mirza_fakhrul

‘পরিপূর্ণ লকডাউন’ চান মির্জা ফখরুল

দেশে পরিপূর্ণ লকডাউন চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারছে না। আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে করে এসব কথা বলেন।

লকডাউন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিপূর্ণ লকডাউন করা উচিত। যে ভয়াবহতা আসছে তা এখনো সরকার অনুধাবন করতে পারছে না। গতকালের চেয়ে আজকে দ্বিগুণ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ভারত একবারে ২১ দিন লকডাউন করেছে। ইউরোপ, আমেরিকা সব লকডাউনের পথে চলে যাচ্ছে। কারণ সামাজিক দূরত্ব ছাড়া এই মুর্হতে কোনো বিকল্প নেই। সেটাও সরকার করছে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। গতকাল বিএনপি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনে সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছিল। এসব বিষয় নিয়ে আজ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল আমাদের স্টেটমেন্ট যাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী আজকে রিয়্যাক্ট করেছেন সে জন্য আমরা কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয়েছি যে, নাহ, জনমতকে তিনি কিছুটা গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের কথা হচ্ছে, যে বিষয়গুলো আমরা উল্লেখ করেছি সে বিষয়গুলো নিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেভাবে কথা বলেননি। বিশেষ করে দিন এনে দিন খায় এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত অনেক বড় খাত। প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজের মধ্যে তাদের নিয়ে কথা নেই। এই খাতে আমরা ১৫ হাজার কোটি টাকার কথা বলেছি। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজের মধ্যে তা আসেনি।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনাকে ঋণের প্রণোদনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দিন এনে দিন খাওয় মানুষদের। তাদের রাস্তায় বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। তাদের বিষয়গুলো প্যাকেজে অবহেলা করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তবে তাদের কোনো কথা বলা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার পরীক্ষার কথা বললেও এখানে তা হচ্ছে না। ভেন্টিলেটরের সরবরাহ বাড়ানো নিয়ে কথা নেই।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ইতিবাচক মনে হয়েছি কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইতিবাচক তখনই বলে পারতাম যদি আমরা দেখতাম আসল সমস্যাটা সমস্যা সমাধান করার জন্য তারা উদ্যোগী হয়েছেন।’ তিনি বলেন, এই টাকা তো পুরোটাই ঋণ। এখানে অনুদান বলে কিছু নেই।

সরকারের এক বিভাগের সঙ্গে আরেক বিভাগের কোনো সমন্বয় নেই জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেট যে তৈরি করা হবে, সে সম্পর্কেও কোনো আলোচনা নেই। একটা দুর্যোগময় মুহূর্তকে কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যাবে তার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, সেটা রাজস্ব থেকে আসবে, সেটার আয় আসবে কোত্থেকে সে সম্পর্কে কিছু বলা নেই। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে, সমন্বয়ের কোনো বিষয় নেই। এক বিভাগের সঙ্গে আরেক বিভাগের সমন্বয় নেই।’ তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক কথা বলছেন, আইইডিসিআর পরিচালক বলছেন আরেক কথা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা শুনলে তো মনে হবে দেশে ভাইরাসের কোনো সমস্যা নেই।

গতকাল পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণায় রাজধানীমুখী মানুষের ঢল নামে। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গার্মেন্টস খোলার ঘোষণায় সবাই বন্যার পানির মতো ছুটে আসছে। রাতে আবার ছুটি দেওয়া হলো। এটা জোক ছাড়া কিছু না। কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে, বিজিএমইএর কথাই বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল যারা আছেন তাদের কথাই বলেন- এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এটা তো কোনো ছেলে খেলা নয়।’

সরকার দলীয়রা বিএনপি দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলছে- সরকার দলীয় নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোথায় দেখলেন যে দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলছি। কাণ্ডজ্ঞানহীনতা কোথায় দেখলেন? ২৭ দফা দিয়েছি প্রত্যেকটাই যুক্তিসংগত। সরকার ব্যর্থ হয়েছে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য যে মানসিকতা ছিল সেটা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

বিএনপি ঘরে বসে অভিযোগ করছে, মানুষের পাশে নেই- এমন অভিযোগের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দায়িত্বটা সম্পূর্ণ সরকারের। আমাদের নেতাকর্মীরা যতটুকু সম্ভব নিরাপত্তা বজায় রেখে কর্মজীবী মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন।’

প্রথম আলো

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin