dr_kamal

‘‌এভাবে চলতে থাকলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে’

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারি কর্মকমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিত নিশ্চিতপূর্বক নির্বাহী বিভাগের বেআইনী হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখা। দেশ এখন যেভাবে চলতে তাতে অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার যুব ঐক্যের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন একথা বলেন। এতে ড. কামাল হোসেনের দেয়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গনফোরাম নেতা আ ও ম শফিক উল্লাহ।

লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, জনগণ জানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।তিনি ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এটা নিয়ে অনর্থক বির্তক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারেতো সাতজন বিচারক ঐকবদ্ধভাবেই রায় দিয়েছেন।ড. কামাল বলেন, দুর্নীতিবাজরা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশের বাইরে পাচার করে চলেছে। ফলে দেশের অর্থনীতি ও বিনিয়োগ ব্যবস্থা ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছে। আর কর্মসংস্থানের অভাবে দেশের বেকার সমস্যা আরো বেড়ে চলেছে।

রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদল হলেও অবস্থার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয় না। অথচ সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা হলে দেশের আর্থিক শৃংখলা ফিরে আনা, জনগণের মৌলিক অধিকার ও চাহিদাসমূহ নিশ্চিত করা এবং যুব সমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা মোটেই কঠিন নয়। রাষ্ট্র পরিচালনা সাংবিধানিক নীতিসমুহকে উপেক্ষা করার কারণে, গ্রামে-শহুরের বৈষম্য ও ধনী-দরিদদ্রের বৈষম্য দুর করে জনগণের জীবন ধারণের মৈৗলিক উপকরণ সমূহ আজও নিশ্চিত করা যায়নি।

ড. কামাল অভিযোগ করেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের ব্যাপারে সবাই একমত। জনগণ চায় পুলিশ নিরপেক্ষভাকে কাজ করবে। তবে এসব অনিয়ম বিশৃংখলার বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ হতে হবে। জনগণকে সংঘবদ্ধ হতে হবে। তবে সরকার চাইবে জনগণ যেনো এসবের বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ হতে না পারে। আর এজন্য বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাম্প্রদাযিকতাকে উসকে দিতে চাইছে। এভাবে বিরোধ থাকলে জনগণ ঐকবদ্ধ হতে পারবে না। আর এতে করে সরকারও নির্বিগ্নে ক্ষমতা থাকতে পারবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। নিরপেক্ষ বিচারকের ভূমিকায় থাকতে হবে তাকে। আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ থাকতে হবে।লিখিত বক্তব্যে বলা হয় যুব সমাজের বাস্তব সমস্যা সমূহ সমাধানের সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সামান্য অর্থের বিনিময়ে যুবকদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতে আরো বক্তব্য রাখেন ডাকসু’র সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। মোহাম্মদ হানিফ এতে সভাপতিত্ব করেন।

ঐতিহ্য ভেঙে নতুনত্ব আসছে ছাত্রদলে!

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। নতুন কমিটি গঠনে দেরির কারণে সংগঠনের নেতাকর্মীরা খানিক অস্থির হয়ে উঠলেও ‘ভালো কিছুর প্রত্যাশায়’ কমিটি গঠনের গ্রিন সিগনাল দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় নিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড।

সংগঠনটির ইমেজ ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক যোগ-বিয়োগ আর হিসাব-নিকাশে নেতৃত্ব পর্যায়ে ঢেলে সাজানোর চিন্তাভাবনা চলছে। এজন্য দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে এবার সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আনার চিন্তা করছে বিএনপি, যেখানে কমিটির উচ্চ পর্যায়ের দুটি পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের কেউ দায়িত্ব পেতে পারেন। এমনটাই বলছে বিএনপির সূত্রগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই ধরনের কমিটি গঠনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে দলে। মনে করা হচ্ছে, এতে সংগঠনটির কর্মকাণ্ডে যেমন গতি বাড়বে, তেমনি নেতৃত্বও বিকেন্দ্রীকরণ হবে। আর অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো নেতৃত্বও উঠে আসবে। ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বরাবরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

দু’একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে এটিই হয়ে আসছে। তবে এবার সেই ধারায় পরিবর্তনের চিন্তা করা হচ্ছে। ছাত্রদলের ভেতরেও এই দাবি জোরালো হচ্ছে। তাই এবার নতুন কমিটিতে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদের মধ্যে একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে এবং অন্যটি আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে দেওয়া হতে পারে।

ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দুটি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে যে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের সক্রিয় দেখা গেছে, তার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার হাতে গোনা দু’একটি কলেজের ভুমিকা রয়েছে। অথচ ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠানের নেতারা অতীতে সুপার ফাইভে এসেছেন এমন ঘটনা বিরল। অন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও তাই। এই ধারার পরিবর্তন চান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, সুপার ফাইভে অন্তত একটি পদ হলেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি রাখা উচিত। এতে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকেও ভালো নেতৃত্ব উঠে আসবে।

সূত্র বলছে, আগামী ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে সংগঠনটি। সভাপতি, সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এই ‘সুপার ফাইভ’ কমিটি হচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বেহাল থাকা ছাত্রদলে প্রাণ ফেরাতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা নেতাকর্মীদের মাঝে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদলের এই নতুন কমিটি গঠনকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে এক বছরেরও বেশি সময় চলে গেলেও নতুন কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা ঘটছে।

ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বলছেন, ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করা, বয়স্কদের নিয়ে কমিটি গঠন, কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন, ঐক্যের অভাবসহ অনেক কারণে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরেও ‘বিএনপির ভ্যানগার্ড’ খ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থা এখন নাজুক। সংগঠনটিকে বাঁচাতে নতুন নেতৃত্ব আসার আগে তাই মাঠের নেতাদের বায়োডাটা পরখ করে কমিটি দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তারা।

কেমন কমিটি দেখতে চান জানতে চাইলে ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতা ওমর ফারুক মুন্না রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদলের এবারের কমিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে যারা মাঠে থেকেছেন, সংগ্রাম করেছেন, জেল খেটেছেন, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও মাঠ ছাড়েননি, তাদেরকে সংগঠনের দায়িত্ব দিতে হবে। আমি নিজেও একাধিকবার কারাগারে গিয়েছি, জেল খেটেছি। দলের যে কোনো দায়িত্ব পালনে প্রতিকূল পরিবেশও বিবেচনায় নেইনি।’

ছাত্রদলে নতুন নেতৃত্ব আনার আগে পদপ্রত্যাশীদের মাঠের রাজনীতির কথা বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বিএনপির হাইকমান্ডের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

পদপ্রত্যাশী আরেক নেতা আলমগীর হাসান সোহান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ছাত্রদলে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কে কতটা কর্মীবান্ধব, মাঠে কতটা সময় দিচ্ছেন এবং সর্বোপরি সংগঠনের জন্য কতটা ঘাম ঝরিয়েছেন; সেগুলো বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আমি নেতৃত্ব পেলে কমিটি পুর্নাঙ্গ করার ক্ষেত্রে ত্যাগীদের পদ দিতে জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান রাখবো।’

এর আগে ছাত্রদলের বেহাল কাটাতে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বেধে দেওয়া সময়সীমা পার হওয়ারও অনেক পরে ৭৩৪ জনকে পদায়ন করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলেও তা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ছাত্রদলের ইতিহাসে এতো বড় কমিটি আর কখনো হয়নি। রাজীব-আকরামের কমিটিকে বলা হচ্ছে, ছাত্রদলের অন্যতম ব্যর্থ কমিটি। ছাত্রদলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই কমিটি দিয়ে সংগঠনটির নেতৃত্ব যেমন সমালোচনার মুখে পড়ে, তেমনি সিনিয়র-জুনিয়রের ভারসাম্য ঠিক না রাখা এবং যোগ্য ও ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ ওঠে। এতে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

এদিকে মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের জন্যে প্রায় প্রতিদিনই শোডাউন-মিছিল মিটিং করছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। সংগঠনটির নেতা-কর্মীরাও চান দ্রুত নতুন কমিটি গঠনের পাশাপাশি এতে যোগ্য ও মাঠে সক্রিয় নেতাদের মূল্যায়ন হোক। আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির হাইকমান্ড ছাত্রদলে নেতৃত্ব নির্বাচনে ভুল করলে এর সুদুরপ্রসারী মাশুল দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা।

ছাত্রদলের আগামী কমিটিতে শীর্ষ পদের জন্য বেশি আলোচনায় আছেন মামুনুর রশিদ মামুন, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, আসাদুজ্জামান আসাদ, ইসহাক সরকার, ওমর ফারুক মুন্না, মিয়া রাসেল, বায়েজিদ আরেফিন ও মেহেবুব মাসুম শান্ত।

রাইজিংবিডি

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin