দিনটির কথা মনেই ছিল না তার। ১৬ বছর আগের কথা। ২০০১ সালের আজকের এ দিনেই যে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল! দিনটার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
পরে সামাজিক যোগাযোম মাধ্যম থেকে নিজের জীবনের এ অবিস্মরণীয় দিনের কথাই মনে পড়লো তার। ইতিহাস জানান দিচ্ছে, ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ক্যাপ পরেন চিত্রা নদীর পাড়ের তেজোদ্দীপ্ত যুবা ‘কৌশিক’।
ঠিক সেই এ কদিনে আজ বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচ। সব সময়ই যার কাছে ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়’, সেই মাশরাফি বিপিএল নিয়ে একটু বেশিই মেতেছেন। এ কারণেই হয়তো ক্যারিয়ারের এ সরণীয় দিনের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন তিনি।
খেলা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সে কথা অকপটে স্বীকার করলেন, মনে ছিল না। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৭ বছরে পা দেবার দিন আজ; কিন্তু দিনটি তেমন ভালো কাটেনি। বল ও ব্যাট হাতে আহামরি (১/২৮ ও ১২ বলে ১৩ রান) পারফরমেন্স নেই। দলও জেতেনি। ১১ রানে হেরে গেছে। আর অনুজপ্রতিম শুভাশিস রায়ের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত বচসায় লিপ্ত হতে হলো।
ক্যারিয়ারের এমন সরণীয় দিনে এতগুলো নেতিবাচক ঘটনা- যে কেউ হলে হতাশায় মুষড়ে পড়তেন; কিন্তু মাশরাফি তেমন পাত্রই নন। আকাশছোঁয়া সাফল্য আর নজরকাড়া ও মাঠ মাতানো এবং ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্সও যাকে এতটুকু আবেগতাড়িৎ করতে পারে না- তার কি এসব ঘটনায় মন খারাপ হতে পারে?
তাই তো কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তার দিকে শুভাশিসে তেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উল্টো নিজেই দুঃখ প্রকাশ করে সংবাদ সন্মেলনে ‘স্যরি’ বললেন। তিনি নেতা। অভিভাবক। অধিনায়ক। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বিজ্ঞাপন। আইকন।
মাঠে যতই উত্তেজনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরশ মাখানো থাকুক না কেন, উত্তেজনার পারদ যতই ছাড়াক না কেন- এ মুহূর্তে দেশের ক্রিকেটের এক মহিরুহর সঙ্গে ঢের ছোট শুভাশিসের এমন নেতিবাচক ও আগ্রাসি আচরণ অবাক করার মতোই।
সারাদেশে এ ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সবার একটাই কথা, ‘খেলায় জয়-পরাজয় স্বাভাবিক ধর্ম। মাঠে লড়াই হয়। সে লড়াইয়ে জিততে মরিয়া থাকে দু’দল। সেখানে বড়-ছোটর ভেদাভেদ নেই। বড় বলে ছোটরা কাউকে ছেড়েও কথা বলেন। দুই ভাই দুই দলে খেললেও ছোট ভাই কখনো বড় ভাইকে ছেড়ে কথা বলে না; কিন্তু তাই বলে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তেড়ে যেতে হবে কেন?
শুভাশিসের এ আচরণ তাই অনভিপ্রেত। অনাকাঙ্ক্ষিত। এ কারণেই ক্রিকেট পাড়া ক্ষোভে ফুঁসছে। শুভাশিসের সমালোচনায় গোটা দেশ। মাশরাফি প্রেস কনফারেন্সে বড় ভাই সুলভ আচরণ দেখিয়েছেন। শুভাশীষকে ছোট করে একটি নেতিবাচক কথাও বলেননি।
তবে দেখা গেছে চোখ-মুখ খুব স্বাভাবিক ছিল না। কথা-বার্তায় অন্য দিনের মতো সাবলিল ও সপ্রতিভও ছিলেন না। বোঝাই যাচ্ছিল শুভ দিনে, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। ভিতরে যে কষ্ট হচ্ছিল, তার প্রমাণ মিলেছে প্রেস কনফারেন্স শেষে বেরিয়ে যেতে যেতে কয়েকজনের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপের এক সংলাপে, ‘আসলে ছোটরা একটু বেশি স্মার্ট হয়ে গেছে।’
এ ছোট্ট একটি মন্তব্যই বলে দেয় মাশরাফি আসলে কতটা দুঃখ পেয়েছেন। ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মাশরাফি ও শুভাশিসের ঘটনা একদম মাঠে বসে যিনি দেখেছেন, সেই জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও দুঃখ পেয়েছেন।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘এটা নেহায়েত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। খেলার মাঠে একটু আধটু উত্তেজনা হয়। হতেই পারে। তাই বলে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি মনে করি, দুই পক্ষের সচেতনতার দরকার আছে। বড় এবং ছোট দুই পক্ষ যার যার অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকলে এমন ঘটনা ঘটবে না।’
১৬ বছরের লম্বা জার্নি প্রসঙ্গে কিছু বলতে বলা হলে মাশরাফির ব্যাখ্যা, ‘পুরোটা বলা তো কঠিন। তবে আনন্দটা অনেক ছিল। অনেক দুঃখও ছিল। কষ্ট ছিল। ১৬ বছর পার করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আমাদের ওপর দিয়ে যে ধকল গিয়েছে, তা কঠিন ছিল। তারপরও খুশি, কারণ এখনো খেলে যাচ্ছি। যারা আমার জন্য দোয়া করেছে, তাদেরকে ধন্যবাদ। সত্যি বলতে আজ সকাল পর্যন্ত জানতাম না যে, ১৬ বছর হচ্ছে। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি। এর আগে মাথায় ছিল না। অবশ্যই নিজের কাছে ভালো লাগছে। দেখা যাক আর কতদিন যায়।’
চিটাগং কিংসের কাছে হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রংপুর অধিনায়ক বলেন, ‘প্রথমত আমার মনে হয়েছে রবি বোপারার অস্বাভাবিক আউটটার মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের। থিসারা পেরেরার আউটটাও আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ ছিল। আমার কাছে মনে হয়, খেলার মাঝামাঝি অংশেই আমরা হেরেছি। সেনওয়ারির আউটটাও টার্নিং পয়েন্ট। তাসকিনের ব্রিলিয়ান্ট একটা ওভার টি-টোয়েন্টিতে এমন হয়। বিশেষ করে সাত আট করে রান লাগলে ঠাণ্ডা মাথায় খেলতে হয়, যেটা আজ আমরা পারিনি।’