bnp-flag

এবার পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণ দলীয় শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে দলটি। তৃৃণমূল নেতাকর্মীদের সমস্যা, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত নিরসন এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ সব স্তরের কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। কমিটি পুনর্গঠনে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী ও তৃণমূল নেতাদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতারা যাতে বাদ না পড়েন, সে ব্যাপারে দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশ। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়টি সমাধান না হলে, তা আদায়ে আন্দোলন জোরদার করবে বিএনপি।

হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনা পেয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের মতামত ও পরামর্শসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাইকমান্ডের নির্দেশ পেয়ে বুধবারই ঘোষণা করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা বিএনপির কমিটি। আরও এক ডজন জেলার নতুন কমিটি পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। দ্রুতই তা শেষ করা হবে।

এ ছাড়া যেসব এলাকায় কোন্দল রয়েছে তা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যারা দলে কোন্দল সৃষ্টি করবে বা জিইয়ে রাখবে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা দলীয় পদ হারাতে পারেন। পাশাপাশি তারা মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনীতি ও দলের করণীয় বিষয়ে নেতাদের কাছ থেকে মতামত নেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুই বৈঠকেই নেতারা দল গোছানোর পক্ষে মত দেন। তারা বলেন, আন্দোলন বা নির্বাচন উভয়ের জন্যই সংগঠন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। সংগঠন ঠিক থাকলে আন্দোলন কিংবা নির্বাচন যে কোনো পদক্ষেপই সফল হওয়া সম্ভব।

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে। এ ছাড়া কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টিও বৈঠকে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। আগামী নির্বাচনের আগে এসব কোন্দল নিরসন সম্ভব না হলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নেতাদের এমন মতামতের পরেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। পুনর্গঠনের সর্বশেষ অবস্থা অবহিত হয়ে দ্রুত এ প্রক্রিয়া শেষ করতে নির্দেশ দেন তিনি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোহাম্মদ শাজাহান যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে দল পুনর্গঠনের দিকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। দ্রুত পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশ পেয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিগুলো দ্রুত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন এবং আন্দোলন উভয়ের জন্য দল শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া যেসব এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা হবে। আগামী নির্বাচনে দলের পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে চাই আমরা।

বৈঠকে একাধিক নেতা মতামত দেন, ঢাকায় বসে দল পুনর্গঠন করলে চলবে না। তৃণমূলে গিয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি করা উচিত। এতে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও কমবে। ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে এক নেতা জানান, আগামী নির্বাচন এবং আন্দোলনকে সামনে রেখে আমাদের দল গোছানো উচিত। প্রতিটি সংসদীয় আসনের সাংগঠনিক প্রকৃত চিত্র তুলে এনে তারপরই এ কাজে হাত দিতে হবে।

কারণ, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কমিটি নিজেদের কব্জায় নিতে মরিয়া। এতে কয়েকটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করা না হলে সংগঠন শক্তিশালীর পরিবর্তে কোন্দলে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আগামী সংসদ নির্বাচনে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু যুগান্তরকে বলেন, কোন্দল মিটিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলে যাতে কোনো দুর্বলতা না থাকে সে জন্য এখন থেকে সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি।

তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন সংগঠন দ্রুত গোছানোর তাগিদ দেয়ার পাশাপাশি দলে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তাদেরকে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।

বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে এক উপদেষ্টা বলেন, দল যাতে নির্বাচননির্ভর অর্থাৎ এমপিনির্ভর না হয়ে পড়ে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের জেলা বা তৃণমূলের দায়িত্ব না দেয়ার পক্ষে মত দেন ওই নেতা। তবে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে অনেক স্থানে হয়তো এভাবে কমিটি করা সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করা উচিত। যাতে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা তার বিরোধিতা না করেন।

আবার দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল বিশেষ করে সংসদীয় আসনের নেতাদের মতামত নেয়া উচিত বলে মত দেন তিনি। অতীতে দেখা গেছে, যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন তাদের বাদ দিয়ে হঠাৎ করে অচেনা কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেননি। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় তার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতাকর্মীরা নির্বাচনে নামেননি। তাই ভবিষ্যতে যাতে এমনটা না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে চেয়ারপারসনের প্রতি অনুরোধ জানান ওই নেতা।

উভয় বৈঠকেই দলের কোন্দলের বিষয়টিও উঠে আসে। তারা অভিযোগ করেন, কোন্দলের কারণে দলের সাংগঠনিক শক্তি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কোন্দল জিইয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছেন বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ। সম্প্রতি ফেনীতে চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে এক নেতা বলেন, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত ফেনীতে গাড়িবহরে হামলার সাহস পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির মুরাদ যুগান্তরকে বলেন, জেলা কমিটিগুলো দ্রুত পুনর্গঠন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। যেসব জেলায় বিরোধ আছে তা চিহ্নিত করে শিগগির মীমাংসা করার জন্য বলেছেন তিনি। যারা দলে বিভেদ-বিশৃঙ্খলা করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে বলে কড়া হুশিয়ারি দেন চেয়ারপারসন।

জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে বেশ কয়েকটি জেলা কমিটির কাজ প্রায় শেষ করে আনেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু অজানা কারণেই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে যায়। সম্প্রতি চেয়ারপারসনের নির্দেশ পেয়ে আবারও মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনে কাজ শুরু করা হয়েছে। যেসব কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো হল- ময়মনসিংহ মহানগর, ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুর জেলা, কুমিল্লা মহানগর, কুমিল্লা দক্ষিণ, খুলনা মহানগর, বগুড়া, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, ফেনী, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, নরসিংদী, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, নড়াইল ও কুষ্টিয়া।

যুগান্তর

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin