টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের ক্ষত নিয়েই দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ দল। এ ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ৯.৩০ মিনিটে।
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাত ব্যাটসম্যান, এক পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষেক হচ্ছে বাঁহাতি এই স্পিনার সানজামুলের। স্পিনে তার দুই সঙ্গী তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আর দলে একমাত্র পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চোটের জন্য শেষ টেস্টে না খেলা তামিম ও চোখের সমস্যায় অনেক দিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকা মোসাদ্দেক হোসেন একাদশে ফিরেছেন।
সাকিবকে মিস করলেও মাহমুদউল্লাহর চিন্তায় নেই হাথুরু
তার সব কিছুই দেরিতে। মাশরাফি বিন মর্তুজা আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ডাক পাওয়া আব্দুর রাজ্জাককে বাদ দিলে তামিম, মুশফিক আর সাকিবসহ জাতীয় দলের বর্তমান বহরের সবাই তার বয়সে ছোট। তারপরও জাতীয় দলের হয়ে সাকিব, মুশফিক আর তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে মাহমুদউল্লাহর আগে। একই ভাবে তার চেয়ে বয়সে ছোট সাকিব ও মুশফিক জাতীয় দলের অধিনায়কও মনোনীত হয়েছেন তার আগে।
সাকিবের বাঁ হাতের হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল ফেটে না গেলে এবারও হয়তো নেতৃত্ব পাওয়া হতো না মাহমুদউল্লাহর। যাই হোক, কথায় বলে না-‘কারো পৌষ মাস , কারো সর্বনাশ।’ এক্ষেত্রে সাকিবের সর্বনাশেই টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর পৌষমাস বা অভিষেক হতে যাচ্ছে।
কিন্তু অধিনায়ক হতে পারলেও ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহর যাত্রা কেমন হবে, তা নিয়ে অাছে জোর সংশয়- সন্দেহ। কারণ যিনি টেস্টে বাংলাদেশের প্রাণভোমরা, প্রাণশক্তি ও একাই একাশো- সেই সাকিবের অনুপস্থিতি বা ঘাটতি পোষানো কঠিন। এক কথায় সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর। সাকিব মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের বড় নির্ভরতা। আর বল হাতে এক নম্বর অস্ত্র। এমন ‘টু ইন ওয়ান’ ছাড়া দলের নেতৃত্ব যে বাড়তি চ্যালেঞ্জ!
এভাবে নিয়মিত অধিনায়ক ও দলের সেরা পারফরমার ইনজুরিতে মাঠের বাইরে, তার বিকল্প হিসেবে নেতৃত্ব দেয়া কি চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ? এটা কি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নয়? কি ভাবছেন মাহমুদউল্লাহ ?
আজ দুপুরে বন্দর নগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে মাহমুদউল্লাহও মানলেন, এটা একটা চ্যালেঞ্জ অবশ্যই। তবে সে চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গেই মোকাবিলার দৃঢ় সংকল্প তার চোখে-মুখে।
তাই তো মুখে এমন সংলাপ, ‘ক্রিকেটারদের জীবনে চ্যালেঞ্জে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এটা ভালো একটা সুযোগ, তার থেকেও বড় কথা, সিরিজটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে আমরা ওডিআই সিরিজটা শুরু করেছিলাম (আসলে ত্রিদেশীয় সিরিজ) সেখান থেকে অবশ্যই ধরে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।’
অনেক দেরিতে হলেও অধিনায়কত্ব লাভ। এটা অবশ্যই স্বপ্নপূরণ। কেমন লাগছে? ব্যক্তিগতভাবে আর সবার মত তারও জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার স্বপ্ন ছিল কি? মাহমুদউল্লাহর জবাব, ‘প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে তার দেশকে নেতৃত্ব দেবার। সেই আলোকে আমারও স্বপ্ন ছিল।’
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
তবে মাহমুদউল্লাহ মানছেন, সাকিবের ইনজুরির কারণে দায়িত্ব প্রাপ্তিটা খুব একটা উপভোগ্য হয়নি। ডানহাতি এই অলরাউন্ডারের সরল স্বীকারোক্তি, যেভাবে তার কাঁধে অধিনায়কত্বর দায়িত্বটা বর্তেছে, সেটা অপ্রত্যাশিত। এভাবে সাকিবের মত সেরা ক্রিকেটার থাকবে না, আর তিনি দলকে টেস্টে নেতৃত্ব দেবেন, তাও তিন জাতি ক্রিকেটে অমন স্বপ্নভঙ্গের পর; তা ভাবেননি মাহমুদউল্লাহ।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যেভাবে অধিনায়কত্ব পেয়েছি, সেভাবে পেতে চাইনি অবশ্যই। কারণ সাকিব আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। ওকে লস করা আমাদের দলের জন্য বড় একটা বিপর্যয়ই বলতে হবে। ওর মতো টপ ক্লাস ক্রিকেটারকে মিস করা দলের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর একটা জিনিস। তারপরও দিন শেষে আমরা সবাই বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করাও একটা সুযোগ। দলের জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ। সেদিক থেকে আমরা সবাই বেশ রোমাঞ্চিত।’
এ সিরিজে সাকিব নেই। তারপরও অধিনায়ক হিসেবে তার লক্ষ্য, যে কোনো ভাবে দলকে ভালো খেলায় অনুপ্রাণিত করা। সাহস জোগানো ও সামর্থ্যের সেরাটা বের করে আনা।
এমনকি দলের সাফল্যের জন্য প্রয়োজনে কঠোর হতেও রাজি নরম স্বভাবের মাহমুদউল্লাহ। সতীর্থদের প্রতি তার আগাম বার্তা, ‘আমি যখন দল পরিচালনায় থাকবো, তখন কোনো কিছুতেই ছাড় দেব না। যেভাবেই হোক দলকে যতটুকু ভাবে সাপোর্ট করা সেটা একটু রুঢ় হয়েও হোক বা ভালোভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে হোক; সব দিক থেকেই চেষ্টা করবো। আসল কথা হচ্ছে এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট। বাংলাদেশ দলকে ভালো কিছু দিতে হবে। এটাই আমাদের দায়িত্ব, এটাই আমাদের কর্তব্য।’
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
তার বোধ ও উপলব্ধি, আগে পরে যত রকম লক্ষ্য ও পরিকল্পনা করা হোক না কেন, মূল কাজ হলো মাঠে জায়গামত পারফর্ম করা। আর অধিনায়ক হিসেবে মাঠে খেলা চলাকালিন সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্তও সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। সেজন্য অধিনায়কের ধীর স্থির থাকা খুব জরুরী বলে মনে হয় মাহমুদউল্লাহর।
নেতৃত্বে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় অধিনায়কত্বের বড় একটা কাজ হচ্ছে মাঠের মধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদি আপনি মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারেন, তবে সিদ্ধান্তগুলো এদিক-সেদিক হয়ে যেতে পারে। যদি আপনি মাথা ঠান্ডা রাখেন, তবে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। এটা আমি সব সময় করি। আমি যখন ঘরোয়া ক্রিকেটেও অধিনায়কত্ব করি, তখন যতটুকু পারি ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করি।’
সাবেক কোচ হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ থাকার সময় শততম টেস্ট দলেই রাখেননি মাহমুদউল্লাহকে। এতে ক্যারিয়ারের একটি বড় ও স্মরণীয় মাইলফলক মিস হয়ে গেছে তার। এখন এই হাথুরুর কোচিংয়ের দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেক হতে যাচ্ছে, এটা কি মধুর প্রতিশোধ?
বিনয়ী মাহমুদউল্লাহ কিছুতেই তা ভাবতে নারাজ। তার কথা, ‘না, আমার ওসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি চিন্তা করি যে আমি আমার দলকে কিভাবে সেরা সার্ভিসটা দিতে পারবো। সেটাই আসল কাজ। আমি যদি আমার সেরা কাজটা করতে পারি, তাহলেই হবে। সবাই মিলে যদি আমরা নিজেদের কাজটা করতে পারি, এটাই যথেষ্ট।’
সেই হাথুরুর বিপক্ষেই টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ!
মানুষের জীবন কতই না অদ্ভুত! কত বিচিত্র জীবনের ঘটনাপ্রবাহ! ক্রিকেটার আর প্রশিক্ষকদের জীবনটাও তেমনি। যার পরতে পরতে নানা বাঁক, চ্যালেঞ্জ।
এক সময় যেটা কল্পনা বা ভাবনারও অতীত থাকে, সেটাই কোন না কোনো একদিন বাস্তব হয়ে দেখা দেয়। এমনটা যে শুধু বই-পুস্তকেই দেখা যায়, তা নয়। বাস্তবেও যে ঘটে, তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
খুব বেশি দুর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না, এইতো ১৪ মাস আগের (গত বছর মার্চে) কথা। কলম্বোর পি সারা ওভালে শততম টেস্টে হঠাৎই নাটকীয়ভাবে বাদ পড়েছিলেন টিম বাংলাদেশের ‘পঞ্চ পান্ডবের’ একজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
এমন নয়, তিনি কোন বড় ধরনের ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠের বাইরে ঠিছটকে পড়েছিলেন। আগের টেস্টে পুরো দল ব্যর্থতার ঘানি টেনে ২৫৯ রানের বিরাট ব্যবধানে হেরেছিল। আর সবার মত মাহমুদউল্লাহ সুবিধা করতে পারেননি। দু’ইনিংসে ৮ ও ০ রানে সাজঘরে ফেরত এসেছিলেন;
কিন্তু আগের দিন প্র্যাকটিসে জানা গেলো দলের আর সব সিনিয়র সদস্যরা থাকলেও মাহমুদউল্লাহর শততম টেস্ট খেলা হচ্ছে না। তাকে ড্রপ করা হয়েছে।
এটাই আসল কথা নয়। মূল কথা হলো, যিনি মাহমুদউল্লাহকে দেশের ১০০ নম্বর টেস্ট দলের বাইরে ঠেলে দেয়ার কলকাঠি নেড়েছিলেন, তখনকার বাংলাদেশের সেই হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আজ ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশ দলের সাথেই নেই। তিনি এখন শ্রীলঙ্কার কোচ। অতি কাতকাতালীয়ভাবে সেই শ্রীলঙ্কার সাথে আগামীকাল টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরুর প্রহর গুনছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এই টেস্ট অধিনায়কত্বও কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আসেনি। সব কিছু ঠিক থাকলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ‘অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর’ দেখা মিলতো না। দুটি রদবদলই তার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। প্রথমতঃ মুশফিককে বাদ দিয়ে সাকিব আল হাসানের টেস্ট নেতৃত্ব পাওয়া। দ্বিতীয়তঃ তামিম ইকবালের পরিবর্তে মাহমুদউল্লাহর সহ অধিনায়ক হওয়া।
অর্থাৎ এই তো গত মাসে মুশফিকের জায়গায় টেস্ট অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্ব বর্তালো সাকিব আল হাসানের কাঁধে। আর তামিমের বদলে সাকিবের ডেপুটি হলেন মাহমুদউল্লাহ। মাঝে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি টোয়েন্টি- কোন ফরম্যাটেই সহ অধিনায়ক ছিলেন না তিনি। শ্রীলঙ্কার সাথে হোম সিরিজে সহ-অধিনায়ক হওয়াটাই ভাগ্যের চাকা খুলে দিয়েছে। তারপরও সাকিব সুস্থ থাকলে টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর দেখা মিলতো না। ২৭ জানুয়ারি ত্রিদেশীয় ক্রিকেটের ফাইনালে সাকিবের আঙ্গুল ফেটে যাওয়ায় চট্টগ্রাম টেস্টে অধিনায়কত্ব পেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আসলে মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারটাই এমন বৈচিত্র্যপূর্ণ। তার ব্যাটিং টেকনিক, শৈলি আর অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশনটা পুরোপুরি ব্যাকরণ সম্মত। সাজানো-গোছানো আর পরিপাটি ব্যাটিং টেকনিক। উইকেটে গিয়ে দেশের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানের মত তাড়াহুড়ো করার প্রবণতা অনেক কম। ধীর-স্থির সূচনা করতে ভালবাসেন।
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
লক্ষ্য থাকে সেট হয়ে তারপর স্ট্রোক খেলার। সব মিলিয়ে টেস্ট ব্যাটিংয়ের সাথে লাগসই কৌশল, টেম্পারামেন্ট ও অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন। সঙ্গে অফস্পিন বোলিংও করেন। টার্ন তেমন নেই। তবে লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে আর উইকেটের চরিত্র এবং প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের মতি-গতি বুঝে বল করার সামর্থ্যও আছে বেশ।
কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, এমন ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক অভিষেক মানে জাতীয় দলে যাত্রা কিন্তু টেস্ট দিয়ে নয়। এমনকি ৫০ ওভারের একদিনের ফরম্যাটেও নয়। পারফরমার মাহমুদউল্লাহর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর কেনিয়ার বিপক্ষে নাইরোবি জিমখানা মাঠে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে।
অভিষেক ম্যাচে বোলিং পাননি। ব্যাট হাতেও সুবিধা হয়নি। ছয় নম্বরে নেমে কেনিয়ান পেসার টমাস ওদোয়ার বলে ২ রানে কট বিহাইন্ড। এরও প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের জুলাইতে (৯ জুলাই) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টাউনে টেস্ট অভিষেক। তাতেও সুবিধা হয়নি। আট নম্বরে নেমে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার কেমার রোচের বলে ৯ রানে আউট। পরের ইনিংসেও দু’অংকে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আবারো সেই কেমার রোচের বলেই ৮ রানে ফিরে গেছেন।
কিন্তু মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অভিষেকটা তার কাছে তো বটেই ভক্ত-সমর্থক ও পরিসংখ্যানবীদদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে বোলিংয়ের কারণে। অভিষেক টেস্টে ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ মাত্র ১৭; তাতে কি! বোলার মাহমুদউল্লাহ কিন্তু দুই ইনিংস মিলে ৮ উইকেট নিয়ে (প্রথমবার ১৯.৪-২-৫৯-৩ ও দ্বিতীয়বার ১৫-৪-৫১-৫) সবাইকে মাত করে দিয়েছিলেন।
অবাক করার মত খবর, সেটাই এখনো টেস্টে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং হয়ে আছে ৮/১১০। দ্বিতীয় ইনিংসে পাওয়া ৫১ রানে ৫ উইকেট এখনো মাহমুদউল্লাহর টেস্টে এক ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার। এরপর আর কখনো এক ম্যাচে ৮ উইকেট পাননি। কোন ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেটের পতন ঘটানোও সম্ভব হয়নি। এক ইনিংসে সর্বাধিক তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন মাত্র দু’বার। প্রথমবার অভিষেক সিরিজে, দ্বিতীয় টেস্টেই। সেন্ট জর্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩/৪৪। এরপর আবার ইনিংসে তিন উইকেট পেতে লেগেছে আট বছর। গতবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটির দ্বিতীয় ইনিংসে ৭০ রানে ৩ উইকেট দখল করেন।
নিচের ভিডিওতে ক্লিক করে খেলা দেখুন সরাসরি ↓
পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে এখন পর্যন্ত ৩৫ টেস্টে তার উইকেট ৩৯টি। মানে অভিষেক টেস্টে ৮ উইকেট পাবার পরের ৩৪ টেস্টে পতন ঘটিয়েছেন মোটে ৩১ উইকেট। ম্যাচ পিছু একটিরও কম। তাই বলে ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ কিন্তু থেমে থাকেননি। উল্কার বেগে না ছুটলেও ধীরে-সুস্থে ৩৫ টেস্টের ৬৬ ইনিংসে ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ ১৯৩১ রান। গড় ৩০.১৭। শতরান একটি। অর্ধশতক ১৪টি।
২০০৯ সালের জুলাইতে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করা মাহমুদউল্লাহ পাঁচ মাস পর (২০১০ সালের জানুয়ারী মাসে) নিজ দেশে (ঢাকার শেরে বাংলায়) ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের চার নম্বর টেস্টেই প্রায় সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন। ভাগ্য ভাল থাকলে হয়ত প্রথম টেস্ট শতরানের দেখাও পেয়ে যেতেন।
ঠিক পরের মাসে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে হ্যামিল্টনে ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের পাঁচ নম্বর টেস্টের (নবম ইনিংসে) প্রথম ইনিংসে শতরান করে বসেন মাহমুদউল্লাহ। ১৯০ মিনিট, ১৭৭ বল, ১৭ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কা।
তারপর ৩০ টেস্টে আর শতরান করতে পারেননি। ১২বার পঞ্চাশে পৌঁছেও আর শতরান করা হয়নি। শেষ ১০ ইনিংসে (৪৩+৪+৯+৬৬+০+৮+৬৬+২৮+৩৮+১৯)। আছে একজোড়া ফিফটি।
সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পুরো দল ব্যর্থতার ঘানি টানলেও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে একদম খারাপ করেননি মাহমুদউল্লাহ। শুরু করেছিলেন ফিফটি দিয়ে। পচেফস্ট্রমে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৭০ মিনিটে ১২৪ বলে খেলেছিলেন ৬৪ রানের ভাল ইনিংস। এরপর দুই ইনিংসে দুই অংকে যেতে না পারলেও শেষ ইনিংসে করেছিলেন ৪৩ রান।
এদিকে এবার ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে আসরের রাউন্ড রবিন লিগে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও ফাইনালে একাই লড়াই করেছেন তিনি। খেলেছিলেন ৭৬ রানের ইনিংস।
ওপরের ওই ছোট্ট পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ মোটামুটি ফর্মে আছেন। এখন দেখার বিষয়, মাহমুদউল্লাহর অধিনায়ক জীবনের শুরুটা কেমন হয়। টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কি করেন এ অলরাউন্ডার? কোন মাহমুদউল্লাহর দেখা মিলবে, ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ, না কি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের স্পিন ফ্রেন্ডলি পিচে নয় বছর পর বোলার মাহমুদউল্লাহর হাত থেকে আরেক স্মরণীয় স্পেল বেরিয়ে আসবে?
বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, সানজামুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা দল: দিনেশ চান্দিমাল, দিমুথ করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, নিরোশান ডিকভেলা, রোশান সিলভা, রঙ্গনা হেরাথ, সুরঙ্গা লাকমাল, দিলরুয়ান পেরেরা, লাকশান সান্দাকান, লাহিরু কুমারা।