টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ
ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন দেখে এখন একাদশ অনুমান করা কঠিন। সব খেলোয়াড়ই কঠোর পরিশ্রম করেন, সব খেলোয়াড়কেই সমান সময় দেন কোচিং স্টাফ। প্রেমাদাসার নেটে কালকের অনুশীলন দেখে যেমন বোঝা কঠিন হলো আজ ভারতের বিপক্ষে ঠিক কোন একাদশ নিয়ে নামছে বাংলাদেশ। তবে দুইয়ে দুইয়ে চার তো মেলানোই যায়।
সেটি হলে আজ দুটি পরিবর্তন দেখা যেতে পারে একাদশে। নিদাহাস ট্রফিতে প্রথম দুই ম্যাচ একই একাদশ নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। আজ একাদশে পরিবর্তন আসার জোর সম্ভাবনা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাজে বোলিংয়ের ‘শাস্তি’ হিসেবে হিসেবে তাসকিন আহমেদের একাদশের বাইরে থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। তাঁর জায়গায় সুযোগ মিলতে পারে আবু হায়দারের।
একাদশে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেটি জানতে পেরে কিনা কাল প্রেমাদাসার নেটে নিজেকে দারুণভাবে প্রস্তুত করলেন বাঁহাতি পেসার। শোনা যাচ্ছে, ছন্দ হারিয়ে ফেলা সাব্বির রহমানকে বাদ দিয়ে আরিফুল হককে এ ম্যাচে সুযোগ দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবের দিনেও যেভাবে দৃষ্টিকটু রানআউট হয়েছেন সাব্বির, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পর্যন্ত তাঁর বিরক্তি লুকাননি।
সাব্বিরকে বসিয়ে দেওয়ার জোর গুঞ্জন আছে। প্রতিপক্ষ আর মাঠের কন্ডিশন বুঝে যেভাবে ইচ্ছে একাদশ নির্বাচন করতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু টস তো আর চাইলেই নিজেদের পক্ষে আনা যায় না—এ যে ভাগ্যের খেলা! নিদাহাস ট্রফিতে প্রতি ম্যাচেই টস হয়ে উঠেছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিজে, যে দলই টস জিতছে, তারা ফিল্ডিং নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচও জিতছে টসজয়ী দল। আজ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও টস যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সেটিই কাল বললেন মাহমুদউল্লাহ, ‘টসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খেয়াল করে দেখবেন, প্রতি ম্যাচেই রান তাড়া করে জিতছে সবাই। পিচ মনে হয় আরও ভালো হতে পারে, ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও সহজ হতে পারে। ব্যাটসম্যানরা যদি সুযোগ কাজে লাগাতে পারে…টস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। টস জিততে পারলে ফল আমাদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’
আর যদি টস না জিততে পারেন? তবুও ফল পক্ষে নিয়ে আসতেই খেলতে হবে মাহমুদউল্লাহদের।
আবারও ‘নাগিন নাচ’ নাচতে চান মুশফিক
মুশফিকুর রহিমের উদ্যাপন বেশ আলোচিত হয়েছে গত দুই দিনে। তাঁর ‘নাগিন নাচ’ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাঁধনহারা উদ্যাপন মুশফিকের নতুন নয়। তবে পরশু প্রেমাদাসায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলকে জিতিয়ে যে ভঙ্গিমায় নেচেছেন, সেটি অবশ্য ব্যতিক্রম।
জয়ের পরে তো নয়ই, এমনকি কাল টিম হোটেলে বারবার অনুরোধের পরও মুশফিক কিছু বলতে চাইলেন না এ নিয়ে।
গতকাল বিকেলে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের (এসএসসি) নেটে অনুশীলন করতে এসে শোনালেন তাঁর উদ্যাপনের গল্প, ‘এটা সাধারণ একটা উদ্যাপনই। হয়তো সবার ভালো লেগেছে, এত মাতামাতি হচ্ছে সে কারণে। দল জিতেছে, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আগে থেকে পরিকল্পিত কিছু ছিল না। উদ্যাপনটা দেখে অবশ্য বুঝতে পারবেন, জয়টা আমাদের কতটা দরকার ছিল।’
এক জয়েই শেষ নয়, বাংলাদেশ দল এ ছন্দটা ধরে রাখতে চায় সামনেও। একটি ম্যাচ জিতিয়ে মুশফিকও থামতে চান না। দুর্দান্ত ইনিংস খেলে এমন উদ্যাপন তিনি করতে চান আবারও, ‘এমন উদ্যাপন অবশ্যই আরও করতে চাইব। যেভাবে কঠোর পরিশ্রম আমরা করছি, এটা চাইতেই পারি। আসলে মানুষ শুধু ম্যাচের ফলটা দেখে। হয়তো গত কয়েক ম্যাচে ভালো করতে পারিনি, হয়তো একজন ব্যাটসম্যান একটু খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যে আসলে কতটা কষ্ট করছি, সেটা আমরাই জানি।’
ম্যাচের পর তামিম ইকবাল বলেছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁরা যেভাবে খেলেছেন, এটা হচ্ছে ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড’। দলে হয়তো দুর্দান্ত ফিনিশার নেই, বড় পাওয়ার হিটার নেই। তবে অনেক ‘স্মার্ট ক্রিকেটার’ আছে। মুশফিক একমত তামিমের সঙ্গেও, ‘তামিম যেটা বলেছে, ওটাই আসল কথা। অন্যরা কী করতে পারে, সেটা না দেখে আপনি কী করতে পারেন, আপনার দলের শক্তির জায়গা কী, সেটা নিয়ে ভাবা উচিত।
আমরা সেটি চেষ্টা করছি। যদিও টি-টোয়েন্টিতে আমরা অতটা ধারাবাহিক না। আমরা চেষ্টা করছি নিজেদের পরিকল্পনা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে। তামিম যেমন বলেছে, আমাদের পিঞ্চ হিটার নেই, তবে কিছু ভালো, বুদ্ধিমান খেলোয়াড় আছে। তারা তাদের শক্তি, দক্ষতার জায়গাগুলো শতভাগ কাজে লাগাতে পারলে যেকোনো সংস্করণেই আমাদের জেতার সুযোগ আছে। এ ব্র্যান্ডটাই আশা করি আগামী দিনে আপনারা দেখতে পাবেন।’
সেটিই তো দেখার অপেক্ষায় গোটা বাংলাদেশ।
মাটিতে পা রেখে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন বাংলাদেশের
দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি থামলে উইকেটটা একবার দেখতে গেলেন মুশফিকুর রহিম। উইকেটের দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ অদৃশ্য ব্যাটে শ্যাডোও করলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত ইনিংস এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। কাল ভারতের বিপক্ষে সেটির পুনরাবৃত্তির লক্ষ্য মুশফিকের।
কলম্বোর প্রেমাদাসায় পরশু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ শুধু জেতেইনি; ক্রিকেটে একটি নতুন ধারার গোড়াপত্তনও করেছে, তামিম ইকবাল যেটির নাম দিয়েছেন ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের ক্রিকেট’। দলে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো দুর্দান্ত ফিনিশার নেই, ক্রিস গেইলের মতো পাওয়ার হিটার নেই। তবে স্মার্ট ক্রিকেটার আছে।
তামিমের কথায় একমত মুশফিক। সহমত মাহমুদউল্লাহরও। বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আজ সংবাদ সম্মেলনে বললেন, কলম্বো থেকেই যাত্রা শুরু নতুন এ ব্র্যান্ডের ক্রিকেট, ‘শ্রীলঙ্কা সফরে আসার আগে আমাদের প্রথম লক্ষ্যই ছিল ফাইনাল খেলা।
আমরা চাই ফাইনাল খেলতে। একটি ম্যাচ জিতে অনেক কিছু করে ফেলেছি, সেটি নয়। পা আমাদের মাটিতেই আছে। আগের দিনে তামিম বলেছে, এটা আমাদের শুরু। টি-টোয়েন্টিতে আমাদের নিয়ে অনেক প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল। এই চিহ্ন আমরা যেন ধীরে ধীরে সরাতে পারি, দল হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে পারি, সে চেষ্টাই থাকবে।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা জিতলেও বাংলাদেশের নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বোলিং। বিশেষ করে, পেসাররা ভীষণ হতাশ করেছেন এ ম্যাচে। তবে সিরিজে মাঝে বোলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে চান না মাহমুদউল্লাহ, ‘এখনই বোলারদের নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। (ভারতের বিপক্ষে) প্রথম ম্যাচে তারা ভালো বোলিং করেছে, যেটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।
পরের ম্যাচে ঠিক সময়ে নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারেনি বলে হয়তো রানটা বেশি হয়েছে। এ ধরনের উইকেটে যত কম রান দেবেন, ব্যাটসম্যানদের জন্য তত সহজ হবে। এটা নিয়ে কিছুটা চিন্তার বিষয় আছে, কোন পরিস্থিতিতে কতটা কম রান দেওয়া যায়।’
ধীরে ধীরে কাজল কালো মেঘ সরে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে কলম্বোর আকাশ। বৃষ্টি-বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা একে একে ড্রেসিংরুম থেকে নেমে এসেছেন প্রেমাদাসার নেটে। অনুশীলন শুরুর আগে তাসকিন আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলো, সমস্যাটা কোথায়? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কেন অমন ছন্নছাড়া বোলিং? ‘সমস্যা নেই, ঠিক হয়ে যাবে’—শুধু তাসকিন নন, বাংলাদেশের সব বোলারের চাওয়াই এটা। যেভাবে সময়ের সঙ্গে মেঘ কেটে বেরিয়ে আসে আশার আলো, একইভাবে বাজে সময় কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে চান তাঁরা। বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের ক্রিকেট প্রতিষ্ঠা করতে হলে এটা যে খুব জরুরি।