টসে হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
নিদাহাস টি-টোয়েন্টি ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। শুরুতেই টাইগারদের প্রতিপক্ষ এশিয়ার পরাশক্তি ভারত। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এ ম্যাচে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরে বেশ কোণঠাসা অবস্থায় আছে ভারত। এ সিরিজে তারা বিশ্রামে রেখেছে বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো বড় তারকাদের।
মাহমুদউল্লাহর ভাবনায় ভারত নয় শুধু বাংলাদেশ
দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বিশ্রামে আছেন ধোনিসহ ছয় ক্রিকেটার। তাদের অভাব প্রথম মাচে ভালোভাবেই টের পেয়েছে দলটি। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেছে ৫ উইকেটে। তবে এসব কোনকিছু নিয়েই ভাবছেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তার চাওয়া নিজেদের সেরাটা দেয়া।
ক্রিকেটের যে কোন ফরমেটে ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে ভারত যেখানে তিনে, বাংলাদেশ অবস্থান করছে দশে। এখন পর্যন্ত ৫বারের দেখায় সবগুলো ম্যাচই হেরেছে টাইগাররা। তবে নিয়মিত একাদশের কয়েকজন না থাকায় অনুপ্রেরণার উৎস বেশ কিছু আছে বাংলাদেশের।
তবে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা কিংবা অন্য দলের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজতে রাজি নন মাহমুদউল্লাহ। তার ভাবনায় শুধু বাংলাদেশ। এ নিয়ে অধিনায়ক বলেন, ‘কোহলি-ধোনিদের মত তারকারা না থাকলেও ভারত দারুণ একটি দল। তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সমীহ আছে আমাদের। তবে আমরা শুধু নিজেদের খেলাটা খেলতে চাই। আমরা নিজেদের জায়গাগুলোতে ভালো করতে চাই। আর তা যদি পারি আশা করি ফলাফল ভালোই হবে।’
এদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরে গেছে ভারত। তাই ওই ম্যাচ টাইগারদের উৎসাহ যোগাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াদ বলেন, ‘ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আমি কিছু ভাবছি না আমার ভাবনা শুধু ভালো ক্রিকেট খেলা নিয়ে। ছেলেদেরকে বলেছি নিজেদের প্রক্রিয়া ও শক্তির জায়গাটায় অটুট থাকতে হবে। অন্য কিছু না ভেবে, নিজেদের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাটুকু জানতে পারাটাই আমাদের জন্য ভালো হবে।’
তামিম ইকবালের অনুশীলনের শেষ বল। মেহেদী হাসান মিরাজের বলটা মাটিতে পড়ে লেগ স্টাম্পের বাইরের দিকে চলে গেল। লেগ সাইডেই মারতে চেয়েছিলেন তামিম। পারলেন না। দূর থেকে দেখে মনে হলো, বল লেগ স্টাম্পে বাতাস লাগিয়ে চলে গেছে।
কিন্তু কী দেখা গেল, তা নয়, মনে দাগ কাটল, যা শোনা গেল সেটি। বলটা ব্যাট এড়িয়ে যেতেই তামিমের কণ্ঠে তীব্র বিরক্তিসূচক ‘ওওওউফ’ ধ্বনি। ব্যাটিং অনেকক্ষণ ধরেই করছিলেন। ব্যাটে-বলেও ভালো হচ্ছিল। ওই একটা শট মনমতো হলো না দেখেই এত বিরক্তি।
তামিমের মতো অনুশীলনে ওভাবে কেউ বোঝাননি, তবে বাংলাদেশের পুরো দলই ভুগছে অতৃপ্তিতে। অতৃপ্তিটা অনেক দিন ধরে নিজেদের চেনাতে না পারার। ভারতের সঙ্গে আজ নিদাহাস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নামার সময় মাহমুদউল্লাহর দলের সঙ্গী হবে পুরোনো ছন্দে ফেরার আকাঙ্ক্ষাও।
আরেকটা ইচ্ছেও নিশ্চয়ই থাকবে। বেঙ্গালুরু-দুঃস্বপ্নে প্রলেপ দিতে হবে যে! মাহমুদউল্লাহ যতই ‘বেঙ্গালুরুকে বেঙ্গালুরুতেই রেখে এসেছি’ বলুন, টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের সর্বশেষ সেই ম্যাচের কথা তো আসেই। ২০১৬ বিশ্বকাপের যে ম্যাচে শেষ ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে ১ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ!
চ্যালেঞ্জটা কঠিন। কাগজে-কলমে এই ভারত যদিও ভাঙাচোরা। কোহলি-ধোনিরা নেই, টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে পরশু শ্রীলঙ্কার কাছেও হেরেছে। তবু টুর্নামেন্টের ফেবারিটের নাম ভাবলে ‘ভারত’ই প্রথমে মাথায় আসে। মাহমুদউল্লাহও চ্যালেঞ্জটাকে কোনোভাবেই সহজ মনে করছেন না। কাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘দেখুন, ভারত কিন্তু এখনো শক্তিশালী। ভারতের অভিজ্ঞ অনেক খেলোয়াড় এই সফরে না এলেও এই দলটাও শক্তিশালী। কারণ ওরা আইপিএল খেলছে, অনেক অভিজ্ঞ।’
ওদিকে পরশু হারের পর বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই ভারত ওপেনার শিখর ধাওয়ান যেভাবে চেয়ারে হেলান দিয়ে দুলতে দুলতে বললেন, ‘একটা ম্যাচ হেরেছি তো কী হয়েছে? বাংলাদেশের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসের কমতি থাকবে না’, চ্যালেঞ্জটা শক্ত মনে হতে বাধ্য।
ভারত কাল অনুশীলন করেনি। আর বাংলাদেশের অনুশীলন নিয়ে হলো নাটক। সেখানেও একটা ‘চ্যালেঞ্জ’ পেরিয়ে আসতে হয়েছে দলকে। পরশু পর্যন্ত খবর ছিল, ম্যাচের আগের দিন বিকেলে ফ্লাডলাইটের নিচে অনুশীলন করবে বাংলাদেশ দল।
কিন্তু সেদিন রাতেই নাকি শ্রীলঙ্কান বোর্ড জানিয়ে দেয়, ম্যাচের আগের দিন সেন্টার উইকেটে অনুশীলন করা যাবে না। ব্যস, অনুশীলন তাই এগিয়ে আনা হলো সকাল ১০টায়। অবশ্য সেখানে আরেক নাটক। দলের বাইরে কাউকে জানানোই হয়নি সূচিবদলের কথা। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় দলের লিয়াজোঁ অফিসারের কাছ থেকে খবর পেয়ে যখন গেলেন সাংবাদিকেরা, অনুশীলনের শেষ ভাগ চলছে!
বাংলাদেশের সামনে বড় হয়ে উঠছে অনেক দিন ধরে জমা হয়ে থাকা আরেকটা চ্যালেঞ্জ। তিনে কে খেলবেন? বাংলাদেশের যেকোনো ম্যাচের আগেই এটি বড় প্রশ্ন। এবার সেই প্রশ্নের উত্তরে আসছে তিনটি বিকল্প নাম। সাকিব চোটে না পড়লে হয়তো প্রশ্নটাই উঠত না। ত্রিদেশীয় সিরিজে তিনিই খেলেছিলেন তিনে।
এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে জায়গাটা বরাদ্দ ছিল মুশফিকের জন্য, আর পরশু প্রস্তুতি ম্যাচে খেললেন সাব্বির রহমান। ১০ বলে ১ রান করে আউট হয়ে গেছেন। ৩ নম্বরের জন্য তাই বিবেচনায় এসে পড়েছে লিটন দাসের নামও। প্রস্তুতি ম্যাচে ১৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তাঁর ১৮ বলে ৪০ রানের ইনিংসই পথ দেখায় বাংলাদেশকে।
তা ব্যাটিং অর্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গাটি কার জন্য বরাদ্দ হবে? মাহমুদউল্লাহ প্রশ্নটার উত্তর দিলেন ঘুরিয়ে, ‘সাব্বির ৩ নম্বরে খুব ভালো ব্যাটিং করছিল টি-টোয়েন্টিতে। হয়তো সাম্প্রতিক অতীতে খুব একটা ভালো করতে পারেনি। কালকেই (আজ) দেখতে পারবেন কাকে খেলাচ্ছি। কারণ লিটনও খুব ভালো ব্যাটিং করেছে প্র্যাকটিস ম্যাচে।’
অধিনায়কের উত্তরেই হয়তো লুকিয়ে বাংলাদেশের ভারত-বাধা পেরোনোর চাবি।