লালবাগে বিএনপিও চালায় হাজী সেলিম পরিবার

লালবাগে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বলে কোন রাজনৈতিক বিভাজন নেই। একটা সময় লালবাগের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আর বিএনপি নেতা ছিলেন মীর শওকত আলী। মীর শওকত আলী থাকা অবস্থাতেই নাসির উদ্দিন পিন্টু এবং ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

হাজী সেলিম ছিলেন স্থানীয় মাস্তান, দুর্নীতিবাজ এবং সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। আর সেই সূত্রেই তিনি বিএনপির টিকিটে ওয়ার্ড কমিশনার হয়েছিলেন। ১৯৯৬ এর নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করে নৌকার টিকিটে মীর শওকত আলীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এরপর নাসির উদ্দিন পিন্টু নানাভাবে নানা মামলায় জড়িয়ে পড়েন এবং বিডিআর বিদ্রোহসহ সন্ত্রাস এবং অপকর্মের দায়ে গ্রেপ্তার হন। একসময় তিনি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। নাসির উদ্দিন পিন্টু চলে যাওয়ার পর লালবাগে এখন বিএনপি বলতে কিছু নেই।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, লালবাগে এখন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটোই হাজী সেলিম। হাজী সেলিম যেমন বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে দেখভাল করেন টাকা দেন, তেমনি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়া ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের একটা অংশকে নিয়ন্ত্রণ করেন হাজী সেলিম।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাজী সেলিমের ছোট ছেলে আশিক সেলিম স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন এবং বিএনপি সমর্থক কার্যক্রমের অর্থায়নসহ সব ধরনের সহযোগিতায় আশিক সেলিম ভূমিকা রাখেন।

আর এই ঘটনায় হাজী সেলিমের ভূমিকা রয়েছে বলেও জানা গেছে। লালবাগের একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, হাজী সেলিম সেখানকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটোই নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং দুটির কর্মীদেরকে ব্যক্তিগত কাজের জন্য ব্যবহার করেন।

হাজী সেলিমের দর্শন পরিষ্কার, যে দলই ক্ষমতায় আসুক লালবাগ যেন তার নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে হাজী সেলিমের সঙ্গে নাসির উদ্দিন পিন্টুর অনেকগুলো সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসীর ঘটনা। নাসির উদ্দিন পিন্টুর সরে যাওয়ার পর হাজী সেলিম কেবল আওয়ামী লীগ নয় বিএনপির রাজনীতিরও নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

লালবাগে বিএনপির কোনো পরিচিত নেতা নেই বরং লালবাগে বিএনপির কর্মসূচিতে অর্থ যোগান দেন হাজী সেলিম। উল্লেখ্য যে, ৩০শে মে লালবাগে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কাঙালী ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই কাঙ্গালী ভোজের অর্থায়ন দিয়েছিলো মদিনা গ্রুপ।

উল্লেখ্য যে প্রতিষ্ঠানটি হাজী সেলিমের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০১৪-১৫ সালে যে মামলাগুলো হয়েছিল সে মামলাগুলো ছাড়িয়ে নেয়া এবং সে মামলাগুলোর জন্য দেনদরবার করার কাজটি করতো হাজী সেলিমের লোকজন। হাজী সেলিম ব্যক্তিগতভাবে এই মামলাগুলো যেন আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেয়া হয়, মামলাগুলো যেন না চলে সেজন্য তদারকি করতেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, লালবাগে আওয়ামী লীগ হলো মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের। সেখানে হাজী সেলিমের একটি নিজস্ব বাহিনী যেমন আছে, আছে নিজস্ব একটি দলও। সেই দলটি আওয়ামী লীগ-বিএনপি সব মিলিয়ে একাকার। ওই নেতা বলেন যে হাজী সেলিমের বিরোধিতা করাই হলো সেখানে বিরোধী দলীয় রাজনীতি।

এজন্য লালবাগের অনেক আওয়ামী লীগের নেতা যারা হাজী সেলিমের বিরোধিতা করেন তারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের জমি দখল হয়েছে দোকানপাট দখল হয়েছে। আর যারা বিএনপি করেন কিন্তু হাজী সেলিমের পক্ষাবলম্বন করেন তারা সবরকম অপকর্ম করেও লালবাগে দাপটের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলেও টিকে আছেন।

অর্থাৎ লালবাগের থাকতে হলে হাজী সেলিমের বশ্যতা শিকার করেই থাকতে হবে। এই দর্শন নিয়ে লালবাগে শাসন করতেন হাজী সেলিমের পরিবার।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin