moududh_ahmedh

মওদুদের চোখে এরশাদের পতন

১৯৯০ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে আঁচ করা যাচ্ছিল যে, জেনারেল এইচএম এরশাদের সরকার বেশি দিন থাকতে পারবে না। যে কোন সময় এরশাদ সরকারের পতন হতে পারে। এমন ধারণা প্রবল হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন মহলে।সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।

কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। জেনারেল এরশাদের পতন তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল।বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন মোকাবেলার জন্য তিনি সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

বিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো এরশাদের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।নভেম্বর মাসের শেষের দিকে জেনারেল এরশাদ বেতার ও টেলিভিশনে এক ভাষণের মাধ্যমে বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তিনি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো জেনারেল এরশাদের সে বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারছিল না।

ডিসেম্বর মাসের চার তারিখে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদকে টেলিভিশন সেন্টারে পাঠিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ। উদ্দেশ্য ছিল, প্রেসিডেন্টের পরিকল্পিত নির্বাচন সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা।মি. এরশাদের নির্দেশ মতো ভাইস-প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ সন্ধ্যার সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে গিয়েছিলেন ভাষণ রেকর্ড করার জন্য।

সে ভাষণ তিনি রেকর্ডও করেছিলেন।সে ভাষণ রেকর্ড করার পর মওদুদ আহমদ যখন বাসায় ফিরে আসেন তখন তিনি জানতে পারেন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।এর কয়েক ঘণ্টা পর মধ্যরাতে মওদুদ আহমেদকে আবারো বাংলাদেশ টেলিভিশনে যেতে হয়েছিল প্রেসিডেন্ট এরশাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেবার জন্য।

১৯৯০ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর রাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মওদুদ আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘প্রথম ভাষণ রেকর্ড করে আমি যখন বাসায় ফিরে আসলাম, তখন আমার স্ত্রী বললেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব ফোন করেছিলেন। তখন আমি ওনাকে ফোন করলাম। উনি তখন বললেন, আমি এখনই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তখন আমি ওনার বাসায় গেলাম। তখন রাতে নিউজের পরে ওনার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া হলো।

’মওদুদ আহমদের বর্ণনায় সেটা ছিল গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলনের একটি চরম পর্যায়।রাজপথের আন্দোলনে বিচলিত হয়ে পড়ে জেনারেল এরশাদের সরকার তখন ধীরে-ধীরে ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা শুরু করে বলে জানান মওদুদ আহমদ।তখনকার পরিস্থিতি বর্ণনা করে মি. আহমদ বলেন, ‘জোর করে ক্ষমতায় থাকার কোন অর্থ হয় না।’

জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা ছাড়লে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান কে হবেন? এ বিষয়টি নিয়ে যখন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর জেনারেল এরশাদ পদত্যাগের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমদকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মেনে নিতে একমত হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো।

এরপর খুব দ্রুত প্রেসিডেন্টের পদ থেকে জেনারেল এরশাদের পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। প্রথমে পদত্যাগ করেন তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ।তিনি পদত্যাগের পর সাহাবউদ্দিন আহমদকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

এরপর রাষ্ট্রপতির পদ থেকে জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করে বিচারপতি সাহাব উদ্দিন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।‘পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সবকিছু হয়ে গেছে,’ বলছিলেন মি. আহমদ।

মওদুদ আহমদ দাবি করেন, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি ‘আনন্দের সাথে’ পদত্যাগ করেছেন।পদত্যাগ না করে জেনারেল এরশাদের সামনে আর বিকল্প কোনো রাস্তা ছিল না বলে মনে করেন মি. আহমদ। কারণ সেনাবাহিনী সে সরকারকে আর সমর্থন দিতে রাজী হয়নি।

সেনাবাহিনীর তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেনারেল এরশাদ সরকারের সাথে থাকতে চাননি।মওদুদ আহমদ বলেন, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। সেজন্য তারা আর কোনো হস্তক্ষেপ করতে রাজী হননি বলে মি. আহমদ উল্লেখ করেন।

১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাজনৈতিক জোট অংশ নেয়নি।মি. আহমদ বলেন, ‘তখনই বিষয়টা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, কোনো না কোনো সময় সরকারকে সরে যেতে হবে।’মি. আহমদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এতো আন্দোলন হলো সে স্বৈরাচার বর্তমান সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করছে।’

‘যে স্বৈরাচারের পতনের দিবস পালন করছি সে স্বৈরাচার এখন বহাল তবিয়তে আছেন এবং তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন বর্তমান সরকারের,’ বলেন মি. আহমদ।

dailynayadiganta

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin