mirja-abbas-khaleda-5794564

তারেকও সমীহ করেন মির্জা আব্বাসকে

শুরু থেকেই যারা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং শুরু থেকেই যারা বিএনপির রাজনীতিতে পাদপ্রদীপে ছিলেন তাদের মধ্যে মির্জা আব্বাস অন্যতম। মির্জা আব্বাসের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় যুবদলের মাধ্যমে। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার পর ’৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি গঠন করেন।

এই বিএনপি গঠিত হওয়ার পর যে যুবদল গঠিত হয় সেই যুবদলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন মির্জা আব্বাস। ঢাকার মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারণে ঢাকায় তার একটা প্রভাব বলয় ছিল এবং সে কারণেই মির্জা আব্বাস সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।

মির্জা আব্বাসের রাজনৈতিক জীবন যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে, সবসময় তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিলেন। বিএনপি নানা চড়াই উতরাইয়ের সময় কখনো দলের মূল অবস্থান থেকে বিচ্যুত হন নাই। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপিকে দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে হয়েছিল। সেই সময় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মির্জা আব্বাস ভূমিকা রেখেছিলেন।

ঢাকায় বিএনপিকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে যে দুজন নেতার নাম আলোচনায় আসে তাদের একজন প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা, অন্যজন মির্জা আব্বাস। ঢাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সাদেক হোসেন খোকা আর মির্জা আব্বাসের দ্বৈরথ বিএনপির মধ্যে আলোচনার বিষয় ছিল। তবে ১৯৯১ সালে নাটকীয়ভাবে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়া মির্জা আব্বাসকে ঢাকার মেয়রের দায়িত্ব দেন।

জনগণের ভোটে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে হাইকোর্টের এই আদেশের পর বিএনপি নতুন আইন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে প্রথম প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনেও মির্জা আব্বাস ছিলেন বিএনপির প্রার্থী।

ওই নির্বাচনে তিনি হানিফকে ঢাকা থেকে বিতাড়িত করবেন এই রকম কথা বলে বিতর্কিত হন এবং জনগণ তাকে বিপুল ভোটে প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে বিএনপির রাজনীতিতে তার প্রভাব কমেনি।

বরং পরবর্তীতে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সময়ে বিএনপির রাজনীতির সূত্র ধরেই তিনি ফুলে ফেঁপে উঠেন। প্রচুর বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন। প্রকাশ্য অপ্রকাশ্যভাবে তার অনেক সম্পদের কথা জানা গেছে। একদিকে যেমন তার ঢাকা ব্যাংকে তার বড় অংশের মালিকানা রয়েছে। পরিবহণ ব্যবসাও রয়েছে।

দেশে বিদেশে তার সম্পদও কম নয়। আর বিএনপির রাজনীতিতে যারা নিজের পকেটের টাকা খরচ করেন তাদের মধ্যে মির্জা আব্বাস একজন এই রকম কথা বিএনপির নেতা কর্মীরা সবসময়ই বলেন। আর ২০০১ এর পরে বিএনপি যখন আবার ওয়ান ইলেভেনের সংকটে পড়ে তখনও মির্জা আব্বাস তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি।

বরং খালেদা জিয়ার প্রতি আনুগত্য রেখেছেন। ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মির্জা আব্বাসের রাজনৈতিক জীবন রহস্যময়। বিএনপির অনেকেই মনে করেন যে, দুর্নীতির একাধিক মামলা থেকে বাঁচার জন্য তিনি সরকারের সাথে এক ধরণের গোপন সমঝোতার মাধ্যমেই রাজনীতি করছেন।

আবার বিএনপির রাজনীতিতেও তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কারণ বিএনপিতে এখন অনেক নেতাই টাকা পয়সা খরচ করতে চান না। তখন মির্জা আব্বাস সেদিক থেকে কর্মীদের একটা আশা ভরসার জায়গা।

সরকারের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে বিএনপিকে সংগঠিত করা বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদলগুলো দেখভাল করার ক্ষেত্রে মির্জা আব্বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মির্জা আব্বাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তিনি যা বলার স্পষ্টভাবে বলেন। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কিংবা নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তায় তিনি তার মনোভাব সরাসরি ও স্পষ্টভাবে বলেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে যাওয়া যে ভুল ছিল তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত করেছেন। খালেদা জিয়ার পরিবারের পরে মির্জা আব্বাস এবং আবদুল আউয়াল মিন্টু এই দুই পরিবারের সকলেই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

তবে আবদুল আউয়াল মিন্টুর ব্যবসায়িক পরিচয়ও আছে, কিন্তু মির্জা আব্বাস ব্যবসায়ী হলেও তার রাজনৈতিক পরিচয়টি মুখ্য হয়ে উঠে। তার স্ত্রীও বিএনপির একটি অঙ্গসংগঠনের নেতা। আর এই কারণেই বিএনপিতে তার প্রভাব বলয় বেশি আছে এবং তাকে সবাই একটু সমঝে চলেন। কারণ দীর্ঘদিন বিএনপি করেছেন, বিএনপির নেতা কর্মীদের মধ্যে তার একটি পরিচিতি আছে এবং তার নিজস্ব একটা প্রভাব বলয় আছে।

এই কারণে খালেদা জিয়া যেমন তাকে গুরুত্ব দিতেন, তেমনি সমীহ করেন তারেক জিয়াও। তারেক জিয়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে যারা মুখের ওপর সমালোচনা করেন তাদের একজন মির্জা আব্বাস। আর এই কারণেই মির্জা আব্বাস এখনো বিএনপির তৃণমূলের একজন আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin