sinha

দুই-একদিনের মধ্যে দেশে ফিরছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা – দেখুন বিস্তারিত

দুই একদিনের মধ্যে দেশে ফিরছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। চলতি মাসের ১০ অথবা ১২ তারিখে তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছে একটি বিশ্বস্ত সূত্র।

সূত্রটি আরো জানায় প্রধান বিচারপতি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি সরাসরি দেশে ফিরবেন। প্রধান বিচারপতির প্রয়োজনীয় প্রটোকল প্রস্তুতের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিভাগকে বিষয়টি ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে।

এর আগে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেছিলেন প্রধান বিচারপতির যখন ইচ্ছা তখন দেশে ফিরে এজলাসে বসতে পারেন। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা চান সম্মানজনকভাবে দেশে ফিরে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য এজলাসে বসতে এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১১ অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে। কিন্তু আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আগেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে বিচারকাজ পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়ায় ওই আশা পূরণের বিষয়টি অনেকটাই সুদূর পরাহত। আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলও বিষয়টি বারবার গণমাধ্যমকে বলে আসছেন।

দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সিনহা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না পদত্যাগ করবেন এই বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি। গত সোমবার এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে বিচারকার্য করবেন না বলে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক বিবৃতিতে আগেই জানানো হয়েছে। এরপরও যদি উনি (প্রধান বিচারপতি) দায়িত্ব নিতে চান তবে তা অবমাননাকর বলেই মনে করি।

ইতোমধ্যে সরকার সেই পুরো রায়ের রিভিউ আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইনমন্ত্রী।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সরকারের শাসন বিভাগের সাথে বিচার বিভাগের টানা পোড়েন শুরু হয়।আইনজীবী সমিতির নেতারা এসময় অভিযোগ করে বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে একমাসের ছুটিতে যাওয়ার দুই দিন পর প্রকাশ্যে বেরিয়ে তিনি গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত ভিসা সেন্টারে উপস্থিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, ৩ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি সিনহা। পরবর্তীকালে ওই ছুটির মেয়াদ ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। গত ১৩ অক্টোবর তিনি অস্ট্রেলিয়া যান। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের পূর্বে প্রধান বিচারপতি সিনহা এক খোলা চিঠিতে বলেছিলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। আমি চলে যাচ্ছি, পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসবো।’

ইনসাইড সার্ভের করা জরিপে বিএনপি-২৪৯ আসন আওয়ামী লীগ-২৯ আসন – দেখুন বিস্তারিত

মহাবীর আলেকজান্ডার আটলান্টিক মহাসাগরেঅর তীরে দাঁড়িয়ে যে কথা বলেছিলেন,সে একই কথা রাজা মান সিং ভাগীরথী নদীর তীরে দা়ঁড়িয়ে বলেছিলেন-যে পৃথিবীর নদীর পানি জোয়ার-ভাটায় এত তাড়াতাড়ি পরিবর্তন ঘটে,সে পৃথিবীর মানুষের মনের পরিবর্তন না জানি কত তাড়াতাড়ি ঘটে। আজ সেই গ্র্যাট আলেকজান্ডার নেই,রাজা মান সিং ও নেই। কিন্তু তাদের কথার প্রতিধ্বনিত ফলাফল আমরা সমাজ জীবনে প্রতিনিয়তই অবলোকন করে থাকি। তাদের কথার সবচেয়ে বেশি কার্যকর সত্যতা প্রমাণিত হয় নির্বাচনী লড়াইয়ের ফলাফলে।

আর ওয়েস্টমিনিষ্টার ডেমোক্র্যাসির নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ৩-৫% ভোটারের পক্ষ পরিবর্তনেই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থা যেভাবে গড়ে উঠেছে, ঠিক তেমনিভাবে অপেক্ষাকৃত নবীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশেও তেমন একটি শাসন ব্যবস্থার দুটি রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বাইরে ছোট-বড় কিছু রাজনৈতিক শক্তি থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে প্রধান দুটি শক্তির সংস্পর্শে তারা আবির্ভূত হন গত ৫ জানুয়ারির একদলীয় বিতর্কিত নির্বাচনের পর নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্য হলেও ক্ষমতার পালাবদলে গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের চাপ আভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোর তরফ থেকে যেমন আছে,আবার বিদেশি শক্তিগুলোও সরকারকে ক্রমাগত চাপের মধ্যেই রেখেছেন।

জাতিসংঘ,ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সাথে বিশ্বব্যাংক,জাইকা সহ নানা দাতা সংস্থাগুলো সরকারকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের চাপ দিচ্ছেন। চাপে রেখেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তাই গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে শপথ গ্রহনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর আগের দুটি সরকারের মত বিদেশ সফরে যেতে খুব একটা দেখা যায়নি। এক ধরনের অসস্থি ও অস্থিরতা তাঁর চোখে মুখে তিনি বছর জুরে লুকাতে পারেননি। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাঁর ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে-“নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না”,বলার মাধ্যমে গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের এই চাপকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকারের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি নির্বাচনে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করলেও নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবীতে তারা অটল রয়েছেন।

তবে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন প্রস্তুতির সাথে সাথে নির্বাচনী গণসংযোগ ও চালিয়ে যাচ্ছেন দলটি। সরকারের মামলা-হামলা,গুম-খুন ও জুলুম নির্যাতনকে উপেক্ষা করে মাঠে থাকার চেষ্টা করছেন বিএনপি নেতারা। ইতিমধ্যে নেত্রকোনা সহ বেশ কিছু জায়গায় পুলিশসহ সরকারী বাহিনীকে রুখেও দিয়েছেন বিএনপি নেতা কর্মীরা। তবে কেন্দ্র থেকে ধীরে চলা নীতিসহ শক্তি সঞ্চয়ের নির্দেশনা রয়েছে বলে তাঁরা সমঝে চলছেন। তবে সাধারণ মানুষ না খেয়ে থাকলেও রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা ও দলগুলোর ভবিষ্যৎ ভাগ্য নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলে থাকেন। বিশেষ করে গ্রামীণ জীবনে তা সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী ২০১৯ সাল বা তৎপূর্ববর্তী নির্বাচনটি কেমন হতে পারে, কারা আসবেন ক্ষমতায়। ক্ষমতাসীন দলের আসন সংখ্যা কেমন হতে পারে।

নির্বাচন কালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হতে পারে, এই নিয়ে আলোচনার যেমন ঝড় আছে,আছে প্রত্যাশার দোলাচল। আশা-নিরাশা,স্বপ্ন আর সম্ভাবনায় অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে প্রতিটি মানুষ। তবে অতি সম্প্রতি “ইনসাইড সার্ভে অফ বাংলাদেশ” নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা একটি জনমত জরিপ চালিয়েছেন। বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৮০০ শিক্ষার্থীকে দিয়ে তাঁরা জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছেন। ২২ টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি ফর্ম সাধারণ জনগণকে পূরণ করতে দেয়া হয়। ৩০০ নির্বাচনী আসনের প্রতিটিতে কমপক্ষে ৩৫০ জন করে ভোটারের প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ ও ফরম পূরণ করেছে ইনসাইড সার্ভের নিয়োগকৃত সদস্যরা।

কর্তব্য কর্মে অবহেলা রোধকল্পে ২ জনের টিমের ১ জন সার্বক্ষণিক মোবাইল ভিডিও কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। এই ভিডিওসহ ইনসাইড সার্ভের নিকট জরিপের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তাদের নিয়োজিত শিক্ষার্থী কর্মীরা। প্রতি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে ২০ জনের সাক্ষাৎ গ্রহনের বাধ্যবাদকতায় অশিক্ষিত ভোটার জরিপে চলে আসলে তাদেরকে প্রশ্ন শুনিয়ে ফরম পূরণে সহায়তা করেছে সার্ভে শিক্ষার্থীরা। কেমন সরকারের অধীনে নির্বাচন চান,কোন দলকে ভোট দিবেন,কেন ভোট দিবেন,সরকারের সফলতার প্রধান দিক কি,প্রধান ব্যর্থতা কি,আপনি সরকার দ্বারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত কি না?হলে কিভাবে,৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন কি না,না দিয়ে থাকলে মনে কষ্ট আছে কি না? হাসিনা না খালেদা কাকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়?না ভোটের বিধান রাখা যেতে পারে কি না? ইত্যাদি প্রশ্ন সম্বলিত প্রায় তিন মাস ব্যাপী জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে প্রায় সাড়ে তিন মাস সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন ইনসাইড সার্ভে অব বাংলাদেশের কর্তাব্যক্তিরা। স্থানাভাবে বিশদ ব্যাখায় না গিয়ে এর চুম্বক অংশটুকু পাঠকের উদ্দেশ্যে তোলে ধরা হলো-ঢাকা বিভাগে ১৩ টি জেলায় ৭০ টি আসন রয়েছে। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়,এখানে বিএনপি-৫৭ টি আসনে এগিয়ে আছেন, আওয়ামীলীগ-১১ টি আসনে এগিয়ে আছেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন।

আর ডঃ কামাল হোসেনের আসনে বিএনপি প্রার্থী না দিলে তিনি জয়ী হতে পারেন। সেটা নির্ভর করবে জাতীয় রাজনীতির টার্ণ বা পোলারাইজেশনের উপর। ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জেলায় ২৪ টি আসন। বিএনপি ১৮ টি আসনে আর আওয়ামী লীগ ৬ টি আসনে এগিয়ে রয়েছেন। তবে রওশন এর মহাজোটে থেকে গেলে সে আসনটি ধরে রাখতে পারে জাতীয় পার্টি। সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ১৯ টি আসন। বিএনপি-১৬ ও আওয়ামী লীগ-২ টি আসনে আর জাপা ( এরশাদ) ১ টি আসনে এগিয়ে আছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জেলায় ৫৮ টি আসন। বিএনপি অধ্যষিত এই বিভাগে বরাবরের মতোই একচেটিয়া ভাবে প্রায় সবগুলো আসন নিশ্চিত করে ফেলেছে বিএনপি। এখানে বিএনপি ৫৮ টি আসনে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। জাসদ নেতা আ.স.ম রবের সাথে বিএনপির বোঝাপড়া বা প্রাথমিক সখ্যতা হলে তাঁকে ১ টি আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে। আর এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ কে ১ টি আসন ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।

বরিশাল বিভাগে ৬ জেলায় ২১ আসন রয়েছে। বিএনপি-১৫ আওয়ামী লীগ-৩,জামায়াত ইসলামী-১টি জেপি ( মন্জু)-১টি, আর জাপা ( পার্থ)-১টি আসন পেতে পারেন। খুলনা বিভাগে ১০ জেলায় সর্বমোট ৩৬ আসন। বিএনপি-৩০, আওয়ামী লীগ-৩,জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ-৩ টি আসনে এগিয়ে আছেন। রাজশাহী বিভাগে ৮ জেলায় ৩৯ আসনে বিএনপি-৩৬,আওয়ামী লীগ-১ জামায়াত ইসলামী-২ টি আসন পেতে পারেন। তবে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির সাথে কোন রকম সম্পর্ক উন্নয়নে ১ টি পেলে এখানে বিএনপির ১ টি আসন কমে যেতে পারে। রংপুর বিভাগে ৮ জেলায় মোট ৩৩ টি আসন। বিএনপি-২২,আওয়ামী লীগ-৩ জামায়াত-১ ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-৭ টি আসনে এগিয়ে আছেন। তবে এগিয়ে থাকা আসনগুলোর ১ টি তে বিএনপি ও ১ টি তে আওয়ামী লীগ ভাগ বসালে অবাক করার মত কিছু ঘটবে না। কারন এই দুটি আসনে খুব সামান্য ব্যবধানে জাতীয় পার্টি এগিয়ে আছেন। সার্বিক পর্যালোচনায় জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে বিএনপি-২৪৯ আওয়ামী লীগ-২৯ জামায়াত ইসলামী-৭ জাতীয় পার্টি ( এরশাদ)-৮ জাপা ( পার্থ)-১ জেপি ( মন্জু) -১ এলডিপি-১ ড: কামাল হোসেন-১ আ.স.ম রব-১ মান্না -১ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী-১ টি আসন পেতে পারেন।

জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়,১৮-২৮ বছর বয়সী তরুণ ভোটারদের প্রায় ৮৫ ভাগই সরকার পরিবর্তনে পক্ষে মত দিয়েছেন। ৫ বছর পর পর জাতীয় নির্বাচন হলেও আগামী নির্বাচনটিকে ১০ বছর পর হচ্ছে বলে ধরে নেয়া যায়। তাই আগামী নির্বাচনে প্রথমবারের মত ভোট দেয়া ভোটারের সংখ্যা স্বাধীনতা উত্তর সবচেয়ে বেশি। এই তরুণ ভোটারদের বড় অংশটাই ক্ষমতাসীনদের জন্য সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে। কেন তরুণদের মনে পরিবর্তনের ইচ্ছা,বা সরকার বিরোধী মনোভাব? এই নিয়ে জানতে চাইলে,বিশিষ্ঠ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনস্তাত্ত্বিক ডাঃ ফিরোজ আলম বলেন-“আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নানা রকমের সামাজিক অসঙ্গতি ও অনাচারগুলো তরুণদেরকে নিয়মিত পীড়া দেয়। যেকোন ধরনের অন্যায়ের প্রতিকারে সরকারই একমাত্র লিগ্যাল অথোরিটি ফর সলভ। সরকার অনেক সময়ই যথোপযুক্ত আন্তরিক হয় না বা চাইলেও অনেক সময় পারে না। প্রায় প্রতিনিয়ত এমন হাজারো অসঙ্গতি থেকে জন্ম নেয়া এই রাগ-ক্ষোভগুলো সরকার বিরোধী একটা কঠোর মনোভাব তরুণদের মনে গড়ে উঠে। আর ভোটের রাজনীতিতে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায়”।

জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়- শেয়ার বাজার লুট,পদ্মাসেতু কেলেঙ্কারি, হলমার্ক,ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ,সোনালী ব্যাংক,বেসিকব্যাংক,বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি,এটিএম বুথে অভিনব চুরি,সরকারের ছত্রছায়ায় নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার ভোটারদের মনে সরকার বিরোধী মনোভাব গড়ে তুলেছে। ডেসটিনির গ্রাহকরা মনে করেন ডেসটিনি তার কমিটমেন্ট অনুযায়ী তাদের লভ্যাংশ দিয়ে আসছিলো। কিন্তু সরকার দূরভিসন্ধিমূলক ডেসটিনির কার্যক্রম বন্ধ করে তাদের সর্বশান্ত করেছে ও নিজেরা সেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া ৫ জানুয়ারি ভোট দিতে না পারার মনোবেদনা,বিশ্বজিৎ হত্যা,তণু হত্যা,খাদিজা নির্যাতনসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্তৃক সারাদেশে চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে ভোটাররা বেজায় নাখোশ। তবে হালের তুফান কর্তক ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতন এবং সিদ্দিকুরের চোখ উপড়ানোর পূর্বেই এই জড়িপ কার্য সম্পন্ন হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনার বিরুপ প্রভাব ও নির্বাচন পরবে বলে বিশ্লষকরা মনে করেন। এছাড়া ৫ মে হেফাজতে ইসলামের আলেমদের হত্যা, ফেনীর চেয়ারম্যান আকরামকে পুড়িয়ে কয়লা বানানো বা নাটোরের চেয়ারম্যান বাবুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা,নির্যাতনে শিশু রাকিব ও শিশু রাজনকে হত্যা,এমপি লিটন কর্তৃক শিশু সৌরভকে গুলি করে হত্যা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ ছাত্র আবু বক্করকে ছাত্রলীগ কর্তৃক হত্যা,কাঁটা তারে ফেলানীর লাশ ও মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ আলোচিত ঘটনাগুলো আঞ্চলিকভাবে ভোটের রাজনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলবে।

মসজিদে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যানার লাগিয়ে শোক দিবস পালনের বাড়াবাড়ি,শিক্ষার মান বিবেচনায় না নিয়ে গণহারে পাশ করিয়ে দেয়া,উন্নয়নের নামে লুটতরাজ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অযোগ্য দলীয় শিক্ষক নিয়োগ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একচেটিয়া দখল করে ছাত্রলীগের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম,গার্মেন্টস শিল্পে ধস ও জিএসপি সুবিধা বাতিল সচেতন ভোটারদের মনে বিরুপ ফলাফল পড়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে জবরদখল, ব্যক্তি পর্যায় পর্যন্ত অত্যধি করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া,বিদেশী নাগরিক হত্যা হওয়ার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা,জঙ্গি দমনের নামে ক্রমাগত নাটক তৈরী,নাস্তিক্যবাদকে প্রশ্রয় দান,রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও গণতন্ত্রের সর্বনিম্ন স্পেস না থাকাকেও সচেতন ভোটাররা আমলে আনছেন। চাল ,আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্ধগতি,বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধিকে সাধারণ ভোটাররা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি বলে জরিপে দেখা যায়।

এছাড়া ৯৮ পরবর্তী এবারের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের সদিচ্ছার অভাবও বন্যাদূর্গত এলাকাগুলোতে সরকারকে নির্বাচনী মাঠে বেশ বেকায়দায় ফেলতে পারে। রানা প্লাজায় ১১০০ শ্রমিক নিহত হওয়া,তাজরীন গার্মেন্টস ট্র্যাজিডি,নিমতলীর হৃদয়বিদারক ঘটনাও ভোটের বাক্সে প্রভাব ফেলবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লষকরা মনে করছেন। মুন্সীগঞ্জ আঁড়িয়ালবিলে বিমান বন্দর, দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া কয়লা বিদুৎকেন্দ্র,সুন্দরবনঘাতী রামপাল কয়লা বিদুৎকেন্দ্র স্থাপন স্থানীয়ভাবে সরকারকে ভোটের রাজনীতিতে বেশ বেকায়দায় ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই ঢাকায় জলাবদ্ধতা উন্নয়নের নমুনাকে যমুনায় পরিনত করেছে। সোয়াইন ফ্লু ও বার্ড ফ্লু আতঙ্ক বিবেচনায় কম নিলেও ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার ভুক্তভোগীরা মশক নিধনে সরকারের অবহেলাকেই দায়ী করে থাকেন।

ঢাকার সচেতন ভোটারগণ বিষয়গুলোকে ভোট বাক্সে ক্ষমা করবেন বলে মনে করেন না বোদ্ধারা। সরকার কর্তৃক বিচার বিভাগ দখলের প্রকাশ্য নির্লজ্জতা,অবৈধ পথে মানব পাচার,ইয়াবা বদি,গম কামরুল,লতিফ সিদ্দিকীর হজ্জ নিয়ে কটূক্তি,প্রশ্নপত্র ফাঁস,সাগর-রুনী হত্যাকান্ড,প্রেসক্লাব দখল,মিডিয়ার টুটি চেপে ধরা তথা চ্যানেল ওয়ান,ইসলামী টিভি,দিগন্ত টিভি ও আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া,আইসিটি এক্টের ৫৭ ধারার মত কালো আইন ভোটারদের মনে দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে বলে জরিপে দেখা যায়। গ্রামীণ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক সরকার কর্তৃক দখল করে নেয়াকে ভোটাররা ভাল চোখে দেখেনি। তার উপর প্রফেসর ইউনূস,বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, একে খন্দকার সহ স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের সম্মানিত ব্যক্তিদের নানাভাবে অসম্মানিত করণ সহ সর্বোপরি দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বড় রাষ্ট্রের অযাজিত হস্তক্ষেপে সরকারের নির্লিপ্ততা বা তাদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় থেকে দেশ বিরোধী গোপন ও প্রকাশ্য চুক্তিগুলো দেশের মানুষের মনে গভীর দাগ কেটে আছে বলে জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়। তবে ফলাফল যাইহোক সব দলের অংশগ্রহনে একটা নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin