বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রংপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থীকে পরাজিত করতে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলাকে সরানোরও পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ।
রিজভী আরো বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও সরকার দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো নজর নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে আগামী ১৮ ডিসেম্বর দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।
বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সংবিধান লঙ্ঘন: রিজভী
ঢাকা: অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির প্রকাশিত গেজেটকে সংবিধান পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এই শৃঙ্খলাবিধি সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। ২২ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, বিচার বিভাগ হবে একটি স্বাধীন অঙ্গ এবং বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সম্পূর্ণভাবে পৃথককরণ করা হবে।
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই বিধিমালায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। মাসদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগকে পৃথককরণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার পরিপন্থী। এমনকি সংবিধানেরও পরিপন্থী। এই শৃঙ্খলাবিধি সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। ২২ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, বিচার বিভাগ হবে একটি স্বাধীন অঙ্গ এবং বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সম্পূর্ণভাবে পৃথককরণ করা হবে। সে জন্য আইনও পাস করা হয়েছে। আজকে এই শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথককরণের মৃত্যু ঘটেছে।
জারি করা বিধিমালার কিছু অংশ তুলে ধরে রিজভী বলেন, বলা হয়েছে অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের ‘নিয়োগকারী’ কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি এবং আইন মন্ত্রণালয়কে অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই বিধির ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হবে এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
বিচারিক আদালত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, তাদের সরকারি গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য নির্বাহী বিভাগ তাদেরকে নিরঙ্কুশভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। এর ফলে সরকারের হুকুমেই নিম্ন আদালতের বিচারকদের চলতে হবে। বিচারকরা সব সময় আতঙ্কে থাকবেন। চাকরি রক্ষার্থে নির্বাহী বিভাগের সকল অন্যায় আবদার শুনতে ও পালন করতে হবে। সুবিচার-ন্যায়বিচার কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।
এ সময় নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই।
এখন আওয়ামী লীগকে ভোটে হারানোর মতো দল আর বাংলাদেশে নাই। এই মনোভাবকে বলা হয় ফ্যাসিস্ট মনোভাব, যা বহুদলীয় গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানুষের নাগরিক অধিকারকে কুঠারাঘাত করার শামিল।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও সজীব ওয়াজেদ জয় একই রকম জরিপ প্রকাশ করেছিলেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এবারেও তার বক্তব্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আরেকটা নীলনকশার নির্বাচনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি মেশিন দিয়ে জরিপ চালিয়েছেন।
তিনি জনগণের মধ্যে জরিপ চালাননি। তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা যে মেশিনের কথা বলছেন সেটি ‘আওয়ামী মেশিন’। সেই মেশিনের জরিপে জনগণের প্রকৃত মনোভাব ফুটে ওঠে না, মেশিনে শুধু আওয়ামী মনোভাবই ফুটে ওঠে। তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার সেই মেশিন বাকশালী যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি।
এ সময় সাংবাদিক ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা দায়েরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তিনি। সেই সঙ্গে এসব মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
rtnn