bnp-flag

চট্টগ্রামে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস

মামলা, হামলা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটিয়ে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে রাজনীতির মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে চায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। প্রায় ২০ বছর পর গেলো বছরের মাঝামাঝি ২৭৫ সদস্যবিশিষ্ট নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর হতাশা ভুলে নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও দেখা গেছে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি। কেন্দ্রীয় নেতাদের চট্টগ্রামে বারবার যাতায়াতও নগর বিএনপির নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করছে। আর এই সময়কে কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল পেছনে ফেলে আগামী দিনে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নগরের নেতাকর্মীরা।

নগর বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। নগর বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর পর নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেইসাথে বেশিরভাগ থানা ও ওয়ার্ড কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পদ প্রত্যাশী নেতারা পদ পেয়ে আগের চেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করছেন। আগামী দিনে যে কোনও ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রস্তুত নগর বিএনপি।’

তবে কমিটি গঠনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চ্যলতা আসলেও কমিটি গঠন নিয়ে এখনও অসন্তোষ রয়েছে অনেকের মাঝে। বিশেষ করে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে অনেকে পকেট কমিটি হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেন জানা যায়, কমিটি গঠনে তারা খুশি। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশনা সম্মেলন করে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। বরং সংসদীয় এলাকার সংশ্লিষ্ট এমপি প্রার্থীদের পছন্দের লোক দিয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে করে অনেক অযোগ্য ও নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

জানা যায়, নগরীর ১৫টি থানার মধ্যে ৯টি থানা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে। এছাড়া ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টির কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সম্মেলন করে কমিটি দেয়া হয়েছে ৪টি ওয়ার্ডে। সেগুলো হলো, দেওয়ান বাজার, পশ্চিম বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া ও চকবাজার ওয়ার্ড।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চ্যলতা আসলেও অস্থিরতা বিরাজ করছে সহযোগী সংগঠন ও বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল ও যুবদলে।

দীর্ঘদিন যাবত এই দুটি অঙ্গসংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। সেইসাথে ওয়ার্ড ও থানা কমিটিও নেই। রাজনৈতিক মামলা, হামলা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত হয়ে বিভিন্ন গ্রুপ, উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ছে ছাত্রদল ও যুবদল। অনেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেক কর্মী নিজেদের ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন টানাতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে ছাত্রদল ও যুবদলে। কবে নাগাদ এ দুটি সহযোগী সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে তা-ও বলতে পারছে না কেউ।

এসব বিষয়ে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর নগর বিএনপির কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের কর্মতৎপরতা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ছোট বড় প্রতিটি প্রোগ্রামে কর্মীদের কর্মতৎপরতা অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি। এখন চট্টগ্রাম বিএনপি আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোর জন্যই প্রস্তুত।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচিগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতারাও থাকছেন। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দলের সিদ্ধান্তে আসছেন, আবার অনেক নেতাদের আমরা দাওয়াত দিয়ে এনেছি। প্রতিটি কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পেয়ে কর্মীরাও খুশি।’

ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি গঠনে বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি গঠন করবে তাদের কেন্দ্রীয় সংগঠন। এখানে বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপ করার প্রশ্নই আসে না। কাকে দায়িত্ব দেবে না দেবে এটা তাদের একান্ত বিষয়। তবে আমি মনে করি দ্রুত ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা দরকার। এতে করে দল আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হবে।’

জানা গেছে, এ দুটি সংগঠনের কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় নেতারা চেষ্টা করলেও চট্টগ্রাম নগর বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত তা পারছেন না। কেন্দ্রে থাকা চট্টগ্রাম বিএনপির একাধিক নেতা চাচ্ছেন তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়ে কমিটি গঠন করতে। আর এমন মানসিকতাতেই নগর ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি ঝুলে আছে বলে দাবি স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

এবিষয়ে বিএনপির সাবেক চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদত হোসেন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও নগরীর অধিকাংশ থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন উজ্জীবিত। সকল স্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। এবং কোনও ধরণের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সফলভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘থানা ও ওয়ার্ড কমিটি কাউন্সিল ও সম্মেলন না করে সংসদীয় আসনের নেতাদের পছন্দে গঠন করা হয়েছে, এনিয়ে অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাহাদত বলেন, ‘আমি আসলে চেষ্টা করেছি কাউন্সিল ও সম্মেলন করে কমিটি গঠন করার। কিন্তু পারিনি, আমার সীমাবদ্ধতা ছিল। আমি নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করছি। তবে আগামী দিনে সুযোগ পেলে আমি অবশ্যই কাউন্সিল ও সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করবো।’

ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি গঠনে বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারাই কমিটি দিতে দেরি করছে। এতে কোনও বিএনপি নেতার হস্তক্ষেপ নেই।’

নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ানের সঙ্গে কথা হলে তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘নগর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনও বিবেদ নেই। সম্প্রতি কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি প্রমাণ করে অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে চট্টগ্রাম বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী।’ তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নগর ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি গঠন করা দরকার বলে তিনিও মনে করেন।

ব্রেকিংনিউজ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin