বিএনপি শুধু মা পুত্রের কথায় চলবে না

বিএনপি শুধু মা-পুত্রের কথায় চলবে না জানিয়ে বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা কামরুল হাসান নাসিম বলেছেন, বিএনপি শহীদ জিয়ার গড়া দল। জিয়াউর রহমান যাদু মিয়াদের নিয়ে যে দল গঠন করেছিলেন তা আজ দুর্বল, মানহীন ও উত্তরসূরিদের কাছে নিরাপদ নয়।

তিনি বলেন, আমি মনে করছি, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে পুনরায় তারেক রহমান নাশকতাকে আবারো সামনে নিয়ে আসবেন। তেমন গোপন ভিডিও বার্তাও লন্ডন থেকে নেতাকর্মীদের কাছে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কামরুল ইসলাম নাসিম।

রাজধানীর বারিধারার ডিওএসএসের নিজ কার্যালয়ে মানবকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক, গবেষক ও বহুমুখী প্রতিভায় থাকা মিডিয়ার কাছে আসল বিএনপি বলে খ্যাত কামরুল হাসান নাসিম এসব কথা বলেন। এ সময় খালেদার বিএনপি, দলটির সাংগঠনিক অবস্থান, তারেক রহমানের নানা কূটকৌশলের বিরুদ্ধে অবস্থান, বিএনপিকে কীভাবে ঢেলে সাজাবেন- এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা হয় তার সঙ্গে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি কামরুল হাসান নাসিম প্রথমবারের মতো আলোচনায় চলে আসেন। রাজধানীর একটা অভিজাত হোটেল থেকে তিনি বিএনপি পুনর্গঠনের ডাক দেন। যখন বিএনপি আহূত টানা ৯২ দিনের অবরোধ-হরতাল চলছিল।

তার সপ্তাহখানেক পরে ১৭ জানুয়ারি তিনি বিএনপির ৫টি অসুখ হয়েছে বলে নিজেকে একজন ওষুধওয়ালা হিসেবে দাবি করে সারাদেশে আলোচনায় চলে আসেন। মিডিয়া তাকে আসল বিএনপির নেতা বলে সম্বোধন করে থাকে।

এক প্রশ্নের জবাবে কামরুল হাসান নাসিম বলেন, আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়া অবশ্যই নিজের মামলা থেকে বাঁচতে আপস করে বিরোধী দলীয় নেত্রী হতে চাইবেন। কাজেই দু’জনকে নিয়েই সারাদেশের বিএনপির নেতাকর্মীরা সমস্যায় ভুগছেন।

তারেক রহমানের অযাচিত সিদ্ধান্তে বেগম জিয়াও সায় দিতে পারেন। যা বিএনপির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়ে দলের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। নাসিম বলেন, দলে আরো কিছু গ্রুপ আছে। একেকজন একেক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

বিএনপির ৫টি অসুখ হয়েছে জানিয়ে নাসিম বলেন, দলটি জাতীয়তাবাদী থেকে জামায়াতেবাদী হয়ে পড়েছে, নাশকতাকে রাজনীতির হাতিয়ার করা হচ্ছে, বিদেশি শক্তির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, জনস্বার্থ সংরক্ষণে রাজনীতি করা হচ্ছে না এবং দল পরিচালনায় বেগম জিয়া ও তারেক রহমান ব্যর্থ। দলে জিয়ার মতো নেতৃত্ব দরকার বলে তিনি ঘোষণা দেন।

তিনি জানান, প্রতীকী হরতাল, নানা সংবাদ সম্মেলন করতে থাকি, পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে থাকি। ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তিনি জাতীয়তাবাদী জনতার নি¤œ আদালত বসান। তিনি প্রতীকী আদালত বসাতে সক্ষম হন। বাদীর কাঠগড়ায় তিনি ছিলেন। বিবাদীর কাঠগড়ায় ওই ৫টি অসুখ প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকে। উপস্থিত জনতাকে বিচারক হিসেবে দেখানো হয়।

নাসিম আরো বলেন, বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বিচারকের কাছে দুটি রায় চান। এক, দলের গঠনতন্ত্র স্থগিত করা হোক। দুই, জাতীয়তাবাদী জনতার উচ্চ আদালত দলের নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে বসবে। তখন উপস্থিত জনতা হ্যাঁ সমস্বরে চিৎকার করলে নাসিম এই কর্মসূচিকে দলীয় বিপ্লব বলে ঘোষণা দেন। পরে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলীয় বিপ্লবকে উৎসর্গ করে নিজের স্বরচিত ৯টি কবিতা ও আবৃত্তি উৎসর্গ করেন। এর পরেই শুরু হয় নতুন আলোচনা।

নাসিম তার দলীয় কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বলেন, ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি, ১৭ জানুয়ারি, ১৭ মে, ৫ সেপ্টেম্বর দলীয় বিপ্লবের মহড়ায় চারবার করে নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে তার অনুসারীরা। বারবারই দলের অপর পক্ষ থেকে তাদের আক্রমণ করা হয়। ২০১৭ সালের শেষভাগে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের যে কোনো দিন লক্ষাধিক জনতা নিয়ে দলের কার্যালয়ের সামনে উচ্চ আদালত বসবে। যেদিনই উচ্চ আদালত বসবে সেদিন থেকেই মূলত বিএনপি পুনর্গঠনের আসল কাজ শুরু হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

বিএনপি কারো পারিবারিক সম্পত্তি নয় জানিয়ে নাসিম বলেন, এখানে জিয়াকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে হবে। নেতৃত্ব নির্ধারিত রাখার সুযোগ নেই। ত্রিশ বছরের অধিক সময় নিয়ে বেগম জিয়াই তো দলের ঐক্যের প্রতীক ছিলেন। তাকে রেখেই পুনর্গঠন করতে হবে। তবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া যাবে না। তার পুত্র কিংবা পারিবারিক দিকটাকে বড় করে দেখার সুযোগ থাকলেও তাদের কোয়ালিটিটাও তো থাকতে হবে!

নাসিম বলেন, আমি লম্বা করে যে সালাম দেব তাদের, সেই যোগ্যতা তো তাদের থাকতে হবে! আমি নেতৃত্বে আসতে চাই না, দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেয়া এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক লড়াই আরম্ভ করে দিয়ে আমার নিজ অঙ্গনে পুরোদমে ফিরে আসতে পারলেই খুশি হব।

আরেক প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, বিএনপি পুনর্গঠন করতে আরো ৪ বছর এবং সরকারি দলের সঙ্গে লড়াইয়ের শুরুটা হতে পারে ২০২২ সাল থেকে। আমি মনে করি না, আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করার জন্য আমরা এখন সুসংহত অবস্থায় আছি। কারণ, আমরা জনপ্রিয় কিন্তু জনস্বার্থ ইস্যুতে আমরা কি রাজনীতিটা করতে পারছি?

আজ ক্ষমতায় গেলে মানুষের জন্য কি করতে পারব সেটার হোমওয়ার্ক নেই তো।তিনি বলেন, দলের আদর্শ ঠিক করতে হবে। জামায়াত ছাড়তে হবে, জাতীয়তাবাদী হতে হবে, নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ছোঁয়া লাগতে হবে। যে কেউই এসে বড় চেয়ারে বসে পড়ার দিন শেষ। বিএনপি বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় চলবে না শুধু। আমি ও আমাদের জন্ম হয়েছে।

মানবকণ্ঠ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin