রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বহীন হলেও বিএনপি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। গতকাল থেকে উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি শুরু করেছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা এবং সরকারের ‘মুখোশ’ উন্মোচন করার জন্য তাঁরা নির্বাচন করছেন। কিন্তু বিএনপির মধ্যেই এই বক্তব্য নিয়ে হাস্যরস তৈরি হচ্ছে।
কারণ বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন সফল না ব্যর্থ তা নতুন করে দেখানোর কিছু নেই। তাছাড়া এই নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন যে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বারবার অবস্থান পরিবর্তন করছে।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরপর বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন নিয়ে অন্তত চার ধরণের মন্তব্য করেছেন। এই সমস্ত স্ববিরোধী মন্তব্যগুলো বিএনপির মধ্যেই এক ধরনের অনাস্থা এবং কৌতুক তৈরি করেছে। এখন জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসন শূন্য হয়ে গেছে এবং এই পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি যাবে কি যাবে না তা নিয়ে সংশয় ছিল।
বিএনপি মহাসচিব একবার বলেছিলেন যে, এই ধরণের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বিএনপির কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু কয়েকদিন পরেই বিএনপি ইউটার্ণ নেয় এবং নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। জানা গেছে যে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার আগ্রহের কারণেই উপনির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে বিএনপি এবং এই পাঁচটি আসনের প্রার্থীদের কাছ থেকেই মোটা অঙ্কের চাঁদা নেওয়া হবে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সম্প্রতি ঢাকার দুটি আসনে মনোনয়ন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। ঢাকা-৫ এবং ঢাকা-১৮ এই দুটি শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এই দুই আসনে মনোনয়ন দিতে তারেক জিয়া প্রতিটি আসনের জন্য পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেছেন বলেও জানা গেছে।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, মনোনয়ন প্রত্যাশীরা লন্ডনে অবস্থানরত তারেক জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন এবং কথা বলছেন। সেখানে এই আসনটির জন্যে দরদাম করা হচ্ছে, যে দরদামে ঢাকার একটি আসনের মূল্য ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত উঠেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র বলেছে যে, ঢাকা-৫ আসনের জন্যে বিএনপির একজন আলোচিত নেতা মননোয়ন ফর্ম কিনেছিলেন, তখন তাকে দলের মহাসচিব তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এবং ঐ নেতা তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানতে চান, কত দিতে পারবেন?
এসময় ঐ নেতা জানান যে, তিনি দীর্ঘদিন নির্যাতন ভোগ করছেন, আন্দোলন সংগ্রাম করছেন, এখন তিনি টাকা দেবেন কিভাবে? কিন্তু তারেক জিয়া নাছোড়বান্দা। তিনি বলেন যে, টাকা না থাকলে নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিতে হবে। পরে ঐ বিএনপি নেতা জানতে চান যে কত টাকা দরকার? তখন তারেক জিয়া বলেন যে, ঢাকার একটি আসনে মনোনয়ন পেতে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা লাগবে।
পরে বিএনপির ঐ নেতা নির্বাচনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে জানিয়েছেন। তিনি বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তিনি ঐ নেতাকে টেলি আলাপে বলেছেন যে, ‘তারেক সাহেবকে পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে মনোনয়ন নিয়ে কি লাভ হবে? এই নির্বাচনে জিতলেও পাঁচ কোটি টাকা তোলা যাবে কিভাবে?’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এর কারণে ঢাকা-৫ এবং ঢাকা-১৮ আসনের দুটোতেই বিএনপির অনেক আলোচিত বা পরিচিত নেতারা নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচনের জন্য তাকে দলের নেতাকর্মীরা উৎসাহিত করেছিলেন।
বলেছিলেন, যেহেতু সেখানে বিএনপির একটি ভালো অবস্থান আছে এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী দূর্বল, সে কারণে তিনি যদি নির্বাচনে দাঁড়ান তাহলে এই নির্বাচনে একটি জাতীয় আমেজ তৈরি হবে। কিন্তু টাকার ভয়ে তিনি ঐ নির্বাচনে আগ্রহী হচ্ছেন না। আর সেকারণেই ঢাকার দুটি আসনে আন্ডাররেটেড প্রার্থীরাই বিএনপির প্রার্থী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডার