!’ সত্যিই তাই। সাকিবই হলেন একমাত্র পারফরমার, যার ৩০/৪০ বলে ১৩০-১৪০ স্ট্রাইকরেটে রান তোলার পাশাপাশি চার ওভারের কোটায় ২৫/৩০ রান দিয়ে তিন উইকেট দখলের ক্ষমতা আছে।
শ্রীলঙ্কার সাথে তো সাকিব নেই। তাহলে কাল বৃহস্পতিবার সাকিবের ভূমিকা নেবেন কে? তা নিয়ে রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা। দলে সাকিবের মত ব্যাটসম্যান কাম জেনুইন স্পিনার বা ওই ক্যাটাগরির পারফরমার আছেন মাত্র দু’জন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আফিফ হোসেন ধ্রুব।
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
এখন আফিফ হোসেন ধ্রুব বয়সে নবীন। বয়স মাত্র ১৮। এই সেদিন যুব দলের হয়ে বিশ্ব যুব ক্রিকেট খেলে এসেছেন। এমন আনকোরা যুবা সাকিবের বিকল্প হতে পারেন- এ যে অলিক চিন্তা-ভাবনা। তাহলে সাকিবের ভুমিকায় অবতীর্ণ হবেন কে? কে বল ও ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন? অনেকের মত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই হতে পারেন সেরা বিকল্প। যিনি সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে পারলে সাকিবের অভাব পুরোপুরি না হলেও অনেকটা পুরণ করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ও বিপিএলকে উপমা হিসেবে ধরা যায়। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে রিয়াদের অলরাউন্ড পারফরমেন্স তো বেশ ভাল। বিপিএলের প্রায় সব আসরেই রিয়াদের ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠার রেকর্ড আছে। তার অধিনায়কত্বে আবাহনীর প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হবার রেকর্ডও আছে।
বেশি দুর পিছনে তাকানোর দরকার নেই, এবারের বিপিএলেও মাহমুদউল্লাহ ব্যাট হাতে ১৩০.০০ স্ট্রাইকরেটে ৩১২ রান করে রান তোলায় নবম । আর তার আগেরবার ১১৮.০০ স্ট্রাইকরেটে ৩৯৬ রান করে রান সংগ্রহকারীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। এছাড়া বল হাতেও বেশ নজর কেড়েছিলেন। ওভার পিছু ৭.৪১ রান দিয়ে ১০ উইকেট দখল করেছিলেন। শুধু তাই নয়। ৪ ওভারে ৬ রান দিয়ে তিন উইকেট দখল করে ম্যাচ সেরা হবার কৃতিত্বও আছে। তার দল খুলনা টাইটান্স গত দুই বারের সেরা চারে ছিল।
এটাতো বিপিএল নয়, বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা সিরিজ। সেখানে বিপিএলের পারফরমেন্স কি ধর্তব্য? কেউ কেউ হয়ত এমন প্রশ্ন করবেন। তাদের জন্য বলা , একবার চোখ বন্ধ করে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দেখুন, মাহমুদউল্লাহ খুলনা টাইটান্সের হয়ে গত দুবার বিপিএলে কি দারুণ পারফর্ম করেছেন।
তিনি যে দলগুলোর বিপক্ষে পারফর্ম করেছেন, সেই ঢাকা ডায়নামাইটস, রংপুর রাইডার্স আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের লাইনআপ কি শ্রীলঙ্কার এবারের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের চেয়ে দূর্বল? ওই তিন দলের বোলিং কি লঙ্কান বোলিংয়ের চেয়ে কমজোরি? নিশ্চয়ই না।
আসুন এক নজরে ঢাকা ডায়নামাইটস, রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বোলিং লাইনআপটা দেখে নিই। ঢাকার বোলিং লাইনআপে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমিরের সাথে তিন সুপার-ডুপার স্পিনার- সুনিল নারিন, সাকিব আর শহিদ আফ্রিদি। সাথে বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দার রনি।
কুমিল্লায় ছিলেন হাসান আলির মত সময়ের অন্যতম সেরা পেসার। বর্তমান সময়ের এক নম্বর লেগ স্পিনার রশিদ খান আর তিন অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবি, শোয়েব মালিক ও মেহেদি হাসান আর বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন। রংপুর রাইডার্সে মাশরাফির মত বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ অধিনায়ক ও স্লো পিচে পরিক্ষীত পেসার রুবেল, রবি বোপারা, থিসারা পেরেরা, লাসিথ মালিঙ্গা আর স্পিনার নাজমুল অপু ও সোহাগ গাজী।
এখন বলুন দেখি ওই তিন দলের চেয়ে কাল লঙ্কান বোলিং লাইনআপ কি বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী? কাল যে দলটি খেলবে, তাতে থিসারা পেরেরা আর আকিলা ধনাঞ্জয়াই মূল বোলার। তাদের নাম-ডাক আর মেধা নিশ্চয়ই বিপিএলের মোহাম্মদ আমির, হাসান আলি, রশিদ খান, সুনিল নারিন আর আফ্রিদির চেয়ে বেশি নয়?
লঙ্কান লাইনআপে এমন কোন বোলার নেই যাকে খেলা কঠিন। কেউ কেউ হয়ত টেস্টের উপমা টানতে চাইবেন। বলবেন, ঢাকা টেস্টে শেষ ইনিংসে যে আকিলা ধনঞ্জয়া বাংলাদেশের ৫ উইকেট দখল করেছিলেন, সেই স্পিনার কিন্তু আছেন। তা আছেন। তবে এটাতো আর টেস্ট নয় যে ক্লোজইন ফিল্ডাররা ব্যাটসম্যানকে ঘিরে থাকবেন। একটু উনিশ-বিশ হলেই বিপদ ঘটবে। আর উইকেটও নিশ্চয়ই অমন টার্নিং ও কঠিন থাকবে না!
কাজেই এটা ভাবার কোনই কারণ নেই যে, লঙ্কান বোলিং শক্তি আহামরি শক্তিশালী। যা টাইগারদের জন্য বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহকে অধিনায়কোচিত ব্যাটিং করায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আসল কথা হলো, মাহমুদউল্লাহর সামর্থ্য আছে পুরোপুরি। কখনো ট্রফি জয়ের স্বাদ না পেলেও বিপিএলে অলরাউন্ডার রিয়াদের পারফরমেন্স সব সময় নজরকাড়া। যদিও এটা বিপিএল নয়। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সিরিজ; কিন্তু ফরমেটে এক। কাজেই জায়গামত সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটাতে পারলে মাহমুদউল্লাহর পক্ষে অবশ্যই সামনে থেকে নেতৃত দেয়া সম্ভব।
শেষটাও রাঙাতে চায় শ্রীলঙ্কা
গত বছরের শেষে যখন ভারত থেকে ফিরেছিল শ্রীলঙ্কা, সেটি ছিল হারে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত একটি দল। নতুন বছরের শুরুতে, ত্রিদেশীয় সিরিজটা ছিল নিজেদের ফিরে পাওয়ার। যেখানে কার্যত বাংলাদেশই ছিল তাদের মূল প্রতিপক্ষ। আর চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যখন শিবির বদলে লঙ্কান ক্রিকেটের কোচ হলেন তখন সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগুনে ঘি পড়ল, শ্রীলঙ্কার চেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ালেন হাথুরু!
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে হাথুরুকে ‘দেখিয়ে দেওয়া’-র যে রব উঠেছিল, সেটা গেল বুমেরাং হয়ে। ত্রিদেশীয় সিরিজের পর টেস্টেও কুপোকাত বাংলাদেশ। এরই মধ্যেই প্রায় অলক্ষ্য কাজের কাজটা করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ভারতে হারিয়ে আসা আত্মবিশ্বাস যেন ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ!
এবার আবার দেশে ফেরার পালা। ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা আর টেস্ট সিরিজ জিতে জমানো আত্মবিশ্বাসের ভাড়ারটা কানায় কানায় পূর্ণ করেই দেশে ফিরতে চায় তারা। কাল মিরপুরে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ওপেনার উপুল থারাঙ্গা বলেই ফেললেন, ‘ওয়ানডে আর টেস্টে জিতে ছন্দে আছি আমরা। আত্মবিশ্বাসটা এখন সত্যিই উঁচুতে। দলের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজ। আমরা শেষ দেড়-দুই বছর ধরে নিয়মিত ভালো করতে পারিনি। এই সিরিজের শেষটাও ভালো হবে আশা করি।’
রীতি অনুযায়ী অবশ্য ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে থাকার কথা ছিল লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমালের। কিন্তু রীতি-নীতি প্রতিনিয়ত ছুড়ে ফেলতে অভ্যস্ত যিনি, সেই হাথুরুসিংহে পাঠালেন থারাঙ্গাকে। বলার কারণ কী সেটা কদিন পেছনে ফিরলেই বোঝা যাবে।
চট্টগ্রাম টেস্টে পরপর দুদিন ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবীরাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন লঙ্কান ‘মাস্টারমাইন্ড’। কাল থারাঙ্গাকে পাঠানোর লক্ষ্য কী তা যদিও স্পষ্ট নয়, তবে বাকি থাকা টি-টোয়েন্টি সিরিজটিতে যে ট্রফি হাত ফসকানোর কোনো সুযোগই রাখতে চান না, সেটা নিশ্চিত।
তবে লঙ্কানরা যে বিষয়ে নিশ্চিত নয়, সেটি হলো সিরিজের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র ‘উইকেট’। ওয়ানডে আর টেস্টের বহুরূপী চেহারার পর আবার কী বিস্ময় নিয়ে অপেক্ষায় মিরপুরের উইকেট, কে জানে! ধন্দ কাটছে না থারাঙ্গার, ‘কাল (আজ) পর্যন্ত (পিচ নিয়ে) নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। আশা করছি ভালো উইকেটই হবে। ওয়ানডেতে আমরা ভিন্ন ভিন্ন উইকেট পেয়েছিলাম।
প্রথম দুই ম্যাচে উইকেট ভালো ছিল, কিন্তু সিরিজের শেষ দিকে উইকেটটা ধীর হয়ে আসছিল। টেস্ট ম্যাচেও আমরা বোলিং ট্র্যাক পেয়েছিলাম। কাল (আজ) একটা ভালো উইকেট পাব বলে আশা করছি।’
উইকেট প্রশ্নের মীমাংসা তো আজ বিকেলের আগে হচ্ছে না। তাঁর আগে নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র আর রণকৌশলের ধার বাড়াতে মনোযোগী হয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে হঠাৎ যে নতুনের ‘বাড়-বাড়ন্ত’ সেটাও কিন্তু থাকছে আতশ কাচের নিচেই, ‘নতুনেরা বিপিএলে ভালো করেছিল।
যদি আমাদের দলের দিকে তাকান, দেখবেন আমাদেরও কিছু ক্রিকেটার বিপিএলে খেলেছিল। আমাদের একটা ধারণা আছে তারা (বাংলাদেশের নতুন ক্রিকেটার) কেমন করেছে। আমরা তাদের ভিডিও দেখে কিছু ধারণা নিয়েছি।’
লঙ্কান তাঁবুতে যদি বাংলাদেশের শক্তিমত্তার ব্যবচ্ছেদ চলে, মাহমুদউল্লাহর ক্যাম্পেও নিশ্চয়ই নিস্তরঙ্গ অবকাশ চলছে না। তবে শেহান মাদুশঙ্কার মতো কোনো গোপন বাজি যদি আবার খেলে বসেন হাথুরু, অবাক হওয়ার কি বেশি কিছু থাকবে!
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓