সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আজ বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র ব্রেকিংনিউজকে এ তথ্য জানিয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
রসিকে সেনা চায় বিএনপি
আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ভোটারদের যেভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তাতে করে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পিছনের দরজা দিয়ে বিজয়ী করতে কারচুপির চেষ্টা করলে জনগণ মেনে নবে না। তাই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে সেনা মোতায়েন করার দাবি জানাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার (০৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভূইয়া, আব্দুস সালাম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুস সালাম আজাদ, আব্দুল আউয়াল খান, মুনির হোসেন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্রেকিংনিউজ
রোহিঙ্গাদের তিলে তিলে মারা হচ্ছে
মহাত্মা গান্ধীকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘পশ্চিমা সভ্যতা সম্পর্কে আপনার ভাবনা কী?’ উত্তরে গান্ধী যে বুদ্ধিদীপ্ত সরস মন্তব্য করেন, তা স্মরণীয়। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা ভাবনার একটা ভালো বিষয় হতে পারে।’ তিনি মূলত বোঝাতে চেয়েছিলেন, ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের পশ্চিমা সভ্যতা বৃহত্তর অ-পশ্চিমা জগতের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা থেকে পশ্চিমা সভ্যতাকে আর যা-ই হোক, সভ্য বলা যায় না।
ইতিহাসে পরিহাসের অভাব নেই। গান্ধী যদি জীবিত থাকতেন, তাহলে তাঁর মতো মহান মানুষ সাদা মানুষদের পশ্চিমা সভ্যতার তুলনায় আমাদের এশীয় সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব বোধ করতেন কি না, এ নিয়ে আমি নিঃসন্দেহ নই।
মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গমস্থল। দেশটি আজ সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বর আক্রমণ চালাচ্ছে, সে তাদের আইনি নাম যা-ই হোক না কেন, আর এই নিধনযজ্ঞকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা বা সাংবাদিকতার পরিভাষায় ‘জাতিগত নিধন’ বা যা-ই বলুন না কেন।
ব্যতিক্রমহীনভাবে আসিয়ান বা সার্কের কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান মিয়ানমারের উত্তর আরাকান বা রাখাইন প্রদেশের বধ্যভূমি সফর করেননি, সেটা করার মতো উদ্বিগ্ন তাঁরা নন। অথবা তাঁরা কেউই আমার দেশের বৌদ্ধদের পরিচালিত এই গণহত্যা বন্ধ করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা হাতে নেননি।
খেয়াল করুন পাঠক, আমি এখানে উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করিনি। তবে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা তাদের শিবির পরিদর্শন করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গাদের আকুতিতে দৃশ্যত আবেগপ্রবণ হলেও মিয়ানমারের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রাজনীতিক অং সান সু চি নিজ দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধের কথা স্বীকার করেননি বা এই জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা দেখাননি।
বাস্তবতা হলো একদল সুপরিচিত দলবাজ ও জেনারেল দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে সু চি যেভাবে রাখাইন সফর করলেন তাতে মনে হলো, তিনি বনভোজন করতে গেছেন। আর যে রোহিঙ্গারা এখনো সেখানে টিকে আছে, তাদের বললেন, বৌদ্ধ প্রতিবেশীদের সঙ্গে ‘ঝগড়া করবেন না’। সু চি অক্সফোর্ড থেকে শিক্ষালাভ করে এসেছেন। একসময় তাঁকে ভুলভাবে নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ও গান্ধীর কাতারে ফেলা হতো। তাঁর মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি দৃশ্যমান সহানুভূতি দেখা যায়নি।
আবার তাঁর মধ্যে সেই বুদ্ধিবৃত্তিক ঝলকও দেখা যায়নি যাতে মনে হতে পারে তিনি বুঝতে পেরেছেন, এই গণহত্যা সুনির্দিষ্টভাবে পূর্বপরিকল্পিত ও রাষ্ট্রনির্দেশিত। এটা প্রতিবেশীদের মধ্যকার বিবাদ নয়, সাম্প্রদায়িক ও উপদলীয় কোন্দল নয়।
মিয়ানমারের সাবেক বৈশ্বিক আইকন, বৌদ্ধদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও স্বাধীনতার পরাকাষ্ঠা সন্দেহাতীতভাবেই আরেকজন রাজবংশীয় শাসক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি রাজনীতিক হিসেবে গড়পড়তা। ব্যক্তিগত অভিলাষ পূরণে তিনি যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত, এবং তাঁর উচ্চাভিলাষ আমাদের বোধগম্য। অন্যদিকে সু চির মতো অতটা উজ্জ্বল না হলেও আসিয়ান ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর নেতারা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার ব্যাপারে তাঁর চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন নন। এটা যেমন চপস্টিক সভ্যতার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের বেলায় সত্য, তেমনি এই অঞ্চলের ভারতীয় সভ্যতার সংস্পর্শে থাকা দেশগুলোর বেলায়ও সত্য।
আমি ও আমার সহগবেষক অ্যালিস কাউলি এই প্রক্রিয়াকে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মন্থর গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করি। ব্যাপারটা হলো মিয়ানমার রাষ্ট্র কর্তৃক রোহিঙ্গাদের এই নিপীড়ন বা যাদের বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে, এই জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে তারা এসব করেছে—আমরা এটার নাম দিয়েছি তিলে তিলে গণহত্যা (স্লো বার্নিং জেনোসাইড)। এই গণহত্যার যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এশীয় দেশগুলোর নেতারা নৈতিক ঐকমত্য পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারেননি। কিন্তু ব্যাপারটা তো এমন নয় যে এশীয় সভ্যতা ও রাজনীতিকেরা এই বর্বরতা সম্পর্কে অবগত নন।
বস্তুত, দূরপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কিছু জঘন্য রকমের বড় গণহত্যা হয়েছে, জাতিসংঘ তাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিক বা না দিক। উদাহরণ আমাদের চারপাশেই আছে। জাপান চীনে ‘নানকিং ধর্ষণ’ হিসেবে কুখ্যাত গণহত্যা চালিয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্টবিরোধী কর্মসূচি হিসেবে চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান আজকের বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে গণহত্যা চালিয়েছে, কম্বোডিয়ায় কমিউনিস্ট খেমাররুজরা গণহত্যা চালিয়ে চার বছরের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মেরেছে; আর শ্রীলঙ্কায় তামিল জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসহ গণহত্যা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চি সংখ্যাগরিষ্ঠের উন্নতিকল্পে বিকৃত প্রায়োগিক যুক্তি প্রয়োগ করছেন। সে জন্য তিনি দুর্বল রোহিঙ্গাদের জান-মালের বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত নন। এই রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রবিহীন জাতি, যাদের জাতি-রাষ্ট্র নেই। বর্মি হিসেবে আমার নাড়ি এশীয় সভ্যতার অনেক গভীরে পোঁতা, আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, ‘এশীয় সভ্যতা সম্পর্কে আমি কী মনে করি?’ হ্যাঁ, সেটা একটা ভালো চিন্তা হতে পারে।
মং জার্নি: পাশ্চাত্যে বসবাসরত মিয়ানমারের মানবাধিকারকর্মী ও গণহত্যা বিশেষজ্ঞ।