bnp-flag

শেষ ছয় মাসের অপেক্ষায় বিএনপি যে কারনে

সরকার যত কঠোর অবস্থান নিক বা উসকানিমূলক কথা বলুক, আপাতত ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, নির্বাচনের এক বছর আগে হঠকারিতা করা যাবে না বা ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবে-চিন্তে। বিএনপির হিসাবে, সরকারকে চাপে ফেলতে আন্দোলনের যদি প্রয়োজন হয়ও তার জন্য তাদের মেয়াদের শেষ ছয় মাস হবে উপযুক্ত সময়; এর আগে আন্দোলনে গেলে কোনো সফলতা পাওয়া যাবে না। রয়েছে লোকবল ক্ষয়েরও আশঙ্কা। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে দলটির এ অবস্থানের কথা জানা যায়।

জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নেতাদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতাকে তিনি বলেছেন, ‘ওরা (সরকারি দলের নেতারা) এখন অনেক উসকানিমূলক কথাবার্তা বলবে। পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়ার চেষ্টাও করবে। কিন্তু এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না’। নির্বাচন বানচাল হয়ে যেতে পারে—এমন পরিস্থিতি সম্পর্কেও তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলে জানা যায়।

সূত্র মতে, গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য এবং ১১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরে সিনিয়র নেতাদের ওই পরামর্শ দেন খালেদা জিয়া।

গণভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন ‘নাকে খত দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসবে’। তিনি আরো বলেন, কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে আর কোন দল নেবে না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। এর চার দিন পর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আরো বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করবে’ বলে মন্তব্য করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। এ প্রসঙ্গে নিজের করা একটি জরিপের ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে হারানোর মতো কোনো দল বাংলাদেশে নেই। কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সরকারের কিছুই করার নেই বলেও মতামত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়। গত রবিবারও জয় একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নির্বাচনে আসার জন্য বিএনপিকে অনুরোধ করা হবে না।

সরকারের শীর্ষ দুই নীতিনির্ধারকের মুখে একই ধরনের বক্তব্যকে আগামীতে আরেকটি ‘একতরফা’ বা ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের চেষ্টার আভাস বলেও সন্দেহ করছে বিএনপি। তবে এই ইস্যুতে এখনি তারা কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে রাজি নয়।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের ১১ ডিসেম্বরের ওই বক্তব্যের পরের দিন এক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগকে হারানোর দল হয়তো বিদেশে আছে। আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন সরকার তাই করছে।

জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এবং তার পুত্র যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আরেকটি একতরফা নির্বাচনেরই ইঙ্গিত দেয়। এটি আমাদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন একটি দেশে বারবার হবে না। আর এ জন্যই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপি ধৈর্য ধরার পক্ষে’। ফখরুল আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনও দলকে ইতিবাচক রাজনীতির পথে থাকতে বলেছেন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, প্রয়োজন হলে আন্দোলন হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন এখনো কিছুটা দূরে থাকায় বিএনপি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে। কিন্তু সরকারের সম্ভবত শান্তিপূর্ণ অবস্থান পছন্দ নয়। তাই একতরফা নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে তারা নানা ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ছাড়া আমরা কিছুই করব না। কারো উসকানিতে পা দেব না’। এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি কালের কণ্ঠ প্রতিনিধিকে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলন উপযুক্ত সময়েই হবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতে, ‘সরকারি দলের নেতারা এখন নানা কথাবার্তা বলে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা এতে পা দেব না’। তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনা কী হবে তা নির্ধারণের একক মালিকানা কোনো দলের নয়। নির্বাচন হতে হবে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী। সেখানে কে আসবে কে না আসবে এসব প্রশ্নে আগাম কথা বলা অবান্তর। ’

আমির খসরু মাহমুদও ইঙ্গিত দেন এই মুহূর্তে কোনো ধরনের আন্দোলনে যাচ্ছে না বিএনপি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা বিএনপি অবশ্য করবে। আন্দোলনও সময়মতো হবে। ’

যুগান্তর

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin