বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশে মার্কিন নীতি

গত ১০ বছর বাংলাদেশে মার্কিন প্রভাব এবং আগ্রহ অপেক্ষাকৃত কম ছিল। স্বাধীনতার পরই বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ এবং নজরদারি করত, সেটা ২০১০ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। এই সময়ে উপমহাদেশে মার্কিন নীতি এবং কৌশলের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বারাক ওবামা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, উপমহাদেশ নিয়ে মার্কিন কৌশলপত্র নূতন করে সাজানো হয়েছিল।

সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারত নির্ভরতা বেড়েছে। ভারতের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতেই, উপমহাদেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষার কৌশল গ্রহণ করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য বাংলাদেশের বিষয়ে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ও অন্যান্য বিষয়ে নিষ্পত্তির বিষয়ে, ভারত নির্ভর হয়ে পড়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

আর এই কারণেই, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের ঘটনা প্রবাহের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা হ্রাস পেয়েছিল। ভারত যেটা বলে, সেটা সমর্থন দেওয়াই ছিল মার্কিন নীতির একটি অংশ।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি পরিবর্তিত হচ্ছে। তারা আর ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলাদেশ নীতি প্রণয়ন করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে ভারত নির্ভরতা তারা কমাতে চায়। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেন-দরবার এবং সম্পর্ক করতে চায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল বিনিয়োগ। বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে বিপুল সুযোগ তৈরি হচ্ছে, সে সুযোগে মার্কিন হিৎসা ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। এখানে চীনা আধিপত্য ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের যে সমস্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো হচ্ছে, সে সমস্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চীনা অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি।

মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে জায়গাই পাচ্ছে না। গত ৫/৬ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মকাণ্ড অনেক হ্রাস পেয়েছে, বলে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

বিশেষ করে মার্কিন যে আগ্রহের জায়গাগুলো তেল এবং জ্বালানী সে ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। এই বাস্তবতায় মার্কিন নীতি পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আরও আগ্রাসী বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে চায়, এ রকম ইঙ্গিত দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে একটা উন্নয়নের উৎসব চলছে। সর্বক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড গুলো চলছে। একদিকে, যেমন পদ্মা সেতু হচ্ছে; অন্যদিকে কর্ণফুলী টানেল, রুপপুর পারমানবিক প্রকল্প, মেট্রোরেলসহ বড় বড় বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ এখন বাংলাদেশে দৃশ্যমান। মজার ব্যাপার হলো, এ ধরনের বড় বড় কাজগুলোতে হয় চীন না হলে ভারত কাজ করছে। বড় বড় কাজগুলোতে হয় চীন না হয় ভারতের কোম্পানী অংশগ্রহণ করছে।

এখানে, মার্কিন ব্যবসা প্রসারে অনেক সুযোগ থাকার পরেও; সেই সুযোগকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাজে লাগাতে পারে নাই- বলেই তারা আত্নসমালোচনা করছে। এই প্রেক্ষিতে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার প্রসার করাতে হবে।

একইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশে একটা বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই বাজারে মার্কিন পণ্যের প্রবেশাধিকার বাড়ানো প্রয়োজন। ব্যবসায়িক সম্পর্কের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সম্পর্কের সমীকরণ রয়েছে।

রাজনৈতিক বিষয়গুলোর দিকে নাক গলিয়ে ব্যবসায়িক প্রভাব বৃদ্ধি করা যায়। আর সে কারণেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে, গত কিছুদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নাক গলানো বন্ধ ছিলো- সেটি আবার নতুন করে শুরু হতে পারে।

তবে একাধিক মার্কিন কূটনীতিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা আসলে ৩ নভেম্বর নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। নির্বাচনের পর হয়তো বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গী, নীতি, কৌশল পরির্বতন হবে। তবে, ওই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন- বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত নির্ভরতা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমাবে, তা নিশ্চিত।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin