জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার হাজিরা দিতে মঙ্গলবার বিশেষ আদালতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এ মামলার হাজিরা দিতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়া উপস্থিত হবেন। এদিন রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান যুক্তি উপস্থাপনের জন্য এদিন ধার্য করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় দ্বিতীয় মামলাটিও করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করা হয়।
এদিকে খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
খালেদা জিয়ার কিছু হলে যেভাবে চলবে বিএনপি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। এই নিয়ে চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক উত্তাপ। সরকার পক্ষ ও বিএনপির মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। তবে খালেদা জিয়ার সাজা হবে কিনা তা নিয়ে চলছে নান আলোচনা, হিসাব-নিকাশ। রায়ে যদি খালেদা জিয়া জেলে চলে যেতে হয় তাহলে সেই সময় বিএনপি কীভাবে চলবে, সেই প্রস্তুতিও নিয়েছে জোট।
বিএনপির নেতারা বলছে, খালেদা জিয়াকে জেলে দেয়া হলে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে যাবে বিএনপি। এছাড়া খালেদা জিয়া ছাড়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে যাবেন না তারা।
খন্দকার মেশাররফ বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য রায় দেয়া হলে মু্ক্তির আন্দোলন নয়, সরাসরি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন এই নেতা।
এছাড়াও বিএনপির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া জেলে চলে গেলেও দল পরিচালনায় কোনো সমস্যা হবে না। যদিও বিএনপির এই নেতারা মনে করেন, যে মামলায় খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে- তার কোনো ভিত্তি নেই। তবু রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়া হলে দল কীভাবে পরিচালনা হবে- সে ব্যাপারে একটা ধারণা দলের নেতাদের রয়েছে। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহামানের পরামর্শে চলবে দল।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন, খালেদা জিয়া যখন চিকিৎসার জন্য তিন মাস লন্ডনে ছিলেন তখন আমরা বিএনপি পরিচালনা করেছি না? সবচেয়ে বড় কথা হলো- আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে আছেন, তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করার সুযোগ থাকবে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে যৌথ নেতৃত্বে আমরা দল পরিচালনা করব।
এদিকে রায়ের তারিখ ঘোষণার দিনেই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা হলে দেশে আগুন জ্বলবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, এই অবৈধ সরকার পূর্বেই রায় লিখে রেখেছেন। তবে এই বিচারের প্রহসনের কোনও প্রয়োজন ছিল না। দেশে যে আইনের শাসন নেই-ন্যায়বিচার সুদুর পরাহত সেটাই প্রমাণিত হলো। বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলছেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি সরকারকে বলে দিতে চাই, কিছু মানুষ আছে যাদেরকে অল্প কিছুদিন ভয় দেখিয়ে চুপ রাখা যায়। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই। খালেদা জিয়ার কিছু হলে জনগণ তার জবাব দেবে’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে সরকার পক্ষের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে বিশৃংখলা হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মামলার রায়ের পর সন্ত্রাসী কার্যক্রম করলে প্রতিরোধ করবে জনগণ।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিএনপি। তদের নেতাকর্মীদের বক্তব্যে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, আদালতের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন হস্তক্ষেপ করেনি সরকার। আর কখনো করবেও না। যদি এই রায় নিয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়, দেশে সন্ত্রাসের কার্যকলাপ করা হয় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা তা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
রায় ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গত শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রায়ে যদি খালেদা জিয়ার সাজা হয়, সে ক্ষেত্রে দলের রাজনৈতিক ও আইনগত প্রক্রিয়া কী হবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রায়ের পর বিএনপির প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত, সেটিও আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া রায়ের পর বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রতিক্রিয়ার কারণে সরকার তাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়িয়ে দেবে কি না, সেটি আলোচনা করেছেন বিএনপি নেতারা।
বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, তড়িঘড়ি করে খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা সরকারের ষড়যন্ত্র বলে মনে করে স্থায়ী কমিটি। এ রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গোটা জাতি আজ ক্ষুব্ধ। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য এবং সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনকে নষ্ট করার জন্য এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। স্থায়ী কমিটি এর নিন্দা জানাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়াকে হয়রানি করার জন্য ‘জাল নথি’ ও ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা সাজানো হয়েছে। এই মামলায় সাক্ষী ও বিচারপ্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ নিয়েও তাঁরা আশ্বস্ত নন। যে কারণে তাঁরা মনে করেন, খালেদা জিয়াকে সম্মানজনকভাবে এই মামলায় খালাস দেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো কারণে যদি খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে বিএনপি এর প্রতিবাদ করবে। সরকার পতনের আন্দোলনই হবে বিএনপির সেই প্রতিবাদ।