বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাজির দিন আদালতের নিয়ম ভঙ্গ করে বিএনপিপন্থী কিছু আইনজীবীকে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।
বিচারক এজলাসে ওঠার আগে ও নামার পরে তারা খালেদা জিয়া এবং সিনিয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে সেলফি তুলতে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু করেন। কে কার আগে সেলফি তুলবে সেটা নিয়েই তাদের ব্যস্ততা লক্ষ্য কারা যায়!
বিচারক ও সিনিয়ার আইনজীবীরা বলার পরও সেলফি তোলা থেকে কিছুতেই বিরত হননি তারা। এই সেলফিগুলো তারা বিভিন্নভাবে ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন বলেও জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক আইনজীবী বলেন, বিএনপিপন্থী কিছু আইনজীবী আছেন যারা খালেদা জিয়ার হাজিরার দিন আদালতে উপস্থিত হয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সেলফি তুলে তারা ফেসবুকে দিয়ে বলেন, ‘ম্যাডামের সঙ্গে আমরা অথবা সিনিয়রের সঙ্গে আমরা!’ মূলত তারা ম্যাডামকে মুখ দেখানোর জন্যই আদালতে যান।
তাদের এমন আচরণে খোদ বিচারক পর্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আদালতের ভেতরে সেলফি তোলার সময় ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা আদালতের ভেতরে সেলফি তুলবেন না। আদালতের ভেতরে সেলফি তোলার কোনো নিয়ম নেই। এতে আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আপনারা যারা সিনিয়ার আছেন তারা এ বিষয়টি দেখবেন।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সেলফি যারা তুলেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যারা আদালতের ভেতরে সেলফি তুলছেন তারা সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকবেন। এতে আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’
এসময় দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাগজ বলেন, ‘আদালতের ভেতরে সেলফি তোলা আইনগত অপরাধ। বিচারকের বাধা সত্ত্বেও বিএনপিপন্থী কিছু আইনজীবী খালেদা জিয়ার হাজিরার দিন সেলফি তুলে যাচ্ছেন।’
বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে হাজির হয়ে এক ঘণ্টা লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
জাগো নিউজ
খালেদা জিয়ার সাজা হলে নির্বাচনে যাবে না ২০ দল
চলমান দুর্নীতির মামলার রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার সাজা হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে যাবে না ২০ দলীয় জোট। চার মাস পর বুধবার রাতে জোটের বৈঠকে নেতারা এ কথা বলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে জোটের নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দুটি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। এ মামলায় তার সাজা হলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হতে পারে না বা হতে দেওয়া হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ে সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বৈঠকে উপস্থিত জোটের শীর্ষ নেতারা জানান, খালেদা জিয়া পরামর্শ দিয়েছেন, এখন থেকে আন্দোলন শব্দটি নয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি শব্দটি সামনে আনতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অটুট রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
জোট নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, কোনোভাবেই জোট ভেঙে সরকারের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। সরকারের অনেক টাকা আছে। সরকার অনেক টোপ দেবে; কিন্তু আপনারা যাবেন না। কোনোভাবেই যেন জোট না ভাঙে, সে ব্যাপারে শরিক দলীয় নেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে খালেদা জিয়াকে আরও বেশি গণমুখী কর্মসূচি নেওয়ার পরামর্শ দেন জোট নেতারা। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, কর্মসূচি দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা ও পরিস্থিতির ওপরও বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করবে। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীসহ ১৭টি শরিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টি ও পিপলস লীগের নেতারা। তবে লেবার পার্টিকে সংগঠনটির উপদলীয় কোন্দলে বিভক্ত নেতৃবৃন্দের কারণে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সমকালকে বলেন, বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জোট নেতারা।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মতুর্জা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে যাবেন না। এমনকি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই নির্বাচন হতেও দেবেন না।
সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সেনাবাহিনী মোতায়েন :বৈঠকে জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে শরিক দলের নেতারা বলেছেন, আগামীতে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের মেয়াদের তিন মাস আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন থেকে কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামাতে হবে।
এসব দাবির প্রতি জনমত গঠনে বিভাগ ও জেলায় সফর ও সমাবেশ করা উচিত। নেতাদের বক্তব্যের প্রতি সম্মতি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, নতুন বছর নয়- এ মুহূর্ত থেকে জনমত গঠনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ২০ দলীয় জোটের শরিকরা বিএনপির দুঃসময়ে পাশে আছে। ভবিষ্যতে সুসময়েও পাশে থাকবে। এমনকি জোট শরিকদের নিয়েই নির্বাচনে যাবেন তারা।
বিভাগীয় শহরে সমাবেশ :বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আট বিভাগীয় শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে সফর হতে পারে। জোটের শরিক নেতাদের কাছে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা জানতে চাইলে তারা সারাদেশে সফর করে সমাবেশ করার দাবি জানালে খালেদা জিয়া এ সফরের কথা বলেন। তাদের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দিয়ে তিনি বলেছেন, হাতে বেশি সময় নেই। নির্বাচন দ্রুত চলে আসছে।
তাই সফরের আগে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজ নিজ দলের মধ্যে আলোচনা করে এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। সামনে সব কর্মসূচিতে শরিক নেতাদের অংশ নিতে হবে। নতুন বছরের শুরুতে বিভাগ ও জেলা সফর শুরু হতে পারে। এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দলীয় সরকার নয়- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জনমত গঠন করা। ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে এসব সফর হবে। সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে নতুন কর্মসূচি দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়।
জোট ভাঙা যাবে না :জোটের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু ঘটতে পারে। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। এজন্য সরকার চাইবে ২০ দলীয় জোট ভাঙতে। সরকারের পক্ষ থেকে টোপ দেওয়া হবে; কিন্তু সেই টোপে সাড়া দেওয়া যাবে না। এমনকি জোটের শরিকদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং থাকতে পারবে না।
জোটে যে না থাকবে সে চলে যাবে; কিন্তু জোট ভেঙে যাওয়া যাবে না। এ সময় বাংলাদেশ লেবার পার্টির দুই গ্রুপের উপদলীয় কোন্দলের কথা ওঠে। লেবার পার্টির নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের ওপর অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। লেবার পার্টির আগে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ভাসানী ন্যাপ, ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি ভেঙে যায়। এ ছয়টি দল ভেঙে যাওয়ার পরও একাংশ বিএনপি রেখে দেয় যাতে ২০ দলীয় জোট নাম অটুট থাকে।
ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবীদের সমাবেশ :গত বছর ছাড়া এর আগে প্রায় প্রতি বছরই বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি সম্মান রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল বিএনপির। এবারও দলটি মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ করতে চায়। জোটের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। শরিক দলের নেতারা প্রস্তাব দিলে জোট নেত্রী খালেদা জিয়া সমাবেশের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। তবে কবে হবে তার দিন-তারিখ ঠিক হয়নি বলে জোটের একাধিক নেতা জানান।
এ ছাড়া প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এ বৈঠকে। প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে ডিসেম্বরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের ব্যানারে সমাবেশ করার কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আইনজীবীদের সমাবেশে তার আগামী নির্বাচন ও বর্তমান সংকট পরিস্থিতি নিয়ে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। সমাবেশের তারিখ ও স্থান ঠিক না হলেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাবেশ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এ ছাড়া আগামী মাসের ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল দেওয়া হয়েছে। এই সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আগ্রহী জামায়াতসহ অন্যান্য শরিক দলের কেউ থাকলে নাম দিতে বলেছেন খালেদা জিয়া।
উৎসঃ সমকাল