২৫ মাস কারাভোগের পর বেগম খালেদা জিয়া এখন জামিনে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুকম্পায় সরকারের নির্বাহী আদেশে এ জামিন দেয়া হয়েছে। ২৫ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া জামিন পান এবং তার জামিনের মেয়াদ ছিল প্রথমে ৬ মাস। পরবর্তীতে এই জামিনের মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এই হিসেবে আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া জামিনে থাকার কথা। সরকার দুটি শর্ত সাপেক্ষে এই জামিন দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া বাড়িতে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে বিএনপির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যে বেগম খালেদা জিয়া সমঝোতার মাধ্যমেই জামিন পেয়েছেন। আবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির একাংশ মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়া আসলে বাড়িতে আছেন।
তবে তিনি গৃহবন্দি, তার কোন মৌলিক অধিকার নেই এবং তাকে কোনো রকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। যদিও বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অস্বীকার করা হচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সবচেয়ে প্রধান যে প্রশ্নটি এসেছে, সেটাহল বেগম খালেদা জিয়ার জামিন কি বাতিল হয়ে যাবে? বেগম খালেদা জিয়ার জামিন যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার ফসল এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোন সন্দেহই নেই।
যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি গণতান্ত্রিক এবং স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া জামিনে থাকবেন এটি একটি অলিখিত চুক্তির মতই। তাই এখন যখন বিএনপি রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
তখন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল হয়ে যাবে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বিএনপি নেতারা গত কিছুদিন ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন।
বিশেষ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কয়েকজন নেতা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আর সর্বশেষ দশটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে যে আবার কি সহিংসতায় পথেই হাঁটছে বিএনপি? যদিও বিএনপি রাজনীতিতে সহিংসতার পথে যায়, তাহলে খালেদা জিয়ার জামিনের কি হবে। এই প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন উঠছে। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকেও এ ধরনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি সহিংস পথে না গিয়ে, স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় থাকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেভাবেই বিএনপি ধারাবাহিকভাবে প্রথমে সংসদে গেছে, নারী আসনে মনোনয়ন দিয়েছে এবং সর্বশেষ তারা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে এগোতে চাইছে ।
আর এ কারণেই একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি অনুকম্পা দেখিয়েছে সরকার। অর্থাৎ ও বেগম খালেদা জিয়া ততক্ষনই মুক্ত হয়ে তার ফিরোজা বাসভবনে থাকতে পারবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি সহনীয় মাত্রায় রাজনীতি করবে, সহিংসতা জ্বালাও-পোঁড়াও ইত্যাদি করবেনা। যদি বিএনপি সহিংস রাজনীতিতে জ্বালাও-পোঁড়াও করে তাহলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সে মামলাগুলো যেমন সচল হবে। পাশাপাশি ভাবে যারা এই ধরনের সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। শুধু তাই নয় এরকম রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হলে বিএনপিকে চাপে ফেলার কৌশল নিবে সরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির তুরুপের তাস বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপিকে চাপে রাখার সবচেয়ে ভালো ঔষধ হলো খালেদা জিয়ার জামিন। যদি বিএনপি রাজনীতিতে সহনীয়তার মাত্রা অতিক্রম করে, সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করার পথে সরকার এগোতে পারে।
কারণ খালেদা জিয়ার যে জামিন, সেটি আদালতের কোন আদেশ নয় বরং সরকারের নির্বাহী আদেশে জামিন যেকোনো সময় সরকার বাতিল করতে পারে। তাই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বিএনপিকে চাপে ফেলার এক মোক্ষম অস্ত্র সরকারের হাতে আছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই প্রেক্ষাপটেই এভন প্রশ্ন উঠেছে যে, বিএনপির এই আন্দোলনকে কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
বাংলা ইনসাইডার