বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিএনপি এখন রাজনৈতিক ভাবে এতটাই দেওলিয়া হয়ে গেছেন। কোন কথাটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা, কোন কথায় ওঁথ ভঙ্গ হয় তা তারা জানেন না। তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়া ডিসি কোর্ট চত্বরে তিনদিন ব্যাপী উন্নয়ন মেলার দ্বিতীয় দিনে মেলায় স্টল পরিদর্শনের আগে বিএনপি ‘সংসদে প্রধানমন্ত্রী তার ওঁথ ভঙ্গ করেছেন’ বিএনপির এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একটা নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ হচ্ছে সেটি জোড়া তালি দিয়ে হচ্ছে যারা এমন মন্তব্য করতে পারে তারা পাগল বা উন্মাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার উদ্ভট বক্তব্যের প্রসঙ্গে কথা বলেছেন, এতে কোন রাষ্ট্রদ্রোহিতাও নয়, কোন শপথও ভঙ্গ হয়নি।
এ সময় জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকিয়ানা, পুলিশ সুপার(সদ্য পদোন্নতি) জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।
এরপর তিনি মেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়া প্রায় ৯০টি স্টল পরিদর্শন করেন।
উৎসঃ purboposhchim
আগামী নির্বাচনে সিনহার পদত্যাগ প্রভাব ফেলবে কি?
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকার ও বিচার বিভাগের মুখোমুখি অবস্থান আগামী জাতীয় নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশে নির্বাচনের বছরে সাধারণ মানুষের আলোচনাতেও ঘুরে ফিরেই উঠে আসে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের বিষয়টি।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টের বাইরেই অনেক কিছুর স্বাক্ষী প্রাচীন বটগাছের নিচেও মানুষের জটলায় চলছিল এ নিয়ে আলোচনা। নানা বয়সের ও নানা শ্রেনী পেশার এই মানুষেরা স্বাভাবিকভাবেই ইস্যুটি ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত। তবে সবাই একমত আসন্ন নির্বাচনেও ঘুরে ফিরে আসবে সিনহার পদত্যাগের বিষয়টি। খবর বিবিসির
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এক কলেজ শিক্ষক আবদুল আলিম মনে করেন সরকার স্পষ্টতই বিচার বিভাগের উপর প্রভাব ফেলেছে। তবে ব্যাংকার তরিকুল ইসলাম অবশ্য বলেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন সিনহা। দু’জন আইনজীবিও যোগ দেন এ আলোচনায়। তাদের একজন শুভংকর শঙ্কিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে, তবে অন্যজন মনে করেন যা হয়েছে নিয়ম মেনেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরির মতে, এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ সুদুরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটা বিচার বিভাগ নিয়ে ইলেকশন করতে যাচ্ছি, যে বিচার বিভাগটা ভীষণভাবে বিতর্কিত। যে বিচার বিভাগ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে যে সরকার এটাকে হাতের মুঠোয় নেয়ার চেষ্টা করছে। এখন যদি বিচার বিভাগ নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠে, যদি তারা মনে করে যে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের কথা শুনে চলে, তাহলে কিন্তু এই বিচার নির্বাচন পরিবর্তী কোন কিছুতে ভূমিকা রাখতে গেলে জনগণ তা মেনে নেবে না’।
এই বিতর্কে বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির বরাবরই ছিল সুস্পষ্ট সরকার বিরোধী অবস্থান। এই দলটি বিগত নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থেকেছিল। যদিও পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে তারা অংশ নেয় এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশ নেবে বলে একটি জোর ধারণা আছে। তবে এখন পর্যন্ত দলটি তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত দাবি দাওয়া সম্পর্কে অনড় অবস্থানই ধরে রেখেছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলছিলেন, তারা নির্বাচনে গেলে এই ইস্যুটিকে অবশ্যই বড় করে সামনে আনবেন।
‘এটা এখন আরো বেশি অগ্রাধিকার পাবে বর্তমান সরকারের আচরণের কারণে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অবশ্যই বিচার বিভাগের উপর আওয়ামী লীগের এই সরাসরি হস্তক্ষেপের বিষয়টি সামনে আনবে’।
প্রধান বিচারপতির সাথে সরকারের টানাপোড়েন চলাকালে বিএনপি যেসব প্রশ্ন তুলেছে, সেসবের জবাবও সরকারি দল আওয়ামী লীগ দিয়ে গেছে অব্যাহতভাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলছিলেন, এই ইস্যুটি এখন মৃত, এখান থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার আর কোন সুযোগ নেই।
তারপরও যদি ভোটের রাজনীতিতে বিরোধীরা ইস্যুটিকে সামনে আনার চেষ্টা করে, তবে তারাও তৈরী বলে জানান এ উপদেষ্টা।
‘দেখুন ভোট দেয়ার সময় সাধারণ মানুষ এত হাইকোর্ট-সুপ্রীম কোর্টের মত বিষয় বিচার করে না। তারপরও যদি নির্বাচনে এ ইস্যুটি আসেও, তাহলে আমাদের কাছে যথেষ্ট দালিলিক তথ্য প্রমাণ আছে যে এখানে বিচার বিভাগের উপর কোন হস্তক্ষেপ হয়নি’।
ইমামের দাবি বিচারপতিদের সরিয়ে দেয়ার জন্য বয়স কমানো বা বাড়ানোর ঘটনা ঘটেছে বিএনপির আমলেই। ইতিহাস বলছে বাংলাদেশে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতার বদল ঘটেছে প্রায়ই। ১৯৭২ সালের সংবিধানে এটা ছিল সংসদের হাতে, ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীতে এই ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়।
১৯৭৮ সালে আবার বিচারপতিদের অপসারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাতিল করে গঠিত হয় সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। আর ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে দেয়া হয়েছিল৷ যেটা বাতিল হবার মাধ্যমে পরিষ্কার হয় সরকার ও বিচার বিভাগের মুখোমুখি অবস্থান।
তাইতো অনেকে মনে করেন, আওয়ামী সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ হয়ে উঠতে পারে আগামী নির্বাচনে বড় নিয়ামক।