ভেঙ্গে যাচ্ছে ১৪ দল?

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষায় অঙ্গীকার নিয়ে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় যখন স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলণ্ঠিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, সে সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষে, বাম গণতান্ত্রিক শক্তিদের নিয়ে এই ১৪ দল গঠিত হয়েছিল।

যদিও বলা হয়েছে ১৪ দলীয় জোট।  কিন্তু এই দলের হাতেগোনা কয়েকটি দল ছাড়া অধিকাংশই অস্তিত্বহীণ। ১৪ দলের প্রধান শরিক গুলোর মধ্যে রয়েছে জাসদ। সম্প্রতি জাসদ দুই ভাগ হয়ে গেছে এবং দুটি ভাগই ১৪ দলে রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ওয়াকার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল। তবে অন্য দলগুলোর বাংলাদেশের রাজনীতিতে তেমন প্রভাব প্রতিপত্তি নেই।

কিন্তু রাজনীতিতে জোট এবং ঐক্যের একটি আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। কাজেই ১৪ দলের রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি কম না বেশি, সেটার চেয়েও বড় বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনৈতিক দলগুলো একই প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও ১৪ দলকে অটুত রেখেছে।

কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে, আওয়ালীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সে সময়ে আওয়ামী লীগ মহাজোটের সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন । ২০০৯ সালের শেষ ভাগে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময় রাশেদ খান মেননকে মন্ত্রিসভার প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি তখন নেননি ।

পরবর্তিতে রাশেদ খান মেননই আবার ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন । এসময় ১৪ দল সক্রিয় ছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিমের কারণে ১৪ দলকে অত্যন্ত ক্রিয়াশীল এবং সক্রিয় দেখা গেছে।

কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করল, তখন আওয়ামীলীগ একলাচলো নীতি অনুসরণ করে। সে সময় ১৪ দল একরকম উপেক্ষিত হয়েছে। তারপরও মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলকে কিছু কর্মসূচির মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ১৪ দল নিষ্ক্রিয় এবং তার কোনো কার্যক্রম নেই।

মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা, আমির হোসেন আমুকে ১৪ দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সেই দায়িত্ব দেয়ার পর, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেন নি। ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল ওয়াকার্স পার্টি। এ দলের নেতা ফজলে হোসেন বাদশা বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে, ‘আওয়ামী লীগ ১৪ দলের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

১৪ দলকে গুরুত্বহীন করে ফেলেছে।’ জাসদের আরেকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন,‘আমরা শুধু মাত্র পায়ে ধরা বাকি রেখেছি। কিন্তু ১৪ দলকে সক্রিয় করার কোন উদ্যোগ নেই। আওয়ামী লীগ এখন আমলা এবং পুলিশ নির্ভর একটি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। যার ফলে ১৪ দলের মধ্যে নানারকম অভিমান, অসন্তোষ এবং ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে।’

সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের অস্বস্তি গুলো দৃশ্যমান হচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে ১৪ দলের শরিক চারটি রাজনৈতিক দল নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু তরেছে। তারা আওয়ামী লীগের উপেক্ষার কারনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ১৪ দল থেকে বেরিয়ে যেতে পারে বলে একাধিক সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে। যে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছে তাদের মধ্যে রয়েছে দুই জাসদ, ওয়াকার্স পাট্টি এবং বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল।

একাধিক সূত্র বলছে, এই রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ১৪ দলে বৈঠক করার জন্য বলেছে এবং কিছু কর্মসূচি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এটিকে গায়ে মাখেনি।

বিশেষ করে সারাদেশে ধর্ষণের পর ১৪ দলের পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে আহ্বান সাড়া দেয়নি। আর এ কারণেই এখন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর অভিমান প্রকারশ্য। তারা একটি আলাদা অবস্থান গ্রহণের কথা চিন্তা ভাবনা করছে।

বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা দুটি বিকল্প নিয়ে ভাবছেন। প্রথমত, ১৪ দল থেকে আলাদা হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আলাদা অবস্থান রাখবেন। আর দ্বিতীয়তঃ বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা, বাসদসহ অন্যন্য রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যে জোট গঠিত, সেটির সঙ্গে মিলতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা কি করবেন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ১৪ দলে যে অভিমান এখন প্রকাশ্য, তারা যে আলাদা একটা অবস্থান নিতে চাইছেন, সেটা আওয়ামী লীগের নেতারাও স্মীকার করেছেন।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin