iraq_iran

যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলো সৌদি-ইরান: লাভ কার?

নতুন করে উত্তাপ হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্য। লেবাননকে কেন্দ্র করে নতুন যুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে চিরবৈরী দু’দেশ সৌদি আরব ও ইরান। অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বার্থ উদ্ধার দূরের কথা- দেশ দুটির মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ কিম্বা ছায়াযুদ্ধে লাভবান হবে না কেউই। উল্টো আঞ্চলিক অস্থিরতা নতুন মাত্রায় পৌঁছার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইরান ও সৌদি আরবও। ক্ষতি থেকে বাদ পড়বে না মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের ওপর নির্ভরশীল তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশ। তবে যুদ্ধে ব্যস্ত দুই পক্ষের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে পেট্রো ডলার পকেটে পুরবে কিছু পশ্চিমা দেশ!

সৌদি আরব আর ইরানের দ্বন্দ্ব কয়েক দশক পুরানো। এক সময় বিভিন্ন কারণে মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের অবস্থান একচেটিয়া নেতার আসনে ছিল। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইতিহাসে বড় ধরণের পরিবর্তন আনেন ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনি। ইসলামি বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ঘটে শাহ যুগের পতন। এরপর থেকেই রিয়াদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ঘটে তেহরানের আত্মপ্রকাশ।

এরপর থেকেই আঞ্চলিক রাজনীতি, অর্থনীতিতে প্রভাব বাড়তে থাকে ইরানের। ধর্মীয় বিভাজন, জাতিগত দ্বন্দ্ব আর শাসকদের ক্ষমতালিপ্সু মানসিকতার কারণে এক সময় রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শত্রুতায় রূপ নেয়। আঞ্চলিক দেশগুলোতে ছড়ি ঘোরানোকে কেন্দ্র করে এখন দেশ দুটি মুখোমুখি অবস্থানে আছে বহু বছর ধরে। কোন দেশের সরকারের ওপর সৌদি প্রশাসনের প্রভাব থাকলে বিরোধী বা বিদ্রোহী গোষ্ঠিগুলোকে মদদ দিতে থাকে ইরান। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় দেখা যায় উল্টো চিত্র।

সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইনের পর এখন লেবাননে পৌঁছেছে সৌদি-ইরানের এই শত্রুতার লড়াই। গত কয়েক দিনে উভয় পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধের উস্কানি’র অভিযোগ তুলেছে। সৌদি আরব বলেছে, ইয়েমেনের হুতিদের দিয়ে রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এটি যুদ্ধের উস্কানি। আবার লেবানন থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরে আসারও নির্দেশ দিয়েছে রিয়াদ। মিত্র কয়েকটি দেশও সৌদির সিদ্ধান্ত অনুকরণ করেছে।

অন্যদিকে ইরান আভিযোগ করেছে সৌদি আরব যুদ্ধের উস্কানি দিচ্ছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানের বিরূদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তিমত্তা প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র আর দেশটির মিত্ররা। কিন্তু কিছুই হাসিল করতে পারেনি। কেননা, ধারণার তুলনায় ইরানিদের মনোবল অনেক বেশি শক্ত। ইয়েমেন-ইরাক-সিরিয়ার মতোই আমরা সৌদি আরবের সার্বিক উন্নতি কামনা করি। তাই বলছি বন্ধুত্ব-ভ্রাতৃত্ব আর পারস্পরিক সহাবস্থান ছাড়া আমাদের সামনে কোনো বিকল্প পথ নেই।

বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, সরাসরি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ নয়, বরং ছায়াযুদ্ধে জড়াচ্ছে দেশ দুটি। আর সেই ছায়াযুদ্ধের ক্ষেত্র হয়ে উঠবে অন্য কোনো দেশ। হয়তোবা সেটি লেবানন!

লেবাননের জোট সরকারের অংশীদার ফিউচার মুভমেন্ট পার্টির নেতা ও পার্লামেন্ট সদস্য বাসেম শাব বলেছেন, সিরিয়া যুদ্ধ শেষের দিকে। সেখানে বলা চলে সৌদি-মার্কিন জোটের কৌশলগত পরাজয় ঘটেছে। এখন তারা লেবাননের কাঁধে বন্দুক ঠেকিয়েছে। আখেরে কোন পক্ষই এতে লাভবান হবে না।

কার্নেগি মিডল-ইস্ট সেন্টারের পরিচালক মাহা ইয়াহা বলেন, গত কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন ইস্যুতে খাদের কিনারায় মধ্যপ্রাচ্য। আঞ্চলিক সংঘাত বলতে আসলে যা বোঝায়, তা পুরোপুরি যুদ্ধ নয়। বরং ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বহন করছে এসব ছায়াযুদ্ধ।

এদিকে সিরিয়া যুদ্ধ না শেষ হতেই নতুনভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। শুক্রবারপারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস।

সূত্র: যমুনাটিভি

Check Also

মুখ ফিরিয়ে নিলেন আত্মীয়স্বজন, হিন্দু বৃদ্ধের সৎকার করলেন মুসলিম যুবকরা

বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় ভারতের বুলন্দশহরের বাসিন্দা রবিশংকরের। অথচ প্রতিবেশীরা মনে করেন করোনা সংক্রমণের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin