আত্মবিশ্বাসী-উজ্জীবিত বিএনপি

দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে বড় একটি সমাবেশ করলো বিএনপি। দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই জনসভা নিকট অতীতে ঢাকা শহরে যে কোনটির চেয়ে বৃহত্তম হিসেবে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নয়াপল্টনকে কেন্দ্র করে নাইটিঙ্গেল, কাকরাইল, শান্তিনগর, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগসহ এর আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ছিল।

তীব্র গরম, বাধা বিপত্তি, মামলা-হামলার পরও ঢাকার এই জনসভায় গণজোয়ার হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা এখন অনেক চাঙ্গা। আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেছেন দলের নীতিনির্ধারণী নেতারাও। দলকে আন্দোলনমুখী করা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামার আগে এধরণের একটি জনসভা খুব জরুরী ছিল বলে মনে করেন তারা।

জনসভায় লোকে লোকারণ্য দেখে একই রকম উজ্জীবিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। এই জনসভার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে যে হতাশা ছিল সেটা একেবারের কেটে গেছে। তারা মনে করেন, বিএনপি যদি শর্তহীনভাবে সমাবেশ করার সুযোগ পায় তবে আওয়ামী লীগ বুঝতে পারবে তাদের জনপ্রিয়তা কতটা?

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই জনসভা নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেছে। জনসভায় উপস্থিত হয়ে সকলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ ভেঙে দেয়া, ইভিএম বাতিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের যে দাবি বিএনপি জানিয়ে আসছে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

এতে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির এসব দাবির প্রতি দেশের জনগণের সমর্থন রয়েছে। এজন্য তিনি সরকারকে গণতন্ত্রের স্বার্থে জনগণের এই দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। অন্যত্থায় আন্দোলনের মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে। আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ১ সেপ্টেম্বরের জনসভাও চলমান আন্দোলনের অংশ। সামনেও আমাদের কিছু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আসবে। এছাড়া জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয় তো আছেই।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে জনগণ সরকারকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে দেশে কোন নির্বাচন সম্ভব না। বিএনপি যে দাবি ও ইস্যু নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে তারা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে তার তারা প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং বিএনপিকে দিয়েই যে তাদের দাবি আদায় হবে তারও বার্তা দিয়েছে।

ঢাকা বিএনপির নেতারা জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশটি ঢাকায়ও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী তার প্রমাণ দিয়েছে। কেবল ঢাকা ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে এই সমাবেশ সকলকে অবাক করে দিয়েছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির এবং এই সরকারের পদত্যাগের দাবি জানাতে নেতাকর্মীদের সাথে দলে দলে সাধারণ মানুষ ছুটে এসেছে। তারা বলেন, দেশের মানুষ এই সরকারের কাছ থেকে রক্ষা চায়, বিকল্প চায়। আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশ, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে পারে বিএনপিই এই সমাবেশই তার প্রমাণ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির জনসভায় মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। এটি আমাদের দল এবং দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে নিতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। বিএনপি যে দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েই তারা জনসভায় অংশগ্রহণ করেছে।

এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছে এসব দাবি কেবল বিএনপির না, জনগণের দাবি। আর তাদের দাবি বিএনপির মাধ্যমে আদায় হবে বলেও তারা বিশ্বাস করে। কারণ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের অবসান চায়, রক্ষা চায়। তারা বিকল্প চায়। আর এই বিকল্প হচ্ছে বিএনপি।

বিএনপিই আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের অবসান করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। পরিবর্তন আনতে পারে। যেমন অতীতে হয়েছে, আগামীতেও হবে।

বিএনপির এই জনসভা কেবল ঢাকা নয়, তৃণমূল নেতাকর্মীদেরকেও চাঙ্গা করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ঢাকার বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশ নিয়ে তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বলে জানান। দলটির নেতারা জানান, তৃণমূল এধরণের একটি সফল সমাবেশ দেখে নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে।

তারা মনে করে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। একইসাথে তারা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে তাও জনগণের দাবিতে পরিণত করতে পেরেছে। এরফলে জনগণ এখন বিএনপির ডাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। ঢাকার সমাবেশের পর সারাদেশের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি মহাসমাবেশ করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপও বাড়ছে বলে জানান তারা।

ঢাকা মহানগরীর ধানমন্ডি থানা বিএনপির নেতা মো: আবুল হোসেন চৌধুরী লিটন ও মো: ইয়াসিন মোল্লা বলেন, সমাবেশে লাখো মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। জাতি বুঝতে পারবে বিএনপি এখনো বর্তমান সরকারকে হটাতে সক্ষম। আশা করছি, দলের হাইকমান্ড সাধারণ নেতাকর্মীদের সেন্টিমেন্ট বুঝে আগামী নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। নির্দেশনা পেলে আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ব।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দু’দিন আগে বলেছিলেন বিএনপির জনসমর্থন নাই, তাদের কোন লোকজন নাই। তারা ডাকলে কেউ আসে না।” বিএনপির জনসভার পর লজ্জা থাকলে ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ করা উচিত। দেশের মানুষ তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, তারা বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আছে। সমাবেশের পর নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে জানিয়ে আব্দুস সালাম বলেন, এই সমাবেশ নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়ে সরকারকেও তারা নতুন বার্তা দিয়েছে। সরকারকে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি-বেগম খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে অবৈধ পথে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পাড়ি দেয়া সহজ হবে না। খালেদা জিয়াকে ছাড়া একতরফা নির্বাচন তারা মেনে নেবে না। ঢাকার বাইরে থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশের চিত্র দেখে দারুন উজ্জীবিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কেবল ঢাকা ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলার নেতাকর্মীদের দাওয়াত দিয়েছিলাম। কিন্তু এতেই বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি সত্যিই সকলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারাদেশের নেতাকর্মীদের নিয়ে জনসভা করার জন্য তৃণমূলের দাবি রয়েছে বলেও তিনি জানান।

আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন জানান, নয়াপল্টনের জনসভা প্রমাণ করে বিএনপির জনপ্রিয়তার কোনো কমতি নেই। বরং বিগত এক দশকে আওয়ামী লীগের নিপীড়ন নিষ্পেশনের বিরুদ্ধে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা বিএনপিকে ভালোবাসে বলেই সভায় অংশগ্রহণ করেছে। আর তাদের সকলের দাবি ছিল আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি পরে নির্বাচন। তিনি বলেন, এই জনসভার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে যে হতাশা ছিল সেটা একেবারের কেটে গেছে। বিএনপি যদি শর্তহীনভাবে সমাবেশ করার সুযোগ পায় তবে আওয়ামী লীগ বুঝতে পারবে তাদের জনপ্রিয়তা কতটা?

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনসভায় জনতার ঢল নেমেছিল। অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে এই অবৈধ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। তারা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে ফের একতরফা নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সে নির্বাচন দেশের মাটিতে আর হবে না, হতে দেয়া হবেনা। এবার চারদিকে তাদের পতনের আওয়াজ উঠেছে। এতো হামলা-মামলা, গুম-খুনের পরও বিএনপির সমাবেশে যেভাবে লোকসমাগম হয়েছে তা রীতিমতো সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ।#

উৎসঃ   ইনকিলাব

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin