বিএনপির মহাসচিব পদে আলোচনায় যারা

মহাসচিব পদে এবার আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন তিন নেতা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যার নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আবার অনেক সিনিয়রকে ডিঙিয়ে স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামও আলোচিত হচ্ছে।

তিনি তারেক রহমানের বেশ অনুগত বলে প্রচার আছে। সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাবশালী এ নেতা বর্তমানে দলের দুটি কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতিতে দলের জাতীয় করোনা পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক এবং পরবর্তী সময়ে বন্যা পরিস্থিতিতে দলের গঠিত ত্রাণ কমিটিরও আহ্বায়ক করা হয়েছে তাকে।

অপরদিকে গুঞ্জন আছে, মহাসচিব পদটি পাওয়ার জন্য স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন দলের ‘ফুলটাইম’ রাজনীতিবিদ বলে পরিচিত রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। ১/১১-এর সময় থেকে লাইমলাইটে আসা সাবেক এই ছাত্রদল নেতা কখনোই থেমে থাকেননি। চলছেন তো চলছেনই। মামলা, গ্রেফতার কিংবা করোনা, কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। যদিও তার এসব বিষয় নিয়ে দলের মধ্যে রয়েছে নানা রকমের রাসাত্মক আলোচনা।

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও তার ওপর বিরক্ত। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বহুবারই রিজভীকে নিয়ে প্রকাশ্যে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদকের পদটি খালি থাকায় সেটিও সামলাচ্ছেন রুহুল কবির রিজভী।

যদিও সমালোচকরা বলেন, রিজভী দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে কাউকে আসতে দেননি ইচ্ছা করেই। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার প্রভাব বলয় সৃষ্টি করতেই তিনি এসব করেছেন। সেদিক থেকে তাকে যদি তারেক রহমান মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা দেন তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির সাতজন নেতা মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তারা হলেন- প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (১৯৭৮-৮৬), লে. কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান (১৯৮৬-১৯৮৭), কে এম ওবায়দুর রহমান (১৯৮৭-১৯৮৮), ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার (১৯৮৮-১৯৯৬), আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া (১৯৯৬-২০০৭), খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন (২০০৭-২০১১) এবং বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (২০১১- ২৯ মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত এবং ৩০ মার্চ ২০১৬ থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত)।

বিএনপির নেতারা যা বলছেন

দলের মহাসচিব পদে পরিবর্তনের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো আলোচনা নেই। যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ কথা বলছেন।’

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০০৯ সালের পর থেকে বিশেষ করে ২০১২ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে নেয়ার পর থেকে সংবিধান পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ যে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে চাচ্ছে, তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখছি, এখানকার সমস্ত রাজনৈতিক দলকে পুরোপুরিভাবে ইনঅ্যাক্টিভ (অকার্যকর) করে দেয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক নেতাদের বিরাজনীতিকরণের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কিন্তু আজ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। আমাদের দলের প্রায় ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা, পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে।

সত্য কথা বলতে কী, শুধু আমরা নই, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এমনকি মিডিয়া, কেউই এখানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমার কাজ সফল হচ্ছে, কি হচ্ছে না, এটা বিচার করার দায়িত্ব তো আমার নয়। এটা জনগণ বিচার করবে এবং পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু দল তো এখন পর্যন্ত সে ধরনের কথা বলেনি। দল সে ধরনের সিদ্ধান্ত যদি নেয়, তা কার্যকর হবে।’

গত প্রায় এক দশক ধরে মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন, বিএনপির রাজনীতি নিয়ে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট, বিএনপি আসলে ঠিক পথে আছে কি-না? জবাবে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বর্তমানে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে, এখানে গণতন্ত্রের কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই।

সেক্ষেত্রে এখানে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিকভাবে কাজ করার পরিবেশ নেই এবং স্বাভাবিকভাবে আমরা এখানে যারা দায়িত্বে রয়েছি, কাজ করছি; আমাদের পক্ষে কাজ করা খুবই ডিফিকাল্ট (কষ্টকর) হয়ে যাচ্ছে।’

সূত্র: জাগো নিউজ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin