saifur

সিলেট বিএনপিকে চাঙা করেছেন সাইফুর রহমান

সিলেট বিভাগে তৃণমূলে বিএনপিকে জনপ্রিয় করে গেছেন বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মরহুম এম সাইফুর রহমান। সিলেটের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিচ্ছন্ন লোকদের রাজনীতিতে টেনে আনা, দলীয় সঙ্কীর্ণতার বাইরে থেকে জনগণকে মূল্যায়নের মাধ্যমে তিনি জনগণের মনের মণিকোঠায় অমর হয়ে আছেন। আর এর সুফল ভোগ করছে বিএনপি। যেখানে জাতীয় নির্বাচনে সিলেটে বিএনপি কোনো ফ্যাক্টর ছিল না, সেখানে আজ হাট, বাজার, স্কুল, কলেজসহ স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরে নির্বাচনে বিএনপি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে কুলাউড়া আসনের একটি কেন্দ্রে আমি বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিলাম। ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অভিজ্ঞতা। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিএনপি সরকার গঠন করে। অথচ গোটা সিলেট বিভাগে দলটির চরম ভরাডুবি ঘটে। সিলেট-১ আসনে খন্দকার আব্দুল মালিক ছাড়া বিএনপির আর কোনো প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। এমনকি আমাদের মহান নেতা এম সাইফুর রহমান মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর ও কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল দু’টি আসনে মনোনয়ন দিলেও বিজয়ী হতে পারেননি।

ওই নির্বাচনে সিলেটের চার জেলায় ভোটের সংখ্যায়ও বিএনপির অবস্থান ছিল পতিত স্বৈরশাসক এরশাদের দল জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের অনেক পরে; কিন্তু দু’টি আসনে পরাজয় বরণ করলেও দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এম সাইফুর রহমান স্যারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ন্যস্ত করেন মহান এই নেতার হাতে।

আর তিনিও দেশের অর্থনীতি সুসংগঠিত করার পাশাপাশি সিলেটে বিএনপিকে সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। ছুটে যান সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায়। এমনকি হাওর এলাকায়। উন্নয়নের পাশাপাশি থানায় থানায় বিএনপির শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলেন। বিএনপির এই জনপ্রিয়তা দেখে বিভিন্ন দল ত্যাগ করে অনেকেই বিএনপিতে যোগদান করেন। আর চেয়ারম্যান থেকে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার লোভে দলে ভেড়েন আরো অনেকে। সিলেট বিভাগে বিএনপি বিশাল এক সংগঠনে পরিণত হয়।

১৯৯১ সালে যেখানে বিএনপি পেয়েছিল একটি আসন, এর বিপরীতে ’৯৬ সালে এম সাইফুর রহমান নিজে দু’টি আসনে বিজয়ী হন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ সদরে ফজলুল হক আসফিয়া বিজয়ী হওয়া ছাড়াও সিলেট সদরে এম সাইফুর রহমান, বিশ্বনাথ আসনে ইলিয়াস আলী, ফেঞ্চুগঞ্জ এ শফি চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলার নজির হোসেন, হবিগঞ্জে জাকারিয়া চৌধুরীসহ অনেকেই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন।

আর ২০০১ সালে সিলেট জেলায় ছয়টি আসনের চারটিতে বিএনপি, একটিতে শরিক দল এবং অপরটিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হন। অনুরূপভাবে মৌলভীবাজার জেলার তিনটি, সুনামগঞ্জ জেলায় তিনটি এবং হবিগঞ্জ জেলায় একটি আসনে বিএনপির দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হন। আর এসবই ছিল এম সাইফুর রহমানের অবদান। এখন বিএনপি সিলেট বিভাগে একক দল। আমি আজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক এবং চেয়ারম্যান হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কুলাউড়া

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin