লন্ডনে তারেকের কোম্পানির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ

সন্দেহভাজন লেনদেন এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হওয়ার কারণে লন্ডনে তারেক জিয়ার কোম্পানির তিনটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে লন্ডনে তারেক জিয়ার ‘হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালটেন্ট লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এই কোম্পানিতে তিনি নিজেকে একজন পরিচালক হিসেবে দেখিয়ে ছিলেন এবং ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হিসেবেও তিনি কোম্পানির বিবরণীতে উল্লেখ করেছিলেন।

এই কোম্পানির অপর পরিচালক তার স্ত্রী যোবায়দা রহমান। তিনিও ওই কোম্পানির ৫০ শতাংশের মালিক। হোয়াট অ্যান্ড ব্লু কনসাল্টেন্ট লিমিটেড একটি পিআর ফার্ম হিসেবে ব্রিটিশ জয়েন্ট স্টক রেজিস্ট্রারে নিবন্ধিত।

এই প্রতিষ্ঠানটি কি ব্যবসা করে সেটি সম্পর্কে না জানা গেলেও সম্প্রতি এই কোম্পানিটির অ্যাকাউন্টে প্রায় ৫৬ লাখ পাউন্ডের সন্দেহভাজন লেনদেন এবং জ্ঞাত আয় উৎস বহির্ভূত অর্থ জমা থাকার কারণে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালটেন্টের সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।

যে তিনটি ব্যাংকে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজ করা হয়েছে সে ব্যাংকগুলো হলো লয়েডস ব্যাংক, নেটফাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, বার্কলেস ব্যাংক। এই তিনটি ব্যাংকের মধ্যে লয়েডস ব্যাংকে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লুর নামে ১৭ লাখ পাউন্ড আছে, নেটফাস্ট ব্যাংকে ১৯ লাখ পাউন্ড ও বাকি অর্থ বার্কলেস ব্যাংকে জমা হয়েছিল। অর্থগুলো বিভিন্নভাবে এই অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল। অথচ হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু এই টাকার প্রাপ্যতা সম্পর্কে কোনো কাগজপত্র দেয়নি।

জানা গেছে যে, গত জুন মাসে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লুকে ব্রিটিশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তার এই অ্যাকাউন্টের অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লুর পক্ষ থেকে তাদের আয়কর উপদেষ্টা জানান যে, ব্যবসায়ের মাধ্যমে এ অর্থ উপার্জিত হয়েছে। এরপর ব্যাংক কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে ব্যবসার বিবরণী এবং বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে বলা হলেও তারা জমা দেয়নি।  

আর জমা না দেওয়ার কারণে গত ১ নভেম্বর থেকে এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সাময়িক ভাবে ফ্রিজ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে এই তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো লেনদেন করা যাবে না। উল্লেখ্য এর আগেও তারেক জিয়ার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ৩০ হাজার পাউন্ড নিয়ে ব্রিটিশ সরকার প্রশ্ন করেছিলো। সে সময় তার ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছিলো। পরবর্তীতে তারেক জিয়া দাবি করেন যে, তিনি জুয়ার মাধ্যমে এ অর্থ উপার্জন করেছে। পরে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টি খুলে দেওয়া হয়।

কিন্তু  হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কোম্পানি কনসালটেন্ট একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা ছাড়া কিভাবে এই অর্থ উপার্জন করলো- সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালটেন্টের আয়কর উপদেষ্টা বলেছে যে, বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম জনসংযোগ পিআর কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা এই অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

ব্যাংক কতৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে যে, লয়েডস ব্যাংকে যে ১৭ লাখ পাউন্ড এসেছে তা তিনভাগে এসেছে। এই টাকাগুলো এসেছে দুবাই ও সিঙ্গাপুর থেকে। নেটফাস্ট ব্যাংকের টাকা এসেছে ব্রিটেনের স্কটল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আর বার্কলেস ব্যাংকের টাকাগুলো লণ্ডনেই নগদ ক্যাশ ডিপোজিট হিসেবে জমা পড়েছে।

নেট ফাস্ট ব্যাংক হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালটেন্টের এক বছরের কার্যক্রমের বিবরণী ব্যাংক চেয়েছে; কিন্তু সেই বিবরণী দিতে তারেক জিয়ার প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছে। তবে এর আগেও এভাবে একাধিকবার তারেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে অদৃশ্য ক্ষমতা বলে তারেক জিয়া তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো আবার চালু করতে পারেন।

তবে এবার টাকার পরিমাণ বিপুল এবং বাংলাদেশি টাকায় তার পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা হওয়ার কারণে এই জব্দকৃত টাকা শেষ পর্যন্ত তারেক জিয়া ফেরত পাবেন কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ।  

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin