bnp-flag

অভিন্ন রূপরেখা দেবে বিএনপি

বৃহত্তর ঐক্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মত নিয়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অভিন্ন রূপরেখা দেবে বিএনপি। ঐক্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঘোষণা দেয়া হবে এ রূপরেখা। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে রূপরেখার কপি তার হাতে তুলে দেয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট নিরসনে তাকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানোর সম্ভাবনাও আছে।

ইতিমধ্যে রূপরেখার তিনটি খসড়া প্রস্তাব লিখিত আকারে বুদ্ধিজীবীরা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে জমা দিয়েছেন। এসব খসড়া নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রাথমিক আলোচনাও করেছেন। এগুলো নিয়ে দলের ‘থিংকট্যাংক’দের কাছ থেকে মতও নেয়া হয়েছে। এখন খসড়াগুলো বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। তাদের নিজস্ব কোনো প্রস্তাব আছে কিনা তা চাওয়া হবে। এরপর সবার মত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর চূড়ান্ত করা হবে এ রূপরেখা। সব দলের মতের ভিত্তিতে বৃহত্তর ঐক্যের ব্যানারে অথবা তাদের পরামর্শে বিএনপির পক্ষ থেকে এ রূপরেখা ঘোষণা দেয়া হতে পারে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বতর্মান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা প্রমাণিত। এজন্যই নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সহায়ক সরকার প্রয়োজন। আমরা এই সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেব। এ নিয়ে কাজ চলছে। দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শের পর তা চূড়ান্ত করা হবে। তবে এ রূপরেখা কবে ঘোষণা হবে এর দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল ছাড়া প্রায় সব দলের দাবি একই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছি। ঐক্য হলে তখন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়েও তাদের পরামর্শ নেয়া হতে পারে।

সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে কাজ শুরু করে বিএনপি। দলটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ও ‘থিংকট্যাংক’ এই রূপরেখার খসড়া প্রণয়নের কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে সংবিধান বিশেষজ্ঞসহ জোটের শরিকদের পরামর্শ নেয়া হয়। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তা কিছুটা থমকে যায়। পরে খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগের পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে কাজ শুরু করেন নীতিনির্ধারকরা। দলের থিংকট্যাংকদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে লিখিত প্রস্তাব চাওয়া হয়। তারা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব লিখিত আকারে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে জমা দেন।

সূত্র জানায়, থিংকট্যাংকের প্রস্তাবিত খসড়ায় নির্বাচনের সময় সরকার প্রধান কে থাকবেন, সরকারে কারা থাকবেন এ নিয়ে তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন ওই সহায়ক সরকারের মেয়াদ হবে তিন মাস। নির্দলীয় সহায়ক সরকার সংবিধান সংশোধন করে গঠন করা সম্ভব। আবার সংবিধান সংশোধন না করেও নির্দলীয় সহায়ক সরকার গঠন করা যেতে পারে। বিএনপির ওই রূপরেখায় দুটি প্রস্তাবই থাকবে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাখা না রাখার পক্ষে দুই ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ না করার শর্তে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে পারেন বলে একটি পক্ষের মত। রাষ্ট্রপতির অধীনে মন্ত্রিসভায় বিভিন্ন দল বিশেষ করে নিবন্ধিত দল থেকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রীদের নিয়োগ দেয়া হতে পারে। ‘সর্বদলীয়’ সরকারের আদলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে।

অন্যদিকে তিন মাসের এই সহায়ক সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী স্বপদে বহাল থেকে ছুটিতে থাকার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়ে প্রস্তাব রয়েছে রূপেরখায়। এ ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ টেকনোক্রেট কোটায় স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে থাকলে তখন রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের দিয়ে কাজ করাবেন। এ মন্ত্রিসভায় আওয়ামী সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরাও থাকতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে কাজ চলছে। যথাসময়ে তা ঘোষণা করা হবে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অনির্ধারিত এক বৈঠকে বসেন। সেখানে আলোচনায় উঠে আসে এ ইস্যুটি। এ সময় স্থায়ী কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে খামে ভরা থিংকট্যাংকের খসড়ার কপি দেয়া হয়। আলোচনায় স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে এ রূপরেখা ঘোষণার আগে বৃহত্তর ঐক্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দলের মতামত নেয়া প্রয়োজন। তাদের কোনো প্রস্তাব থাকলে সেগুলোও বিবেচনা আনা যেতে পারে। তার পরামর্শকে সমর্থন জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র এক নেতা বলেন, রূপরেখা ঘোষণার আগে সবার মতামত নেয়াই ভালো হবে। প্রয়োজনে বৃহত্তর ঐক্যের ব্যানারে এ রূপরেখা ঘোষণা করা হলে এর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। বৈঠকে এক নেতা জানান, রূপরেখা ঘোষণার পর তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো এবং তাকে সংকট নিরসনের আহ্বান জানানো যেতে পারে। এ সময় আরেক নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতিকে জানিয়ে কোনো লাভ নেই। বরং সরকারবিরোধী সব দলের মতামত নেয়া যেতে পারে। সবার মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য একটা রূপরেখা দেয়া হলে তা জনসমর্থন পাবে। অনির্ধারিত বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দলের একটি সূত্র জানায়, থিংকট্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া রূপরেখার খসড়া নিয়ে তারা আরও চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। সেখানে কিছু সংযোজন বিয়োজন করে তা গণফোরাম, যুক্তফ্রন্টসহ বাম ঘরানার কয়েকটি দলের কাছে পাঠানো হবে। প্রস্তাবিত খসড়ায় কোনো সংযোজন বিয়োজন বা তাদের নিজস্ব কোনের প্রস্তাব থাকলে তা লিখিত আকারে পাঠানোর আহ্বান জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর প্রস্তাব ও থিংকট্যাংকের প্রস্তাব নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে তা চূড়ান্ত করবেন। এরপর রূপরেখার খসড়ার বিষয়ে কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তার পরামর্শ নেবেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। খসড়ার কপি পাঠানো হবে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছেও। দলের শীর্ষ দুই নেতার সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই তা চূড়ান্ত করা হবে।

বৈঠকে বৃহত্তর ঐক্যের অভিন্ন রূপরেখায় বিএনপির কিছু সুপারিশ নিয়ে অন্যান্য দলের আপত্তি থাকার বিষয়টি আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি দল আপত্তি জানিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে সেটা বাদ দেয়াই উচিত। বিএনপির মতো বড় দলের নেত্রীর মুক্তির জন্য অন্যদের সহযোগিতা নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তার মুক্তির জন্য বিএনপিই যথেষ্ট।

এদিকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ১৮ নভেম্বর জাতির সামনে একটি রূপরেখা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। এতে ১৩ দফা প্রস্তাব করা হয়। ওই প্রস্তাবের আলোকে আলোচনার উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় বিএনপি। এ সময় খালেদা জিয়া জানান, দ্রুতই তারা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। এ নিয়ে কাজ অনেকদূর এগিয়ে রাখলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।

উৎসঃ   jugantor

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin