বিএনপিতে ক্যু

হঠাৎ করেই বিএনপি আন্দোলনমুখি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাসে আগুন দেয়ার পর বিএনপি এখন সহিংস রূপ গ্রহণ করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। সরকারের বিরুদ্ধে একদফা আন্দোলন করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হল যে, বিএনপির এই হঠাৎ রুদ্রমূর্তিতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা অনুপস্থিত। বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে, সে প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতাকে দেখা যায়নি। এর ফলে অনেকে মনে করছেন বিএনপিতে ক্যু হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের অপসারিত করে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং তারেক পন্থিরা বিএনপির নিয়ন্ত্রণ ভার গ্রহণ করেছেন।

আজ বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে আমানউল্লাহ আমান, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের মত তরুণ মুখদের দেখা গেছে । অন্যদিকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের মতো নেতৃবৃন্দকে দেখা যায়নি। গত কিছুদিন ধরে বিএনপির এ সমস্ত সিনিয়র নেতারা এক ধরনের মৌনব্রত পালন করছেন।  

তাদের কে কোন রকম কর্মকাণ্ডতে দেখা যাচ্ছে না। আর এই সময়ে দলের তরুণরা এই সমস্ত ‘বুড়ো ভাড়দের’ কে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করছিল। তারা বলছিল যে, এ সমস্ত সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন পদ দখল করে আছে, কিন্তু দলের জন্য কাজ করছেন না। এদের দিয়ে সরকার পতনের কোন আন্দোলন করা সম্ভব নয়।

আর এ নিয়ে যখন বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিরোধ এবং বিভক্তি  ঠিক সেসময়  বিএনপিতে ক্যু হলো বলে অনেক বিএনপি নেতা মনে করছেন। বিএনপির একজন তরুণ নেতা, যিনি আজকের প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন, তিনি বলেছেন যে সিনিয়ররা কোন কাজ করছেন না, তারা বয়সের ভারে ক্লান্ত, তারা ঘরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

এদের দিয়ে রাজপথের আন্দোলন হবে না। বিএনপির ওই তরুণ নেতা মনে করেন যে, নানা কারণেই সরকার একটু বেকায়দায় আছে। এখনই সময় সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন করার।  বিএনপির অন্য আরকেজন নেতা বলেছেন, তাড়া ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই সিনিয়রদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, কখন তারা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন হবে। নেতাকর্মীরা প্রস্তুত কিন্তু সিনিয়র নেতাদের জন্য কোন আন্দোলন সংগঠিত করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে কর্মীরা হতাশ হচ্ছিল এবং সরকার যা খুশি তাই করছিল।

বিএনপির অন্য একজন নেতা মনে করেন, এখন নানা কারণেই সরকারের উপর জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি, মানুষের অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সারা দেশে ধর্ষণসহ নানারকম সামাজিক অপরাধ ইত্যাদি সব মিলিয়ে মানুষ অস্থির। আর এই অস্থিরতার সুযোগটা নিয়ে তারা রাজপথে আন্দোলন করতে চায়।

বিএনপির তরুণরা মনে করছেন, এখনই সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন করার জন্য। আর এই তরুণদের উস্কে দেয়ার জন্য প্রধান ভূমিকা রাখছেন তারেক পন্থীরা। বিএনপির যারা সিনিয়র নেতা আছেন, যারা স্থায়ী কমিটির সদস্য তাদের বেশিরভাগই বেগম খালেদা জিয়া পন্থী এবং বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারা রাজনীতি করেছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খালেদার প্রতি অনুগত।

এরা তারেকের কর্তৃত্ব তেমন একটা মানে না। আর এ জন্যই তারেক দলকে ঢেলে সাজানোর জন্য উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে তারেকের সঙ্গে বেগম জিয়ার এক ধরনের মতবিরোধও তৈরি হয়েছে। এখন বিএনপিতে যখন নতুন করে আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে, তখন নীরবেই বিএনপিতে অভ্যুত্থান হয়েছে বলে একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন।

সিনিয়র নেতাদের দিকে তাকিয়ে না থেকে তাদের অপেক্ষায় না থেকে বিএনপি এখন রাস্তায় সহিংস পথে যাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি`র একাধিক শীর্ষ নেতা। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা সংগঠিত হতে পারবে বলেও মনে করছেন তারা।

কিন্তু বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন এটি তারেক জিয়ার আরেকটি হঠকারিতা। এভাবে হঠাৎ করে আন্দোলন তৈরি করা যায় না, আন্দোলনের জন্য একটা পরিস্থিতি এবং পরিবেশ লাগে। কিন্তু সেটি না করেই যদি এ ধরনের হঠকারি আন্দোলন করা হয়, তাহলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin