২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে। এ সময় বিএনপি-জামাত জোটের সবচেয়ে বড় চমক গুলোর একটি ছিল হারিছ চৌধুরীর প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ। হারিছ চৌধুরী সিলেটের রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন।
কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে তিনি কখনোই নেতৃস্থানীয় ছিল না। এ রকম একজন ব্যক্তিকে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব করার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি`র অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন।
কিন্তু পরবর্তীতে তারা জানতে পেরেছেন যে, তারেক জিয়ার আশীর্বাদ এবং আগ্রহের কারণে হারিস চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সচিব করা হয়েছে। হারিস চৌধুরী মূলত তারেকের এজেন্ট ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কি কাজ হচ্ছে, না হচ্ছে কোন ফাইল আসছে, কোন টেন্ডার অনুমোদন হচ্ছে, কার নিয়োগ হচ্ছে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে হাওয়া ভবনকে নিয়মিত খবর সরবরাহ করাই ছিল হারিছ চৌধুরীর কাজ।
তিনি ফাইল আটকে রেখে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তিকে বলতেন যে, হাওয়া ভবনের যোগাযোগ করার জন্য। পরবর্তীতে তারা হাওয়া ভবনের মামুন এবং তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থের দফা-রফা করেই তাদের কাজের অনুমোদন পেতেন।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন টেণ্ডার এবং কোন বড় ধরণের কাজ হাওয়া ভবনের অনুমোদন ছাড়া হয়নি। আর হাওয়া ভবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যোগসুত্র ছিলেন হারিছ চৌধুরী। আর এর মাধ্যমে তিনি বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। সে সময় তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। এর পর দীর্ঘদিন তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন। তার কোন খবর জানা যায়নি। তিনি কোথায় আছেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যেত না। এর মধ্যে একাধিক মামলায় তার মোট ৭২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে ঢাকায় বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ কিংবা তৎপরতা দেখা যায়নি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিতে হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তাকে গত কয়েক মাস তারেক জিয়ার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
বিএনপির কয়েকজন নেতাকে ফোন করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাইয়া নির্দেশ দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন। যদিও বিনপির অধিকাংশ নেতাই মনে করে বিএনপির আজকের এই পরিণতির জন্য যারা দায়ী, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো হারিছ চৌধুরী।
বিএনপির একজন নেতা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, গিয়াস উদ্দিন মামুন, হারিস চৌধুরি রাই বিএনপির এই পরিনতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। কারণ হারিছ চৌধুরীদের লাগামহীন দুর্নীতি এবং অর্থ লিপ্সাই এক কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। যে পরিস্থিতির কারণে দেশে ওয়ান ইলেভেন এসেছে।
এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হারিছ চৌধুরী যে কোন ভাবেই কানাডার একটি পাসপোর্ট জোগাড় করেছেন। তিনি এই পাসপোর্ট নিয়ে কখনো ভারতে, কখনো যুক্তরাষ্ট্রে, কখনো যুক্তরাজ্যে এবং কখনও কানাডায় থাকছেন। তবে গত কয়েক মাস ধরে তাকে লন্ডনে স্থিত দেখা গেছে বলে লন্ডনের একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, প্রথম দিকে তারেক জিয়ার সঙ্গে তার মনোমালিন্য ছিল। বিশেষ করে তারেক জিয়া যখন গ্রেপ্তার হন, সে সময় হারিছ চৌধুরী পালিয়ে যাওয়া তারেক জিয়া সহজভাবে নেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থ এবং অন্যান্য ভাবে তারেক জিয়াকে ম্যানেজ করেছেন এবং সেই ম্যানেজের কারণে বিএনপির প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন এই হারিছ চৌধুরী।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, দুর্বৃত্তরা আবার বিএনপিতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। যাদের কারণে বিএনপির এই পরিনতি আবার বিভিন্ন জায়গায় আবির্ভূত হচ্ছে। এদের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দৌড় সালাউদ্দিনের কারণে ঢাকা শহরে বিনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল।
সেই দৌড় সালাউদ্দিন এখন মনোনয়ন পেয়েছে। হারিছ চৌধুরী বিএনপিকে চাঁদাবাজি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল সেই হারিছ চৌধুরী এখন বিভিন্ন নেতাকে টেলিফোন করে বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন যে হারিছ চৌধুরী এখন তারেক জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হিসেবে কাজ করছেন।
তবে বিএনপির কেউ কেউ বলছেন যে আসলে এটি ঠিক নয়। হারিছ চৌধুরী আগের অবস্থানে ফিরে আসতে পারবে না। তারেক জিয়ার অর্থ যেহেতু অর্থদণ্ড এবং হারিছ চৌধুরী বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে সে সমস্ত আর্থিক লেনদেনের কারণে তারেক জিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।
এ কারণে হারিছ চৌধুরীকে তারেক জিয়া এখন কিছুটা পাত্তা দিচ্ছেন। তবে হারিছ চৌধুরী যে রাজনীতিতে আবার ফিরবেন; সেটি নয়। বরং হাজার কোটি টাকার অর্থ লুট করে হারিছ চৌধুরী এখন বিদেশ বিভূঁইয়ে সুখেই আছেন।
বাংলা ইনসাইডার