bnp_nirbachon_pa

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি হচ্ছে

আগামী একাদশ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আগেই এ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য একটি প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করতে চায় বিএনপি। দলনিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়- আপাতত দলীয় অবস্থান এমন হলেও ইতোমধ্যে প্রত্যেক আসনের বিপরীতে ৩ জন করে প্রার্থী বাছাই কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়েও নিচ্ছে দলটি।

সারাদেশের ৩০০ আসনের পৃথক তিনটি জরিপ কাজ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তিনটি জরিপের পৃথক তালিকায় উঠে আসা প্রথম ৩ ব্যক্তির নাম নিয়ে ৩শ’ আসনের বিপরীতে মোট ৯শ’ জনের সম্ভাব্য একটি প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে তালিকায় উঠে আসা একেবারে নতুন ব্যক্তিদের ‘জীবনবৃত্তান্ত’ সংগ্রহের কাজ। খালেদা জিয়ার তরফে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহের কাজটি করছেন সেনাবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তা- যিনি আবার দলের পোর্টফোলিওতে নেই বা দলের কোনো কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িতও নন বলে জানা গেছে।

জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়েছে এমন এক ব্যক্তি ‘নিজের নাম প্রকাশ করার অনুমতি না দিয়ে’ মানবকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ‘একদিন হঠাৎ করে রিং বাজতেই মোবাইল স্ক্রিনে দেখি অপরিচিত নম্বর। কলটি ধরে হ্যালো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে বললেন, ‘আমাকে চিনবেন না। আপনি কি রাজনীতি করেন?’ আমি বললাম, আমি তো এখন রাজনীতি করি না। তবে ছাত্রজীবনে সক্রিয়ভাবেই রাজনীতি করেছি। সেটা তো অনেকদিন আগের।’ তিনি বললেন, ‘আপনার অতীতের সবকিছুর বিবরণ তুলে একটি বায়োডাটা আমার কাছে পাঠিয়ে দেন।’ আমি বললাম, আপনাকে চিনি না। অপরিচিত এক লোকের আছে আমি বায়োডাটা পাঠাব কেন?’

তিনি বলেন, এমন প্রশ্ন করাতে সামরিক বাহিনীর সাবেক ওই সদস্য খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে জানালেন, জরিপে নাম উঠে আসার কারণেই আমারসহ নতুনদের বায়োডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বিএনপির শীর্ষ মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় লাইনে একটি জরিপ করিয়ে রেখেছেন। দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের নেতৃত্বে আরো একটি জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। লন্ডনে অবস্থানরত দলের আরেক শীর্ষ নেতা তারেক রহমান দল ও প্রফেশনালদের সমন্বয়ে আরো একটি জরিপ করা সম্পন্ন করেছেন। বিএনপির এই তিনটি জরিপ কাজ নিয়ে এখন চলছে বিচারবিশ্লেষণ। তিন জরিপেই যাদের নাম প্রথমে রয়েছে কিন্তু নতুন তাদের বায়োডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বাসায় মানবকণ্ঠের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, নির্বাচনে পরিবেশ থাকলে বিএনপি নির্বাচনে সদা প্রস্তুত। ৩শ’ আসনের জন্য আমাদের ৯শ’ প্রার্থী বাছাই করা রয়েছে।

আসনভিত্তিক জরিপের বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মানবকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। সেই দিক থেকে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে যে কোনো মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তত। সেই প্রস্তুতি বিএনপি নিয়েই রাখে।

সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা এক বৈঠকে হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এমন একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ১২ নভেম্বরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশেও হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এমন বক্তব্য দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আবার একই সমাবেশে আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে কী কী করবেন তাও তিনি উল্লেখ করেছেন। এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারেও তিনি তার বক্তৃতায় ইতিবাচক কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া তার বক্তৃতায় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জনগণ কি পাবে সে প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে সারাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া হবে। এক বছর বেকার থাকলে বেকার ভাতা দেয়া হবে। শিক্ষিত যুবকদের চাকরির নিশ্চয়তা দেয়া হবে। নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সব শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে। স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হবে। কৃষকদের জন্য সার-ওষুধ সুলভ করা হবে। ন্যায্য দরে কৃষিপণ্য কিনে নেয়া হবে। দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফ করা হবে। গ্রামে কর্মসংস্থান করা হবে, যাতে গ্রামের মানুষকে শহরে আসতে না হয়। গ্রামের মানুষ গ্রামে থেকেই গ্রামের উন্নয়ন করবে। কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হবে। যদিও এ বছরের প্রথমার্ধেই এমন একটি ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন খালেদা জিয়া।

তিনি তার বক্তৃতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন, অনেকেই বলছেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি যাবে, জেল জরিমানা হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে দলমত নির্বিশেষে দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হবে। সরকারি চাকরি যারা করেন তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমরা জানি ও বুঝি তারা সরকারের হুকুম পালন করেন মাত্র। তাই তাদের ওপর কোনো প্রতিহিংসা দেখানো হবে না। তারা নির্ভয়ে কাজ করবেন। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না। এই দেশই আমার একমাত্র ঠিকানা। এ দেশের মানুষই আমার বড় ও একমাত্র শক্তি।

খালেদা জিয়া এ ছাড়াও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে জাতীয় ঐক্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই সবার সঙ্গে। আলাপ-আলোচনা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। যেই ক্ষমতায় থাকুক আর যেই ক্ষমতার বাইরে থাকুক সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বিএনপির সঙ্গে জড়িত অনেক নেতাই মনে করেন, এর অর্থ হচ্ছে, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন তো করবেই বিএনপি। তবে এ দাবি আদায়ে কোনো ধরনের সংঘর্ষ-সহিংসতার দিকে যাবে না তারা। দীর্ঘ ১০ বছর দলটি ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা। খালেদা জিয়া আদালতে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ২৫ হাজার মামলায় প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ নেতাকর্মী পর্যুদস্ত। ৭৫ হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন। এমতাবস্থায় বিএনপি মনে করে, তারা যদি ক্ষমতায় যেতে না পারে, তাহলে এসব মামলা থেকে তারা রক্ষা পাবে না। এ জন্য ক্ষমতায় যেতে প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা যা করার তাই করবে।

শেখ হাসিনাকে বাদ না দেয়ার ব্যাপারে যদি সরকার তার অবস্থানে শেষ পর্যন্ত অটল থাকে, তা হলে কী করবে বিএনপি- এমন এক প্রশ্নে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা চেষ্টা করব শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতার মাধ্যমে কোনো ধরনের সংঘর্ষ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে একটি সমাধানে আসার।

তিনি বলেন, কিন্তু সরকারের এটি আত্মোপলব্ধির ব্যাপার। তারা ইচ্ছা করলে জোর করে আরেকটি নির্বাচন করার চেষ্টা করতে পারে। তো সেখানে আমাদের আন্দোলন করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ থাকবে না। আমরা এবার ওই একতরফা নির্বাচন হতে দেব না।

বিএনপি নেতারা জানান, এ জন্য একদিকে আন্দোলন অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে দলটি। সূত্র জানায়, ওই তিনটি জরিপের ভিত্তিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে প্রতিবেদন তৈরি করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতা। তাদের সামনে রয়েছে গত তিনটি নির্বাচনের ফলাফল। তাতে প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট, সম্ভাব্য প্রার্থীর দলে ভূমিকা ও তৎপরতা বিবেচনায় নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন খালেদা জিয়াকে দেয়া হবে। যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থী বা সাবেক এমপি মারা গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়ার চিন্তা আছে।

এ ছাড়াও খালেদা জিয়া নিজে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডেকে নিয়েও নির্বাচনের সবুজ সংকেত দিচ্ছেন। এ বছরের প্রথম দিকে সংস্কারপন্থি বলে এতদিন ধরে নিষ্ক্রিয় সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জহিদ উদ্দিন স্বপনকে দলে স্বক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দলীয় এই নেত্রীর নির্দেশ পেয়ে তারা এলাকায় এখন কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এভাবেও সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনীত করে রাখা হচ্ছে বলে চেয়ারপার্সনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন।

মানবকণ্ঠ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin