risvi_01

ভোটারবিহীন সরকার সম্পূর্ণ নির্বিকার হয়ে পড়েছে : রিজভী

ক্ষমতাসীন সরকারকে ভোটারবিহীন আখ্যা দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, দেশি-বিদেশি নানা মহলের চাপে ভোটারবিহীন সরকার এখন সম্পূর্ণ নির্বিকার হয়ে পড়েছে। এজন্যই সরকারের প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের দেখতে যাত্রাপথে দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে অজস্র মানুষের ছুটে আসায় প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী নেতারা ঈর্ষায় পাগল হয়ে গেছেন। সেই কারণে তাদের মুখ থেকে অসংলগ্ন ও অশোভন কথা বেরুচ্ছে। আমি এ ধরনের অশোভন, উদ্ভট, কাণ্ডজ্ঞানহীন ও পরশ্রীকাতর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আজ বিকেলে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধাবার জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমি তার বক্তব্য ধর্তব্যে নেই না’।

প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরার মাধ্যমে হয়রানি করছে সরকার। কারণ ভোটারবিহীন সরকার ও সরকার প্রধানের আসল টার্গেট হচ্ছেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা এমন বক্তব্য রেখেছেন যার উত্তর দেয়াটাও কোনো ভদ্রলোকের পক্ষে শোভনীয় নয়। তারপরও বলতে হয়, স্বৈরাচারী শক্তি সবসময় বিরোধী মত, চিন্তা ও বিশ্বাসের সহাবস্থানকে ভয় পায় বলেই গণতন্ত্রে অপরিহার্য বিরোধী দলের আওয়াজকে ধর্তব্যে না নিয়ে নির্দয় নিষ্ঠুর দমনের পন্থার ওপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, সব দেশেই নির্লজ্জ স্বৈরাচার গণতন্ত্রে বহুমতের চর্চাকে ধর্তব্যে নেয় না। যদি আমলে নিতো তাহলে গণতন্ত্র রুগ্ন হয়ে পড়তো না এবং সরকারের স্বৈরাচারী হিংস্র রূপ ব্যাপকতা লাভ করতো না। স্বৈরাচারী শক্তি সবসময় বিরোধী মত, চিন্তা ও বিশ্বাসের সহাবস্থানকে ভয় পায় বলেই গণতন্ত্রে অপরিহার্য বিরোধী দলের আওয়াজকে ধর্তব্যে না নিয়ে নির্দয় নিষ্ঠুর দমনের পন্থার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা অগ্রগামী মানবসভ্যতা বিরোধী সেই সকল স্বৈরশাসকদেরই একজন এবং এক অভিনব সংস্করণ।

‘রোহিঙ্গাদেরকে মানবিক সহায়তা নয়, ত্রাণের নামে শোডাউন ছিল বিএনপির লক্ষ্য’ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া রিজভী বলেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাস্তা দিয়ে কোথাও গেলে মানুষেরই ঢল নামবে, জ্বীন-ভুতের নয়। মানুষজন তো রাস্তাঘাট দিয়েই চলাচল করে, সর্ষে ক্ষেত বা ধান ক্ষেত দিয়ে নয়। এখন রাস্তায় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখতে অজস্র মানুষ ছুটে আসায় প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-নেতারা ঈর্ষায় পাগল হয়ে গেছে। আর সেই কারণেই তাদের মুখ থেকে অসংলগ্ন কথাবার্তা বের হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-২৫ আগস্টে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল যখন শুরু হলো, তখন কিন্তু আপনি অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে তখন বাংলাদেশে ঢুকতে দেননি। তাদেরকে বাংলাদেশে আসতে বাধাদানের উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে গুলিও চালানো হয়েছে। নাফ নদী পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের নৌকা বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি, আর এই কারণে অসংখ্য রোহিঙ্গার সলিল সমাধি হয়েছে। আপনি কী এগুলো বেমালুম ভুলে গেছেন? এগুলো কোন ধরনের মানবিক সহায়তা তা জনগণ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চায়। আপনার এই ভূমিকার জন্য কী আপনাকে মাদার অব হিউম্যানিটি বলবো নাকি লেডি ফেরাউন বলবো?

রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার পেছনে বর্তমান অবৈধ সরকারের বড় ধরনের ষড়যন্ত্র রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ নানা ধরনের চাপকে অন্য দিকে সরাতে পরিকল্পিতভাবে এসব বর্বরোচিত হামলা-অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে সরকার। যুগ যুগ ধরে এদেশ শান্তিপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামালে আমরা তো এরকম গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা দেখিনি। শেখ হাসিনার আমলেই এই ঘটনা ঘটছে। তার মানে কী? একটা বিশেষ নীল নকশার অংশ হিসেবে এটা করা হয়েছে। যার সাথে রাষ্ট্রের মদদ বা রাষ্ট্রের আনুকূল্য না থাকলে এটা হতে পারে না। কারণ, সরকার ভালো করেই জানে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

এদিকে আজ বিশেষ আদালতে হাজিরা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় ফেরার পথে রাস্তার দুই ধারে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা ও আটক করায় নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, দেশনেত্রীর আদালতে যাত্রাপথে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় তাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত থাকেন। এটাও সরকার সহ্য করতে পারছে না। বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে অসংখ্য নেতাকর্মী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। দেখুন শাহিনের (যুবদল নেতা) অবস্থা। তার পিঠের কি অবস্থা করেছে। যুবদলের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সে। এ হচ্ছে শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের নমুনা, এই সরকারের শাসনের নমুনা।

Daily Naya Diganta

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin