বহুল প্রত্যাশিত রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবর সকাল ৮টায়। ভোটগ্রহণ চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ১০৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও নগরবাসীর প্রত্যাশা নির্বাচন চলাকালে কোনো কেন্দ্রে সহিংসতা হবে না। উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নগরপিতা নির্বাচন করবেন তারা।
জাতীয় নির্বাচনের আগে রংপুর সিটির ভোটগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই সিটিতে গত পাঁচ বছর মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু; কিন্তু এবার নিজ দুর্গ ফিরে পেতে মরিয়া লাঙ্গল সমর্থকরা।
এদিকে নৌকা-লাঙ্গলের এমন লড়াইয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা। রসিকবাসী জানান, এবার ধানের শীষের প্রার্থীও ভালো অবস্থানে রয়েছেন। গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষে হলেও বুধবার শেষ মুহূর্তে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন প্রার্থীরা।
এদিকে বহুল আলোচিত এই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। বুধবার তিনি বলেন, ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের যে অবজারভেশন, তাতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অনুকূলে রয়েছে। সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট হবে।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচনকে আমরা মডেল নির্বাচন করতে চাই। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাড়ি যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কথা হয় কয়েক ভোটারের সঙ্গে। তাদের একজন নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মো. সাজু। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ভোটের ফল যাই হোক, নির্বাচনে কোনো ঝামেলা হবে না। অন্য জায়গায় যাই হোক, রংপুরে মারামারি হবে না। এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আশাকরি শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।
২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাইয়েদা আক্তার বলেন, আমার পছন্দের কোনো প্রার্থী নেই। তাই কাউকে ভোট দেব না। কারণ কেউ প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করে না, তাই পছন্দ হয় না। তবে সার্বিক বিবেচনায় সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজের এই শিক্ষার্থী।
এদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুরে অবস্থান করায় লাঙ্গলের সমর্থকরা অনেকটাই চাঙ্গা। জয়ের ব্যাপারেও তারা আশাবাদী। তবে শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একযোগে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।
ভোটাররা জানান, নৌকা ও লাঙ্গলের মধ্যেই মূল লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিগত বছরের তুলনায় বিএনপি ভোট কিছুটা বেশি পেতে পারে। রংপুর নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ জন।
৩৬ হাজার নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট। এছাড়া বিহারি ভোটার রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। এই ৮৫ হাজার ভোটই মেয়র নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
অন্যদিকে গত ৫ বছরে সিটি করপোরেশনের ভেতরে থেকেও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে দেড় লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন। তারাও নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে প্রভাব ফেলতে পারেন। তারা যেদিকে ভোট দেবেন, সেদিকেই জয়ের পাল্লা ভারী হতে পারে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের সচেতন ভোটাররা মার্কার তুলনায় যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তবে গ্রামের ভোটাররা এরশাদের সামরিক শাসনের পতনের পর থেকে লাঙ্গলে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত। এবারও তাদের ভোট লাঙ্গল পাবে।
এদিকে শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিরোধ দৃশ্যত কিছুটা মিটলেও লাঙ্গলের বিভেদ মেটেনি। এরশাদের ভাতিজা বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার বেশ কিছু ভোট পেতে পারেন বলে ধারণা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪১ কেন্দ্রে (বেগম রোকেয়া মাহবিদ্যালয়) ইভিএময়ে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি।
এ ছাড়া ১৪১ নম্বর কেন্দ্রসহ ৩টি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বাকি দুটি হলো লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ওয়ার্ডনং-২৪) ও সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (ওয়ার্ড নং-২০)। গতকাল সকালে প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে।
ভোটের তথ্য: মেয়র পদে প্রার্থী সাতজন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, বিএনপির ধানের শীষে কাওসার জামান বাবলা, জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী হাতি প্রতীকে আসিফ শাহরিয়ার, ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা মার্কায় গোলাম মোস্তফা বাবু, বাসদের আব্দুল কুদ্দুছ মই মার্কা এবং এনপিপির সেলিম আক্তার আম মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ছাড়া ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২১১ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নিরাপত্তায় সাড়ে পাঁচ হাজার সদস্য: রসিক নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবি ২১ প্লাটুন (৬৩০ জন), র্যাবের ৩৩ টিম (৪০০ জন), পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকবে ৪ হাজার ৪৭০ জন। এ ছাড়া একজন করে নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে ৩৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, একজন করে বিচারিক হাকিমের নেতৃত্ব ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনের ১১টি ‘নীরব পর্যবেক্ষক’ দল মাঠে নামছে। ইসির নিজস্ব এসব কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন।
rtnn