tarek_rahman

তারেক রহমান কে নিয়ে সমকালীন সময়ের সব চাইতে সুন্দর একটি লিখা

খোমেনী ইহসান

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন আজ। এ হিসেবে ৫৩ বছরে পা রাখলেন তিনি। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যায়। তার সঙ্গে আমার একবার মাত্র সাক্ষাত হয়েছে তাও এক যুগ হয়ে গেল। ২০০৫ সালের একদিন হাওয়া ভবনে গেলে তারেক রহমানের সঙ্গে শুধু সাক্ষাৎই নয়, রীতিমতো তর্কই হয়েছিল! সেই স্মৃতি আজও উজ্জ্বল।

এত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান একজন মানুষের মধ্যে কী অসাধারণ গুণ দেখেছি-সেদিনকার ঘটনা তুলে না ধরলে তা স্পষ্ট বুঝা যাবে না। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ভাই তখন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বদৌলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা হাওয়া ভবনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে আমিও তাদের সঙ্গী হই।

আগে থেকে আমি জানতাম না এই অনুষ্ঠানের কথা। ওই দিন দুপুরে ক্যাম্পাসে বরাবরের মতো কালো জিন্স আর একটা পলো শার্ট পরা ছিলাম। সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নুরুল করিম ভূঁইয়া ভাই আমাকে ফোন করে টিএসসি যেতে বলেন। সেখানে তিনি আমার বেশভূষা দেখে হতাশ হলেন। তারপরেও সঙ্গে নিলেন।

হাওয়া ভবনে গিয়ে আমরা প্রথমে নীচতলায় ড্রয়িং রুমে বসি। তারপর দোতলা থেকে হাফশার্ট পরা তারেক রহমান নেমে এলেন। আমাদের নিয়ে তিনি একটা বোর্ড রুমে বসলেন। একে একে সবার সঙ্গে তিনি পরিচিত হচ্ছিলেন। আমার পালা এলে নাম বললাম ‘খোমেনী ইহসান’। শুনে তারেক রহমান চমকে উঠলেন। নাম নিয়ে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করলেন এবং কুশল বিনিময় করলেন। এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শেখ আদনান ফাহাদ ভাই, ইউএনবির প্রতিনিধি হিসেবে তিনিও সেখানে ছিলেন, তার নাম শুনেও এ নিয়ে জানতে আগ্রহী হন তারেক রহমান।

আমার আসল মুগ্ধতার পালা আসলো পরিচয় পর্ব শেষে আলোচনাকালে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত, বিনিয়োগ, পর্যটন, জনসংখ্যা নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরলেন তারেক রহমান। তখন আমি জনসংখ্যা নিয়ে তার উদ্বেগের সঙ্গে দ্বিমত জানালাম। বললাম-শহীদ জিয়া জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ এতটা উন্নতি করছে, বিদেশ থেকে এত রেমিট্যান্স আসছে-যা বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলশক্তি; আমি তার উদ্বেগের বিরোধিতা করলাম। আজ এত বছর পরেও যখন ভাবি, চমকে ওঠি, আমার আর তারেক রহমানের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে, তার মধ্যে কোনো বিরক্তি দেখা দূরে থাক, তিনি রীতিমত মনযোগ দিয়ে আমার আর্গুমেন্ট শুনেছেন এবং আমার যুক্তি খণ্ডন করতে সময় ব্যয় করছেন!

সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে আসার পরে সাংবাদিক বড় ভাইয়েরা আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, কিন্তু আমি তাদের আচরণকে তেমন কিছু মনে করিনি, কারণ স্বয়ং তারেক রহমানই তো আমার সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন এবং আমাকে তর্ক করতে সুযোগ দিয়েছেন, তার মধ্যে কোনো বিরক্তি দেখিনি। আর আমি যতই সমাজের কাছে অনুল্লেখযোগ্য হই না কেন তারেক রহমান ভিন্নমতাবলম্বী হিসেবে আমাকে যথেষ্ট সম্মান করেছেন।

তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের এই স্মৃতিকে আমিও মর্যাদা দিয়েছি। জরুরি অবস্থার সময় তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলাম আমি। হ্যা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যে আন্দোলন হয়েছিল তার আহ্বায়ক ছিলাম আমি। ওই ব্যানার থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিরও দাবি জানিয়েছিলাম। ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ- এ দুই ছাত্রসংগঠনের সব কর্মসূচি মিলালেও নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মসূচির অর্ধেকও হবে না।

২.

যেহেতু অন্য কারও সঙ্গে নয়, খোদ তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি তর্ক করতে পেরেছি, সেহেতু তাকে নিয়ে সমালোচনামূলক কিছু লিখতে বিএনপি সংশ্লিষ্ট কারো নিন্দার পরোয়া করার দরকার নাই। আর আমি এমনটাই বিশ্বাস করতে চাই যে-তারেক রহমান বদলাননি, আগের মতোই আছেন, কখনো তার সঙ্গে ফের দেখা হলে তিনি আমার মতো ভিন্নমতাবলম্বীর কথা মনযোগ দিয়েই শুনবেন।

কাজেই জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগে তারেক রহমানকে নিয়ে আমি কিছু কথা বলছি-

ক. আমার কাছে মনে হয়েছে বিএনপির এই শীর্ষ নেতাকে নিয়ে রাজনীতিতে ভুল সমালোচনা রয়েছে। যদিও বলা হয় তারেক রহমান সহচরদের কারণে বিতর্কিত হয়েছেন, কিন্তু আমার ছোট্ট অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে রাজনীতি, দেশ, সমাজ ও ফিউচার সম্পর্কে তার যে প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে তার সুযোগ নিয়ে একদল বুদ্ধিজীবী-উচ্চশিক্ষিত তাকে বিপাকে ফেলেছেন।

এরা তারেক রহমানকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিচার করে কিভাবে দেশ ও দলকে নেতৃত্ব দিতে হবে তার কোনো উপায় না বলে উল্টো ভুল পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন এজেন্সি, ধান্দার সঙ্গে যুক্ত এসব লোকজন তারেক রহমানকে বিভ্রান্ত করে বাংলাদেশ ও বিএনপির জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে নিয়েছন। তার সঙ্গে সম্পর্কের জোরে বাংলাদেশে সন্ধিক্ষণে আঁতলামি আর ফায়দা লোটার কাজেও ব্যস্ত ছিলেন অনেকে।

যেমন চারদলীয় জোট সরকারের সময় তারেক রহমানের সুপারিশে ও সহায়তায় কিছু দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল খোলা হইছিল। এই সবকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা আদর্শিকভাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদেরই বিরোধী ছিলেন না-আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির যে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তার পুরোপুরি বিপরীত সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল তারা।

আর যেই বিএনপি স্বাধীনতা পরবর্তী বিচারবহির্ভূত হত্যা-নির্যাতন-অত্যাচারের শোকের অশ্রুর উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সকল কট্টরপন্থা-উগ্রপন্থার বিকল্প হিসেবে একটি আধুনিক উদারপন্থী রাজনীতি নিয়ে হাজির হয়েছিল, সেই বিএনপিকে দিয়ে রক্ষী বাহিনীর আদলে র‍্যাব গঠন করিয়ে ক্রসফায়ারের রাজনীতি করানো হয়েছে, সেই বিএনপিকে জঙ্গীবাদ দমনের বিষয়ে তরিৎ সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

বিএনপি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করে, এর ফলে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাটা এই দলের অস্তিত্বের প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তাই শহীদ জিয়া সব সময় এক চীন নীতি মেনে রাজনীতি করেছেন এবং যার ফলে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি সব সময় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পেরেছেন।

কিন্তু বিএনপি সরকারের সময়েই কি না অপরিণামদর্শী লোকজন কুবুদ্ধি দিয়ে তাইওয়ানের বিজনেস কনস্যুলেট খোলার কাজ করিয়ে বসছিল। যদিও ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করার সঙ্গে সঙ্গেই এ মহাভুলের পরিমার্জন হয়েছিল, কিন্তু ততক্ষণে বিএনপির যে ক্ষতি হয়েছে তার ধকল আজও পূরণ হয়নি।

এই সবকিছুর নেপথ্যে বন্ধুবেশী-শুভাকাঙ্খীবেশী বুদ্ধিজীবী, মন্ত্রণাদাতারা ছিলেন। তারেক রহমান এদের অতীত, মতাদর্শিক ঝোঁক, আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা এবং তাদের এজেন্ডাগুলোর প্রভাবে দেশের ক্ষতির বিষয়গুলো অনুধাবন করেননি বলে মনে করি।

খ. আমি মনে করি তারেক রহমানকে বিতর্কিত করতে হাওয়া ভবন নিয়ে যে প্রচারণা রয়েছে তার পেছনে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ভূমিকার পাশাপাশি বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরও ভূমিকা রয়েছে।

তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে সঠিক কাজই করছিলেন, কিন্তু তা বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক ছিল না। ফলে তার সংস্কারমূলক কাজের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাওয়া বিএনপির নেতৃত্বের নামে ঘাঁপটি মেরে থাকা কায়েমী স্বার্থবাদী চক্র আত্মসংশোধনের পরিবর্তে পেছন থেকে ছুরি মারতে সক্ষম হয়েছে।

যেমন বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের ইন্ধনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সন্ত্রাস নির্ভরতা ছিল, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি চলতো। কিন্তু হাওয়া ভবন থেকে তারেক রহমান তিন বছরের চেষ্টায় ছাত্রদলকে নিয়মতান্ত্রিক করতে সক্ষম হন। মূলতঃ ছাত্রদলকে বাগে আনার মধ্য দিয়ে বিএনপির কোটারি নেতারা মজুত বাহিনী হারিয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন।

তারেক রহমান যদি ছাত্রদলকে সম্মেলন ও কাউন্সিলরদের ভোট মাধ্যমে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতেন এবং বাদ পড়া নেতাদের যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব নিয়ে যেতেন তাহলে তার এই উদ্যোগের কার্যকারিতা বাড়ত। আর ছাত্রদলকে নিয়মতান্ত্রিক করার পাশাপাশি ডাকসুসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিলে আমাদের জেনারেশনের রাজনৈতিক সম্পর্কটাই বদলে যেত, যা জাতীয় রাজনীতিকে গতিশীল ও স্মার্ট করতো।

তারেক রহমান তরুণ নেতৃত্বকে প্রমোট করার মধ্য দিয়ে বিএনপির কায়েমী স্বার্থবাদী নেতাদের প্রভাব খর্ব করতে গিয়ে শুধু শুধু রোষাণলে পড়েছেন। এসব নেতারা বিএনপির ব্যানার ও ধানের শীষের জোরে নেতা হয়েছেন, কিন্তু সারা জীবনেও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির নীতি-আদর্শ-সংস্কৃতির বিকাশে কোনো অবদান রাাখেননি। যদিও তারা উপরে উপরে করেন বিএনপি, কিন্তু তাদের ওঠাবসা-সংস্কৃতি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বিরোধী। তাদের যেহেতু আদর্শিক ভিত্তি নাই, দলীয় রাজনীতিতেও তাদের কন্ট্রিবিউশন খুব কম, সেহেতু দলে তরুণদের প্রভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তারেক রহমানকে বিতর্কিত করেছেন, যার প্রমাণ হলো তার বিরুদ্ধে মিথ্যা-অপপ্রচারের বিষয়ে তারা কখনোই জোরালো প্রতিবাদ করেননি।

আমার মনে হয়, তারেক রহমান এখন লন্ডনে বসে বেশ কয়েকটি বক্তৃতায় বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ, নীতি ও কৌশলের বিষয়গুলোকে কর্মীদের কাছে যেভাবে তুলে ধরছেন সেভাবে ক্ষমতায় থাকতে যদি মতাদর্শিক রাজনীতি জোরালো করতেন, এর জন্য সহায়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া সেল, তরুণদের নিয়ে প্রচার দল গঠন করতেন, মতাদর্শের পক্ষে রেটোরিক তৈরি করে সভাসেমিনার করতেন তাহলে বিএনপিতে যে প্রভাব পড়তো, তাকে সামনে রেখে কায়েম স্বার্থবাদীরা নিজ থেকেই জায়গা ছেড়ে দিয়ে তরুণদের প্রমোট করার সুযোগ দিতেন।

৩.

আমি শুনেছি লন্ডনে নির্বাসিত জীবনে তারেক প্রতিদিনই বাংলাদেশের সব খবরের ক্লিপিংস পড়েন, দলের খোঁজখবর নেন এবং দেশ ও দল নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনাকে কাজে পরিণত করতে পছন্দের একটা দলের মাঝে কাজ বণ্টন করে দেন। এরকম কাজে জড়িত দু-একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথার সূত্রে এ কথা বলছি।

এর মধ্য দিয়েও তারেক রহমানের নেতৃত্বের সক্রিয়তা-গতিশীলতা ফুটে ওঠে। আবার যাদের তিনি কাজ দেন বলে জানি, তাতে তারেক রহমানের ব্যাপারে হতাশও হই। সামনে তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দেব্নে, আল্লাহর রহমতে দেশকেও নেতৃত্ব দেবেন নিশ্চয়, কিন্তু তার মতো নেতার বার্তাকে দেশ-বিদেশে পৌঁছে দেয়ার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও স্ট্রাটেজি তো এদের নাই। ফলে তারেক রহমান সেই পুরনো বৃত্তের মধ্যেই আটকা পড়ে থাকছেন।

অথচ দিন দিন পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্পর্কগুলো ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। এর ফলে তারেক রহমান জনগণের ভালোবাসা ও ভোট পেয়ে ঠিকই ২০০১ সালের মতো ভূমিধস বিজয় পাবেন, কিন্তু দেশকে শহীদ জিয়ার মতো নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এইক্ষেত্রে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিতলোক বা দলের কোটারি নেতার কথা না শুনে, তিনি ভিশনারি সফল দেশগুলোর গতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিভাবে টিম গঠন করেছে তা পরখ করে দেখতে পারেন। তিনি যুক্তরাজ্যে জেরেমি করবিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি বা তুরস্কে রজব তৈয়ব এরদোগানের নেতৃত্বাধীন একে পার্টি থেকে পরামর্শ ও পরামর্শক সহায়তা নিতে পারেন।

৪.

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দুটি দলের মধ্যে তারেক রহমান অন্যতম শীর্ষ নেতা, যিনি লম্বা সময় কারাভোগ করেছেন এবং একমাত্র তিনিই সরাসরি রিমান্ডে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন। কাজেই একজন মজলুম নেতা হিসেবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভূমিকা অন্যদের চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি।

বিশেষ করে তিনি সরাসরি ঔপনিবেশিক পুলিশিং, বিচার ব্যবস্থা ও কারাগারের জুলুমের শিকার হয়েছেন। এই তিন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করা হয়। ফলে তারেক রহমনের রাজনৈতিক এজেন্ডায় মানবাধিকারের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে বলেই মানুষ আশা করে।

আমার মত হলো, বুদ্ধিজীবীদের বিলাসী কথাবার্তা না শুনে তারেক রহমানের উচিত নিজের ইমেজকে নিজের মতো গড়ে তোলা। সেইক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন তুমুল প্রভাব অর্জন করবেন, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও তার উজ্জ্বল ভাবমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। হ্যা, তারেক রহমান মানবাধিকারের রাজনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন। তিনি হবে মানবাধিকারের পক্ষে অঙ্গীকারাবদ্ধ গণতন্ত্রপন্থী নেতা।

সেই ক্ষেত্রে বিরাজমান মানবাধিকার ইস্যু এড্রেস করার পাশাপাশি ভবিষ্যত ক্ষমতায় গেলে কিভাবে জনগণের মানবাধিকার নিশ্চিত করবেন তার পথনকশা তৈরি করে তা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবেই সক্রিয় হতে পারেন তিনি। যদি সত্যিই তারেক রহমান এদেশে অত্যাচারিত নির্যাতিত মানুষের মুক্তির কারণ হন, তাহলে তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন।

তবে এই ক্ষেত্রে তাকে মনে রাখতে হবে, শুধু দলের নেতাকর্মীদের মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে কথা বললে হবে না। তাকে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে গরিব-খেটে খাওয়া মানুষের মানবাধিকার নিয়ে। কৃষক-শ্রমিক, সংখ্যালঘু, নারী, শিশু ও প্রবীণদের ওপর এদেশে যে নির্যাতন ও বৈষম্য হয় তা তারেক রহমানকে তুলে ধরতে হবে।

বাংলাদেশে দিন দিন চিকিৎসা ও গণপরিবহনসহ নাগরিক পরিষেবা থেকে ছিটকে পড়ছে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সব নাগরিকই দ্রব্যমূলের ভয়াবহ উর্ধ্বগতির জাতাকলে পিষ্ট। অন্য দিকে হুহু করে আয় বৈষম্য বাড়ছে। তরুণরা হতাশ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় তারেক রহমানের কাছে জনগণতান্ত্রিক দরদী রাজনীতিই সবার প্রত্যাশা। বিএনপিকে বড়লোকের রাজনীতি, বড়লোকের নেতৃত্ব থেকে মুক্ত করার কাজটি তাকেই করতে হবে।

শুভ জন্মদিন তারেক ভাই, ভালোবাস।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin